সর্বদলীয় জাতীয় কনভেনশন আহ্বান খেলাফত মজলিসের

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস পদত্যাগ করতে চাচ্ছেন বলে খবর ছড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশবাসী শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে সব ধরণের শঙ্কা দূর করা জরুরি।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
খেলাফত মজলিসের সংবাদ সম্মেলন
খেলাফত মজলিসের সংবাদ সম্মেলন |নয়া দিগন্ত

বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের পদত্যাগের সুযোগ নেই জানিয়ে সর্বদলীয় জাতীয় কনভেনশন আহ্বান করেছে খেলাফত মজলিস।

শনিবার (২৪ মে) দুপুর ১টায় দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আট দফা প্রস্তাব দেয় দলটি। সেখান থেকে জাতীয় কনভেনশনসহ আরো আট দফা প্রস্তাব দেয়া হয়।

পল্টন ফায়েনাজ টাওয়ারস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আমিরে মজলিস মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ। লিখিত বক্তব্য পেশ করেন মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুর রহমান ফিরোজ, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শায়খুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হাজী নুর হোসেন ও আবুল হোসেন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতে দেশবাসী সকলের মধ্যে আশঙ্কা বিরাজ করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ বা অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে অন্যদের মতপার্থক্যের বিষয়ে যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে জনগণ খুবই উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। এ অবস্থায় একটি প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে খেলাফত মজলিস জাতির সামনে তার বক্তব্য তুলে ধরতে চায়।

‘আমরা মনে করি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা আওয়ামী ফ্যাসিবাদি সরকারের পতন অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে ঘটেছে। ২৪’র জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দুই হাজরেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন, হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। এখনো অনেকে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। জুলাই-আগস্টের পূর্বে পিলখানায় বিডিআর হত্যা, ২০১৩ সালের শপলায় গণহত্যাসহ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে অসংখ্য বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আলেম-ওলামা গুম, খুন, হত্যা, জেল-জুলুমের শিকার হন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদি আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান ঘটেছে। এরপর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে। পতিত ফ্যাসিবাদি সরকার দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা- সংস্কৃতি, প্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ সব কিছু বিপর্যস্ত অবস্থায় রেখে যায়। এ অবস্থার উত্তরণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সকল রাজনৈতিক দল, সামরিক বাহিনীসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল শক্তি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। সরকার সংস্কার, ফ্যাসিবাদিদের বিচার ও নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছিল। রাজনৈতিক দলসমূহও সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে মতবিরোধ, মতভেদ প্রকাশ্য রূপ নেয়। ইতিমধ্যে সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মতপার্থক্যের খবর প্রকাশ পায়, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস পদত্যাগ করতে চাচ্ছেন বলে খবর ছড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশবাসী শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে সব ধরণের শঙ্কা দূর করা জরুরি।’

‘এ পরিস্থিতিতে খেলাফত মজলিস মনে করে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দেশের চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমন করা সম্ভব। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে বিভিন্ন দল ও পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক মতপার্থক্য- বিভেদ দূর করতে সংলাপ শুরু করা প্রয়োজন। এজন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার স্বার্থে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীলতার সাথে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য জুলাই অভ্যুত্থানের সুযোগকে কোনভাবেই বেহাত হতে দেয়া যাবে না। ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান বা পুনর্বাসন জুলাই শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানির শামিল। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।’

‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি যে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সম্ভব। সংস্কার, নির্বাচন, ফ্যাসিবাদের বিচার-যুগপৎভাবে করতে হবে। এ অবস্থায় খেলাফত মজলিসের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে,

১. বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের পদত্যাগের সুযোগ নেই। আমরা মনে করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংস্কার-নির্বাচনে সার্বিকভাবে সহযোগিতায় সকল দল ও প্রতিষ্ঠান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে দেশের পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করবে। পতিত ফ্যাসিবাদি ও আধিপত্যবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

২. অবিলম্বে সর্বদলীয় জাতীয় কনভেনশন আহ্বান করা। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল দল ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সৃষ্ট মতানৈক্য দূর করতে হবে। বিভেদ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড থেকে সকল মহলকে বিরত থাকা।

৩. সংস্কারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা অর্থাৎ প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা ও তা চূড়ান্তের মেয়াদ নির্ধারণ করা।

৪. অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা করা।

৫. পতিত ফ্যাসিবাদিদের বিচার দ্রুত সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে গতিশীল করা।

৬. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হয় এমন পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সতর্ক থাকা। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও প্রশাসনসহ সকল অঙ্গকে কার্যপরিধির মধ্যে থেকে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সরকারের কাজকে গতিশীল করা।

৭. রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে নিয়মিত আলোচনা অব্যাহত রাখা। বিশেষ করে রাখাইনকে মানবিক করিডোর প্রদান, বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশী সংস্থাকে প্রদানের মতো জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনা করা।

৮. নির্ধারিত সংস্কার, পতিত ফ্যাাসিবাদীদের বিচার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতায় নতুন-পুরাতন সকল রাজনৈতিক দল, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া।