বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচনে সেই দলকেই জনগণ বেছে নেবে যে দল পরীক্ষিত। অতীতে যারা পরীক্ষা দিয়েছে অর্থাৎ সরকারে ছিল, কাজ করেছে। যেই দল মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে। যেই দল অন্ধকার থেকে আলোতে টেনে নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে।’
আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম সাইফুদ্দিন মনির দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এখন তো একটা নতুন ধারণা হঠাৎ করে এসেছে, যে ধারণা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের আদৌ কোনো ধারণাই নেই। সেটা হলো পিআর পদ্ধতি। এই পদ্ধতি সর্ম্পকে এই হাউজের (আলোচনা) মধ্যে কয়জন আছেন, বলেন তো যে পিআর পদ্ধতি বোঝেন, আছেন না কি? উপস্থিত বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের (জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের) শীর্ষ নেতারা জবাব দেন- না না, বুঝি না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংস্কার কমিশন পিআর পদ্ধতি বিষয়টি আনেনি, তবে দুয়েকটি রাজনৈতিক দল সেই পদ্ধতির কথা বলছে এবং যেটার জন্য তারা আন্দোলন করছে। আন্দোলনের লক্ষ্য একটাই, সেটি হচ্ছে যে নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা। পিআর পদ্ধতি এই দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। আমাদের দলের পক্ষ থেকে তো আমরা স্পষ্ট বলেছি এবং জনগণই এই পদ্ধতি গ্রহণ করবে না। চাপিয়ে দেয়া কোনো কিছু মানুষ গ্রহণ করবে না।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কমিটমেন্ট আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন। আমরা সেটাই দেখতে চাই, জনগণ নির্বাচন দেখতে চায় এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায়। গণতন্ত্রের মধ্য দিয়েই জনগণের আশাগুলো পূরণ করতে চায়। রাতারাতি আলাদিনের চেরাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে খুব সুন্দর বানিয়ে ফেলবে অন্তর্বর্তী সরকার, এই আশা জনগণ করে না। কিন্তু প্রক্রিয়াটার শুরুটা চায়। সেই প্রক্রিয়া শুরু হোক, যে প্রক্রিয়ার বদলে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে পাব। এই প্রক্রিয়া দেখতে চাই।
সংস্কারের মধ্যেই বিএনপির জন্ম হয়েছে জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, আমরা সবসময় সংস্কারের পক্ষে ছিলাম, যদিও আমাদের বিরুদ্ধে প্রচুর প্রচারণা চালানো হচ্ছে, আমরা না কি সংস্কারের বিরুদ্ধে। পরিষ্কার বলে দিতে চাই, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেছে বিএনপি, মিডিয়ার স্বাধীনতা- এটাও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ের। বিএনপির জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন অল্প সময়ের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছিলেন বাংলাদেশকে, তেমনই কর্মযজ্ঞে হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
কিছু সংখ্যক মানুষ চেষ্টা করে আমাদের ‘৭১ সালের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে- এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ বিষয়টি সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছিল বলেই স্বাধীন হয়েছিলাম, নতুন চিন্তা করতে পারছি। স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই কিন্তু বাংলাদেশে মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করার সংগ্রাম করতে পারছি।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ একটা দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেটি মাথায় রেখে আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যাই। অনেক ষড়যন্ত্র আছে, চক্রান্ত আছে। ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে পরাজিত করার শক্তি এ দেশের মানুষের আছে।
নেতাকর্মীদের ইউটিউব ও ফেসবুকের তথ্যের সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করা পরামর্শ দেন মির্জা ফখরুল।