নির্বাচিত জাতীয় সংসদই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট ফোরাম বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণঅধিকার পরিষদের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরের সভাপতিত্বে ও ফারুক খানের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই সনদ হচ্ছে, জাতীয় জীবনে রাজনৈতিক সমঝোতার একটি ঐতিহাসিক পূর্ণাঙ্গ দলিল। যা বাস্তবায়নের জন্য আমরা সবাই অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং সেটি বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট ফোরাম হচ্ছে একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদ। এখানে কোনো দলের সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি সকলের অবগতির জন্য বলতে চাই, সকল রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, আমরা যেন কোনোভাবেই আইনানুগ প্রক্রিয়ার বাইরে না যাই, সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার বাইরে না যাই। আমরা যেন এই জাতিকে একটি সুষ্ঠ নিয়মতান্ত্রিক ধারার মধ্যে দিয়ে পরিচালনা করি।’
‘কারণ অনেকেই আবেগের বশবর্তী বলে থাকেন যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে সে অভিপ্রায়ের অবনতি ঘটবে বলে অনেক কিছু বৈপ্লবিক আদেশ জারি করা যায়… এই বক্তব্য হচ্ছে আবেগের বক্তব্য। কারণ জনগণের অভিপ্রায়কে বাস্তবায়ন করার জন্যেই আমরা সবাই সংবিধানের আশ্রয় নিয়েছি এবং সাংবিধানিকভাবেই এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এখনো পর্যন্ত আইনানুগভাবে সাংবিধানিকভাবে আমরা এই রাষ্ট্রটা পরিচালনা করছি,’ বলেন বিএনপির এ নেতা।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ যেটা প্রণীত হয়েছে, যেভাবে সবাই স্বাক্ষর করেছেন এবং সেখানে নোট অব ডিসেন্ট সহকারে সংক্ষিপ্ত হুবহু এই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম জনগণের সকল সম্মতির ভিত্তিতে যখন একটা পার্লামেন্টে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হবে তখন সেই জায়গা থেকে কোনো সংসদ সদস্য এবং সে জাতীয় সংসদ সরতে পারবে না এবং সেইটাই হচ্ছে প্রকৃত জনগণের অভিপ্রায় এবং কনস্টিটিউশন পাওয়ার।’
এনসিপি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমার ভাই যারা নতুন রাজনৈতিক দল করেছেন—এনসিপি… তাদের অনেক রকমের বক্তব্য আছে যেগুলো আমরা নিজেরাও ধারণ করি… কিন্তু সেগুলোকে একটা বাস্তব রূপ দিতে হবে এবং বাস্তবের নিরিখে কথা বলতে পারি, আমরা যেন এমন কোনো প্রস্তাব না দেই যাতে করে ভবিষ্যতে সেই প্রস্তাবগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কেউ জুডিশিয়ালের কাছে নিয়ে যেতে চায় এবং সেগুলোর মধ্যে দিয়ে যা আমাদের এই টোটাল প্রক্রিয়াটাকে কেউ একসময় অবৈধ বলে যেন আওয়াজ না দিতে পারে।’
‘এগুলো আমি আজকের জন্য বলছি না, আগামী পাঁচ বছরের জন্য বলছি না, আগামী ১০ বছর পরে বা ১৫ বছরে যাতে এই প্রশ্নটা নিয়ে কেউ আদালত না যেতে পারে সেরকম একটা ভিত্তি আমাদের এখনই রচনা করতে হবে। অতি সাবধানে আমাদের অর্জিত যে সাফল্য সেই সাফল্যকে আরো সাফল্যের জন্য সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা চাই, আমরা সবাই যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, যেই কারণে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, সেইরকম ঐক্য যেন আমরা বজায় রাখি।’
তিনি বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যই হবে আমাদের সামনে এগিয়ে চলার একমাত্র শক্তি। আর যদি সেই ঐক্য কোনো কারণে আমাদের মধ্যে নষ্ট হয় তাহলে সেটা ফ্যাসিবাদকে ভিন্নভাবে টেনে নিয়ে আসবে। আমি আহ্বান জানাব, আমরা যেন সেদিকে না যাই আমরা সবাই জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধতা থাকবো একটি প্রশ্নে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র …এই প্রশ্নে আমরা এক থাকব। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, ফ্যাসিবাদকে যেন আমরা কোনোভাবে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করতে দেব না… সেই জায়গায় যেন আমরা এক থাকি।’



