রুহুল কবির রিজভী

দেশে আওয়ামী ভয়ঙ্কর স্বেচ্ছাতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব পালন করেছে জাপা

এসময় তিনি বলেন, ‘কে রাজনীতি করবে, না করবে, এটা আইনের ব্যাপার, সরকারের ব্যাপার। বিএনপি তো এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই।’

অনলাইন প্রতিবেদক
বক্তব্য রাখছেন অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী
বক্তব্য রাখছেন অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী |নয়া দিগন্ত

জাতীয় পার্টি (জাপা) বাংলাদেশে আওয়ামী ভয়ঙ্কর স্বেচ্ছাতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব পালন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

এসময় তিনি বলেন, ‘কে রাজনীতি করবে, না করবে, এটা আইনের ব্যাপার, সরকারের ব্যাপার। বিএনপি তো এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই।’

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ‘উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কে রাজনীতি করবে, না করবে? এটা আইনের ব্যাপার, সরকারের ব্যাপার। বিএনপি কোথাও কোনো মব সংস্কৃতি তৈরি করে না। উচ্ছৃঙ্খল জনতাতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় বিএনপি। কিন্তু বিএনপির তো এনালাইসিস আছে, একটা বিশ্লেষণ আছে, গেল ১৬ বছর জাতীয় পার্টির ভূমিকা কি ছিল, আর অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ভূমিকা কি ছিল? ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু শেখ হাসিনার আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে কারা রক্ষা করেছে কারা, জনগণের লক্ষ-কোটি টাকা পাচারের সুবিধা করে দিয়েছে কারা। দেশে আওয়ামী ভয়ঙ্কর স্বেচ্ছাতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার সিল দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছে জাতীয় পার্টি।’

তিনি বলেন, ‘একবারে দেশটা ছিল শেখ হাসিনার বাপের সম্পত্তি, যখন যা মনে করেছে তাই করেছে। একটার পর একটা ব্যাংক দিয়ে দেয়া হয়েছে এস আলমকে। সেই এস আলম এখন দিল্লিতে শেখ হাসিনার কাছে আড়াই হাজার কোটি পৌঁছে দিয়েছেন বাংলাদেশের মধ্যে কিছু ঘটাতে। আরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আরো দুই হাজার কোটি টাকা দেবেন। আরেকজন নেতা শেখ হাসিনার একেবারে ডান হাত মাহবুল হানিফ বিদেশ বা ইন্ডিয়ায় আছেন। তিনি বাংলাদেশে তার এলাকায় একটা বেশ বড় ধরনের এলাকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ওপেন করছেন ও উদ্বোধন করেছেন কালকে। কিভাবে সম্ভব এটা?’

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার করেছে আওয়ামী লীগ। বলছে, মালয়েশিয়াতে তার অনেক কলকারখানা আছে। কিন্তু ১৬ বছর তারেক রহমানের কারখানার নাম কী, শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম কী, শেখ হাসিনা তো বলতে পারেননি।’

‘এখন জাতীয় পার্টিকে রক্ষার দায়িত্ব বিএনপির’ জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারীর এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, ‘বিএনপি তো রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই। এখনো তো আবার সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। আপনি কিসের দায়-দায়িত্বের কথা বলছেন? আপনি আবার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলছেন কেন? বিএনপি জাতিয় পার্টির দায়িত্ব নেবে কেন? আপনারা কারা? যখন ইলিয়াস আলীসহ অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মীর গুম হয় তখন কোথায় ছিলেন, তখন জাতীয় পার্টি কোথায় ছিল?’

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার নেই, সেই চিত্র স্মরণ করে রিজভী বলেন, “সেখানে কুকুর-বিড়াল, গরু-ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই নির্বাচনে যাব না, যাবো না করতে করতে জাতীয় পার্টি গেল, ১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর প্রায় ৪৫ জন প্রার্থীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো অর্থাৎ শেখ হাসিনা বিএনপি নির্বাচনে আসুক সেটা চায়নি। জাতীয় পার্টি কি ভূমিকা রেখেছে ২৪ সালের আগে দেখেছি। জি এম কাদের সাহেব ইন্ডিয়ায় গেলেন, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করল, আপনাকে কি কথা বলছে ভারত? তিনি বলেন, ‘ওদের সাথে কথা হয়েছে, তবে ওদের (ভারতের) পারমিশন ছাড়া কথা বলব না।’ এই দল জাতীয় পার্টি।”

‘নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে (জি এম কাদের) নির্দেশ দিয়েছিল ভারত, এটা পাবলিক সবাই জানে। সেটাও আপনি তাদের অনুমতি ছাড়া বলতে পারবেন না। তো আপনি কি ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল? না বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল? এই আপনাদের মেরুদণ্ড, এই আপনাদের নীতি, এই আপনাদের আদর্শ, এই আপনাদের চরিত্র?,’ বলেন রিজভী।

বিএনপির মব সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না বলে জোর উচ্চারণ করেন রিজভী।

১৬ বছরের সাংবাদিকতা বাদ দিয়ে অনেকে এক্টিভিজম করেছেন— এমন সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘চেতনার বয়ান তৈরি করেছে, চেতনার নামে নানা কিছুর নামে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, নির্বাচন ধ্বংস করেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ধ্বংস করেছে, সত্য কথা যদি বলেছে তার মৃত্যু হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, নইলে কারাগারে থাকতে হয়েছে। বিশেষ করে সত্যবাদী সাংবাদিকরা কেউ নিস্তার পায়নি শেখ হাসিনার করাল গ্রাস থেকে। আওয়ামী লীগের দাসত্ব করা সাংবাদিকরা আজকে বড় বড় কথা বলেন, এটা তো অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আমরা বিএনপি পরিবারের আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন।