প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

শনিবার দুপুরে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ, রাতেই ব্যাপক উপস্থিতি

দলটি দাবি করেছে, ১০ লাখের বেশি মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করবে তারা।

অনলাইন প্রতিবেদক
প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি
প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি |নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুর ২টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশের আয়োজন করেছে।

এ সমাবেশকে কেন্দ্র শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাতেই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। দলটি দাবি করেছে, ১০ লাখের বেশি মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করবে তারা।

সরেজমিনে রাতে দেখা গেছে, বাদ আসর থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসেছেন, তারা নামাজ আদায় করে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। মাগরিবের আগ মুহূর্ত থেকে মানুষের আনাগোনা আরো বাড়তে শুরু করে এবং রাতে নেতাকর্মী বেশি আসতে থাকলে ‘লিল্লাহি তাকবির আল্লাহু আকবার’ ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে ব্যাপক প্রচারণা

সমাবেশকে উপলক্ষ করে রাজধানী ও ঢাকার বাইরে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে জামায়াত। ব্যানার, ফেস্টুন, নিয়মিত মিছিল, সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করছে দলটি। ঢাকার শাহবাগ, মিরপুর বাড্ডা, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় ১৯ জুলাই সমাবেশে জনগণকে অংশ নেয়ার আহ্বান সম্বলিত ব্যানার।

সমাবেশে সাত দফা জাতীয় দাবি পেশ

জামায়াত জানায়, এ সমাবেশে তারা সাতটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দাবি তুলে ধরবে। দাবিগুলো হলো ২০২৪ সালের ৫ আগস্টসহ পূর্ববর্তী গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে মৌলিক সংস্কার আনা, ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন, পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান সুযোগ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।

জাতীয় নেতাদের আমন্ত্রণ

অংশগ্রহণে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বহু রাজনৈতিক দলকে। জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, এই সমাবেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে বিএনপি পক্ষ থেকে কোনো নেতা সমাবেশে যাবে কিনা তা এখন পর্যন্ত দলটির পক্ষ থেকে জানা যায়নি।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, জামায়াতের সমাবেশ বিএনপির কোনো প্রতিনিধিদল যাবে কিনা, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসান মাহবুব জোবায়ের জানান, আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জনসমাগম আশা করছি। ইতোমধ্যে ১০ হাজারের বেশি বাস, একাধিক স্পেশাল ট্রেন এবং নৌযান রিজার্ভ করা হয়েছে।

দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে প্রায় ১৫০০ বাস, চট্টগ্রাম-ঢাকা ও রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিশেষ ট্রেন, এবং নৌপথে লঞ্চ রিজার্ভেশন দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থেকেও সমাবেশে অংশ নেবেন।

মাঠ প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক সমন্বয়

দলটি থেকে জানানো হয়, মাঠে মোতায়েন থাকবে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক, থাকবে বিশেষ পোশাক, ডিউটি কার্ড ও দায়িত্বভাগ।

ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলা থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিং স্পট নির্ধারিত হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ও বাইরে থাকবে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ-প্রতিটিতে এমবিবিএস ডাক্তার, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা।

প্রযুক্তি ও নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে জামায়াত

সমাবেশের সম্পূর্ণ কার্যক্রম ড্রোন ও আধুনিক ক্যামেরা দিয়ে ধারণ করা হবে, ফেসবুক, ইউটিউব ও অন্যান্য সামাজিকমাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার করা হবে, মাঠে থাকবে বড় আকারের এলইডি স্ক্রিন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাথে বৈঠকে ট্র্যাফিক, নিরাপত্তা ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে সমন্বয় করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিতভাবে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া গেছে।

সাংস্কৃতিক প্রচারণা ও সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা

পাড়া-মহল্লা, শপিং মল, ও বিভিন্ন স্থানে লিফলেট, পোস্টার ও ব্যানার, চলছে ভ্রাম্যমাণ মাইকিং, সাংস্কৃতিক দল ও নাটিকা গানের সুর ও মঞ্চনাটকের মাধ্যমে সমাবেশের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের উদ্দেশ্য বড় ধরনের সমাবেশ করে রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করা। সমাবেশে জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। সমাবেশের মূল মঞ্চে জামায়াতের জাতীয় নেতারা, জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য দলের নেতারা থাকবেন।