সালাহউদ্দিন আহমদ

নারী নির্যাতনের কার্যকর প্রতিবাদ এখনো গড়ে ওঠেনি

শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে ‘নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান : প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক মৌন মিছিল-পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

অনলাইন প্রতিবেদক
বক্তব্য রাখছেন সালাহউদ্দিন আহমদ
বক্তব্য রাখছেন সালাহউদ্দিন আহমদ |নয়া দিগন্ত

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘দেশে অতীতে যে নারী নির্যাতন হয়েছে বা বর্তমানে যা ঘটছে তার কোনো কার্যকর প্রতিবাদ এখনো গড়ে ওঠেনি।’

অনেক ক্ষেত্রে আইনের অপব্যবহারও হয়ে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দল এ ব্যাপারে নজর দেবে।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে ‘নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান : প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক মৌন মিছিল-পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশ শেষে মুখে কালো কাপড় বেঁধে শাহবাগ থেকে মৌন মিছিল করেন নারীরা, যা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে যে নারী নির্যাতন বর্তমানে হচ্ছে বা অতীতে হয়েছে তার কোনো কার্যকর প্রতিবাদ এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। কিছু কিছু আইনপ্রণয়ন হয়, কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে আইন কঠিন হলেও সঠিকভাবে কার্যকর হয় না। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে নারী নির্যাতনকারীরা, ধর্ষকরা বেরিয়ে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শক্ত আইনের অপব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করে থাকেন, সেদিকেও আমরা নজর দেব।’

তিনি অভিযোগ কেরন, ‘একটি দল চায় যেন এদেশের নারীরা অন্ধরমহলে বন্দী থাকে। দেশের অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাকে, যেন এদেশে নারীর অগ্রগতি না হয়।’

‘সেজন্য তারা বলছে, নারীর কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। অথচ দেখা যায় সেই কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে,’ বলেন তিনি।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘তারা (নারীরা) তাদের কর্মস্থলে সম্মানের সাথে চাকরি করবে এবং সঠিক কর্মসংস্থানের জন্য কর্মঘণ্টা অনুযায়ী কাজ করবে এবং যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণ করবে। নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর সাথে কর্মসংস্থানের বিপরীত সম্পর্ক। আমরা চাই, নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হোক। যদি কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেয়া হয়, তাহলে যারা অফিস-আদালত, কলকারখানা পরিচালনা করেন তারা নারীদের চাকরি দিতে চাইবেন না। ফলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মোট জনসমষ্টির অর্ধেক পুরুষ-অর্ধেক নারী। দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে গেলে তাদের সবার প্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সামাজিক রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের পারিবারিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।’

‘শিক্ষা-দীক্ষায়, কর্মস্থল, বাসস্থানসহ সমাজের সর্বত্র যাতে নারীরা নিরাপদ থাকে সেজন্য আমরা আগামীতে ৩১ দফার ভিত্তিতে নারীদের জন্য সমস্ত পরিকল্পনা করছি’— উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সেই হিসেবে বাংলাদেশ হবে অগ্রগতির চরম শিখরে উঠা একটি দেশ। সেখানে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ থাকবে।’

‘রাজশাহীর কাটাখালীতে ধানের শীষের প্রচার চালাতে গিয়ে দুই নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন’ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রাজশাহীতে আমাদের বোনদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। জুতাপেটা করা হয়েছে। বিপক্ষে কথা বলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশে এমন একটি সমাজ বিরাজ করুক, যেখানে আমরা সবাই সমান। ধর্মের ভিত্তিতে এখানে কোনো বিভাজন থাকবে না। এখানে জাতের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন থাকবে না। এখানে ধর্ম-বর্ণ, সংস্কৃতি, ভাষাভাষী সকলে মিলে আমরা বাংলাদেশী। সুতরাং আমরা সবাই বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক হিসেবে সবাই সমান অধিকার ভোগ করব। এজন্যই আমরা সংগ্রাম করেছি। এজন্য আমরা রক্ত দিয়েছি।’

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন শিরীন সুলতানা, নিলুফার চৌধুরী মনি, সানজিদা ইসলাম তুলি, রেহানা আক্তার শিরীন প্রমুখ।