জুলাই ঘোষণাপত্র অপূর্ণাঙ্গ, সংশোধনের দাবি খেলাফত মজলিসের

‘মূলত এই ভূখণ্ডে মুসলিম জাতীয়তার ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ইতিহাসকে এড়িয়ে চলা ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অপকৌশলের অংশ। যা জুলাই স্পিরিটের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
জুলাই ঘোষণাপত্র অপূর্ণাঙ্গ, সংশোধনের দাবি খেলাফত মজলিসের
জুলাই ঘোষণাপত্র অপূর্ণাঙ্গ, সংশোধনের দাবি খেলাফত মজলিসের

ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রকে অপূর্ণাঙ্গ বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। বুধবার (৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে দলটির আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের এ দাবি জানান।

ওই বিবৃতিতে তারা বলেন, ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক ঘোষিত জুলাই সনদের ১ম দফায় প্রায় হাজার বছর ধরে বঙ্গ অঞ্চলের মানুষের ইসলামী মূল্যবোধ চর্চা ও রাজনৈতিক সফরকে কৌশলে অস্বীকার করা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে প্রাপ্ত মানচিত্রের ভিত্তিতে ১৯৭১ সালে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। জুলাই ঘোঘণাপত্রে ২৩ বছরের নিপীড়ক পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করলেও ১৯০ বছরের নিপীড়ক ব্রিটেনের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

তারা বলেন, মূলত এই ভূখণ্ডে মুসলিম জাতীয়তার ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ইতিহাসকে এড়িয়ে চলা ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অপকৌশলের অংশ। যা জুলাই স্পিরিটের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

নেতৃদ্বয় বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের ১৩তম দফায় এক-এগারো সরকার ও ২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। ১৭তম দফায় অভ্যুত্থানের শহীদের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার উল্লেখ করা হয়েছে, যা জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে উল্লেখিত সংখ্যা থেকে অনেক কম। এ ছাড়া ১ বছর অতিক্রান্ত হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শহীদদের সুনির্দিষ্ট তালিকা তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো ৬ জন শহীদের লাশ শনাক্ত না হওয়াতে মর্গে পড়ে আছে।

তারা বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ শাসনামলে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার অপচেষ্ট চালানো হয়েছিল। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্ত্বরে অসংখ্য নিরীহ আলেম-উলামা ও ছাত্র-জনতাকে রাতের আঁধারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক দমন-নিপীড়ন চালানো হয়েছিল। ২০২১ সালের মার্চ মাসে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে সংঘটিত বিক্ষোভে ভারতীয় তাবেদার সরকার গুলি চালিয়ে ২১ জন মানুষকে হত্যা করেছিল। এই ধরনের সংগ্রাম তরুণ প্রজন্মের মননে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের বীজ বপন করেছিল। অথচ এসব গুরুত্বপূর্ণ ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা জুলাই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। উপরোক্ত সংশোধনীগুলো জুলাই ঘোষণাপত্রে না থাকলে তা হবে অপূর্ণাঙ্গ, অভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থী ও জাতির জন্য হতাশাজনক। আমরা অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র সংশোধনের দাবি জানাই।

তারা বলেন, গতকাল জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করায় আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে নির্বাচনের পূর্বেই দৃশ্যমান সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি। গণহত্যার বিচারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রয়োজন। পেশীশক্তি, কালো টাকার প্রভাবমুক্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।