সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আগে গণভোট ও পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) দাবিতে জাতি বিভক্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে গণভোট ও পিআরের দাবিতে জাতিকে বিভক্ত করছে, তা মোকাবেলাই নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ।’
আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নাগরিক যুব ঐক্য এই সভার আয়োজন করে।
বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদ, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিলম্ব ও গণভোট আয়োজনের বিতর্ক আসন্ন নির্বাচনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জনগণের রায় নেয়ার পক্ষে সবাই প্রায় একমত। কেউ কেউ বলছে, নির্বাচনের আগে গণভোট করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গণভোট যারা জটিল করতে চাচ্ছে, আল্লাহ তাদের হেদায়েত দেন। নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াসকে প্রতিহত করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জনগণ সুষ্ঠু ভোটের জন্য মুখিয়ে আছে। কেউ অনিয়ম করতে চাইলে জনগণই প্রতিহত করবে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে।’
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ প্রথা ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।’
তিনি যোগ করেন, ‘জনগণ ৫ আগস্ট জানিয়ে দিয়েছে, দেশে ফ্যাসিবাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক বৈধতার জন্য এটা বিচারিক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেশে নির্বাচন হবে কি হবে না- এই প্রশ্ন করার পরিবেশ নেই। নির্বাচন হবেই।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সংস্কারের পথে হাঁটেনি, তাই সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আমরা সংস্কারের পথে হেঁটে ঝামেলা বাড়িয়ে ফেলেছি।’
মান্না বলেন, ‘৮৬টা সংস্কার যা সমাধান হয়েছে, সেখানে পিআর নেই। সংস্কার কমিশনে পিআর নিয়ে আলোচনা হয়নি, সেখানে নতুনভাবে নিয়ে আসা হয়েছে গণভোট। ভোট দু’টি না তিনটি জোটে হবে, তা নির্ধারণ হয়নি।’
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘নাহিদ ইসলাম যাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছে, তারা জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। উপদেষ্টারা গণঅভ্যুত্থানের কী বোঝে, তাদের সন্তানরা? নাহিদ ইসলামরা ভুল ছিলেন।’
রাশেদ খান বলেন, ‘সংস্কারের জন্য কি আমাদের আবার জীবন দিতে হবে? আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া সম্ভব নয়। আগের প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘নিম্নকক্ষে পিআর দেশে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পিআর নিয়ে আন্দোলন ফ্যাসিবাদকে সুযোগ করে দিচ্ছে। বিভাজন নিয়ে নির্বাচনে গেলে তা বাঞ্চাল করে দেবে আওয়ামী লীগ ও ভারত।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। অনিশ্চিতার দিকও আছে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে আদৌ আর নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।’
সভায় বক্তারা বলেন, আসন্ন নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক ঐক্য জরুরি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট আয়োজন ও পিআর বিতর্ক নিয়ে দ্বিধা দূর না হলে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি হবে না।
বক্তাদের মতে, জনগণ এখন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু নেতৃত্বের বিভাজনই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বাধা।