নারী ভোটার সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার

দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে

‘রাষ্ট্র ও জীবনকে সুখ ও শান্তিময় করতে ইসলামী অনুশাসন প্রয়োজন। রাষ্ট্রে ইসলামী আইন চালু হলে সকল ধর্মের বর্ণের গোত্রের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকবে। ন্যায় ও ইনসাফের সাথে দেশ পরিচালিত হবে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব থাকবে না।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন

Location :

Khulna
খুলনা-৫ আসনে মহিলা ভোটার সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার
খুলনা-৫ আসনে মহিলা ভোটার সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার |নয়া দিগন্ত

‘দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে’ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘রাষ্ট্র ও জীবনকে সুখ ও শান্তিময় করতে ইসলামী অনুশাসন প্রয়োজন। রাষ্ট্রে ইসলামী আইন চালু হলে সকল ধর্মের বর্ণের গোত্রের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকবে। ন্যায় ও ইনসাফের সাথে দেশ পরিচালিত হবে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব থাকবে না। একমাত্র ইসলামই সকল মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। তাই আগামী নির্বাচনে সারাদেশে ইসলামপন্থী আলেম-ওলামা ও আল্লাহ ভীরু লোকদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে রাষ্ট্রে সকল মানুষের সুখ ও শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে খুলনা-৫ আসনের আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত নারী ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

ওয়ার্ড সভাপতি মো: শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা।

সেক্রেটারি মো: কামরুল গাজীর পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খানজাহান আলী থানা আমির ডা: সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন, জামায়াত নেতা মো: সুলতান মাহমুদ, মো: মোশারফ হোসেন, নূর ইসলাম গাজী, মো: রানা আকুঞ্জী প্রমুখ।

গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠায় পুরুষের পাশাপাশি নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। হযরত সুমাইয়া (রা.) ছিলেন মহিলা সাহাবীদের মধ্যে প্রথম শহীদ। আম্মাজান আয়েশা (রা.)ও যুদ্ধের ময়দানে অংশগ্রহণ করেছেন। তাই ন্যায়, ইনসাফ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিদিন সকাল বিকেল গ্রুপ করে করে মহিলা অঙ্গনে দাঁড়িপাল্লা মার্কার দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। একদিকে পুরুষরা পুরুষদের কাছে অন্যদিকে নারীরা নারীদের কাছে ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে দাঁড়িপাল্লা মার্কার দাওয়াত দেবেন এবং সাধারণ মানুষ যাতে ভুলভাল কোনো মার্কায় ভোট না দেয়ে সেটা বুঝাবেন। তাহলে আমরা সবাই মিলে ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে পারব ইনশাআল্লাহ।’

জান্নাতের টিকেট বিক্রি করা নিয়ে বিরোধীদের অপপ্রচারের জবাবে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘জামায়াত কখনো মানুষের কাছে জান্নাতের টিকেট বিক্রি করে না। তবে মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করে সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য গাইডলাইন হিসেবে পবিত্র কুরআনুল কারীম পাঠিয়েছেন। কুরআনে আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন, কোনো কাজগুলি করা উচিত আর কোনগুলি বর্জন করতে হবে। আমরা মানুষের কাছে সেই কথাগুলি তুলে ধরি।’

এ সময় তিনি বিরোধীদের এ ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

বিভিন্ন স্থানে তালিম প্রোগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধা প্রদানের কথা তুলে ধরে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলছে। আওয়ামী লীগ ইসলামী গণজাগরণ ঠেকাতে যেমন বিভিন্ন সময় জামায়াত-শিবিরকে কখনো রাজাকার, কখনো জঙ্গি ট্যাগ দিত, ঠিক তেমনি বিএনপি এখন সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা বর্তমানে মাহফিলে বাধা দেয়, মা-বোনদের তালিম প্রোগ্রামে বাধা দেয়। এটি করে তারা জামায়াতকে নয় মূলত ইসলামকে বাধাগ্রস্ত করছে। এগুলো করে মূলত তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।’

এর আগে সকালে সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার সকালে শিরোমণির ডাকাতিয়া গ্রামে গণসংযোগ করেন।

এসময় জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, খানজাহান আলী থানা আমির ডা: সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটোসহ স্থানীয় জামায়াত নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে রাতে সাজিয়াড়া শামসুল উলুম মাদরাসার ১০৫ তম বার্ষিক মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এবার সুযোগ এসেছে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিন। যেখানে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী আছে সেখানে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থীকে, আর যেখানে ইসলামী জোটের প্রার্থী আছে সেখানে জোটের প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে।’

একটি দলের নাম উল্লেখ না করেই তিনি অভিযোগ করেন, ‘ওই দলের মহাসচিব বলেছেন ‘ইসলামী শরীয়ার আইন তারা কায়েম করবে না।’ তারা আরো বলেন, ‘কুরআনে রাজনীতির কথা নেই।’ অথচ কুরআনের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ছাড়া তা বোঝা সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা বলে মদিনার ইসলাম; কিন্তু মদিনার ইসলাম কি দাড়ি কেটে বা গান-বাজনার ইসলাম? যারা শরীয়াহ মানে না, তারা কিভাবে মদিনার ইসলামের অনুসারী দাবি করে?’

তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি যদি একটি মার্কার পক্ষে কাজ করতে পারেন, আমিও অন্য একটি মার্কার পক্ষে কাজ করার অধিকার রাখি। ইসলামের সঠিক পথে কাজ করলেই ইসলাম বিরোধীরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাবে, এটাই স্বাভাবিক। তার দাবি, ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে গণসমর্থন বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ‘অস্থিরতা ও ভুল তথ্য’ ছড়াচ্ছে।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, ‘ইসলামী জোটের লক্ষ্য হলো ‘কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করা’ এবং এর জন্য জনগণের সমর্থন প্রয়োজন। তাই যেখানে আপনাদের আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী আছেন, তাদের প্রতিদিন বোঝান যে, আল্লাহর আইনের পক্ষে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিতে হবে।’