বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার মাধ্যমে পূর্ণ নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
তিনি জামায়াতের প্রতিটি কর্মীকে এখন থেকেই নির্বাচনী মাঠে নেমে পূর্ণ শক্তিতে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্বীনকে জাতীয় সংসদে পাঠানোর জন্য এ সময়টিই সবচেয়ে উপযুক্ত। যারা একসময় ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, তাদের সবাইকে এখন আবার সক্রিয় হয়ে দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে হবে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকালে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল ফারুক সোসাইটি মিলনায়তনে খুলনা মহানগরী ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে সদস্য পুনর্মিলনী (১৯৭৭-২০২৫) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘সম্প্রীতির টানে শিকড়ের পানে’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মিয়া গোলাম পরওয়ার আবেগঘন স্মৃতিচারণ করেন। তিনি খুলনার ছাত্রশিবির নেতা আমিনুল ইসলাম বিমান, মুন্সী আব্দুল হালিম, আমানুল্লাহ আমান, শেখ রহমত আলী, আবুল কাশেম পাঠান ও সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে বলেন, তাদের ত্যাগ ও অবদান আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। এ সময় মিলনায়তনে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এ সময় মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে। জামায়াত ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এখন থেকে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নির্বাচনের কত আগে আমি ছুটি নিয়ে বাড়ি যেতে পারবো। এটাই উপযুক্ত সময় সিদ্ধান্ত নেয়ার। জামায়াত আমির বলেছেন, মুসলমানদের সামনে ৫৪ বছরের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের শক্তিকে পার্লামেন্টে নেয়ার এমন অবারিত সুযোগ অতীতে আর কোনো দিন আসেনি। ভবিষ্যতেও আসবে কি না আমরা জানি না। ফ্যাসিস্ট আমাদের গর্তে ঢুকাতে চেয়েছিলো, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের গর্তে দিয়ে ইসলামী আন্দোলনকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠন যখন যাকে নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার ব্যাপারে আমাদের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আমরা আমাদের ভাইকে বিজয়ী করা নয়; আমরা আমাদের আন্দেলনকে বিজয়ী করার জন্য আমাদের ত্যাগ স্বীকার করব।
ক্ষমতাকে আল্লাহর দান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় কে যাবে বা যাবে না, সেটির মালিক আল্লাহ। তাই ক্ষমতার দম্ভ দেখানো উচিত নয়। কেউ কেউ মনে করেন তারা ক্ষমতায় চলে গেছেন। এমন দম্ভ করা ঠিক না।
তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর ৯১টি দেশে পিআর চালু আছে, এর ৬-৭টি পদ্ধতি রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য কোন পদ্ধতি উপযোগী- তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হতে পারে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, খুলনাসহ যেসব ময়দানে শিবিরের রক্ত ঝরেছে সেসব স্থানেই ইসলামের গৌরবোজ্জল ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে।
শিবির অতীতকে হারিয়ে যেতে দেয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নে যার যতটুকু অবদান রয়েছে তার যথাযথ মূল্যায়ন শিবির করছে। জামায়াতের রাজনীতিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন না করতে পারলেও ছাত্রজীবনে অর্জিত শিক্ষা যেন সারাজীবনে কাজে লাগানো যায় সেজন্য তিনি প্রতিটি কর্মীর প্রতি আহ্বান জানান।
জীবনে দু’টি সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে নিতে পারলে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিয়ে আর পেশা বাছাইয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
ছাত্রজীবনে যারা দায়িত্বশীল ছিলেন আগামী নির্বাচনে তারা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে যে পেশায়ই আছেন না কেন, অন্তত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পেশা/চাকরির পাশাপাশি নির্বাচনী কার্যক্রমে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে যে যে এলাকায় নির্বাচনী কার্যক্রমে বেশি অংশগ্রহণ দরকার সেসব এলাকায় সময় দেয়ারও আহ্ববান জানান তিনি।
প্রধান বক্তা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের দাঁড়ানোর সুযোগ ছিলো না, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যানেল দিতে পারছে না অনেকেই। যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো বামদের আঁতুড়ঘর, আমাদের সেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আমাদের যে এতোকিছু দিয়েছে। আমাদের এটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে যেন অহংবোধ চলে না আসে। অহেতুক কথা বা কাজ করার ব্যাপারে সরাসরি আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন। ফেসবুকে কথা চালাচালি এসব যারা করে তাদের বিরত থাকতে হবে। যদিও আমরা মনে করি আমাদের কোনো দায়িত্বশীল কেউ করে না, যারা সংগঠনের টাচে নাই তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবেগের বর্শবর্তী হয়ে করতে পারে। যে আমাকে গালি দেয়, আমরা তাদের কোনো প্রতিউত্তর দেবো না। কারণ, গালি কোনো প্রতিউত্তর হতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনে যে যে এলাকায় দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের জন্য এতো সুযোগ তৈরি হয়েছে, আমরা কোনোদিন কল্পনা করিনি। এত বড় শিপমেন্ট আমরা আগে কখনো দেখিনি। আমাদের বিশ্বাস করতে হবে আমরা অন্তত ১৬০টি আসন পাবো।
তিনি আরো বলেন, বার্ধক্য আসার আগেই যৌবনের সময়কে মূল্য দিতে হবে। সাবেক দায়িত্বশীলদের উচিত জামায়াত নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখা, কারণ নেতৃত্ব অনেক দূরদর্শিতা থেকে বিষয়গুলো দেখে।
খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি রাকিব হাসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক নজিবুর রহমান ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল।
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন মহানগরী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শেখ কামরুল আলম, অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, ড. জি এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক স ম এনামুল হক, মিয়া মুজাহিদুল ইসলাম, মুকাররম বিল্লাহ আনসারী, আতাউর রহমান বাচ্চু, সাইদুর রহমান, আজিজুল ইসলাম ফারাজী, মিম মিরাজ হোসাইন, হাফেজ ইমরান খালিদ, হাবিবুর রহমান, মুশাররফ আনসারী, আব্দুল আউয়াল, জাহিদুর রহমান নাঈম, তৌহিদুর রহমান, সাবেক সেক্রেটারি খান মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, মু. সিদ্দিকুর রহমান, ওয়াছিয়ার রহমান মন্টু, মাকসুদুর রহমান মিলন, গাজী মোর্শেদ মামুন।
অন্যান্যের মধ্যে বর্তমান মহানগরী অফিস সম্পাদক ইসরাফিল হোসেন, বায়তুলমাল সম্পাদক আসিফ বিল্লাহ, প্রচার সম্পাদক এস এম বেলাল হোসেন, সাহিত্য সম্পাদক আহমেদ সালেহীন, প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুর রশিদ, এইচআরডি সম্পাদক কামরুল হাসান, ছাত্র অধিকার সম্পাদক ইমরানুল হক, পাঠাগার সম্পাদক সেলিম হোসেনসহ বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালনকারী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।