অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

যারা জনগণের ভোটে বিশ্বাসী নয় তারাই গণভোটকে ভয় পায়

‘শাপলা চত্বরের গণহত্যার শহীদ পরিবারের মতোই ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারকে এবং আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসন করতে হবে।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান |ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, যারা জনগণের ভোটে বিশ্বাসী নয়, তারাই গণভোটকে ভয় পায়। এজন্য তারা গণভোট আয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতার পরিবর্তে সংবিধানের দোহাই দিয়ে ভুল পথ দেখাচ্ছে।

পিআর পদ্ধতিকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সনদ প্রস্তাব করার দাবি জানিয়ে বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে নব্য ফ্যাসিবাদের পরিণতি আওয়ামী লীগের মতোই হবে।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার তাণ্ডবে শহীদদের পরিবারের সাথে সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, বিগত ৫৪ বছর যেই পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়েছে সেই পদ্ধতিতে জাতি আর নির্বাচন চায় না। কারণ, সেই পদ্ধতিতে জনগণের সরকার গঠিত হয়নি, হবেও না। নির্বাচনের বিদ্যমান পদ্ধতি হচ্ছে সরকারকে স্বৈরাচার হিসেবে তৈরি করার পদ্ধতি। একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি, হবেও না। সব দলের প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ গঠিত হলে একক কোনো দল স্বৈরাচার হতে পারবে না। একদলীয় শাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় সংসদ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতির বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান। আওয়ামী লীগ সেদিন সারাদেশে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। জামায়াত-শিবিরের ১৪ জনকে তারা হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করেছে। যেটি মানব সভ্যতার এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ওই ঘটনার মামলা হলেও শহীদ পরিবার ন্যায়বিচার পায়নি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় বসেই সেই মামলা গায়েব করে দিয়েছিল।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পরিচালিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের টার্গেট ছিল জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এজন্য তারা সেদিন সারাদেশ রক্তাক্ত করে। ওই ঘটনায় তখন মামলা করা হলেও পরবর্তীকালে অধিকতর তদন্তের নামে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করে রাখা হয়। তারপর হাসিনা ক্ষমতায় এসে বেআইনিভাবে মামলাটি বাতিল করে।

তিনি ওই মামলা পুনরুজ্জীবিত করে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় মহানগরীর হলরুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় শহীদ সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ মাসুমের মা শামসুর নাহার রুবি, শহীদ হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপনের বাবা তাজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

এ সময় তারা বলেন, দ্বীন কায়েমের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য প্রয়োজন সাহসী মা। মা-বাবার অনুপ্রেরণায় সন্তানেরা ইসলামের জন্য দেশের জন্য জীবন দিতে দ্বিধাবোধ করবে না।

তারা বলেন, আমাদের সন্তানদের আমরা দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করলাম। তাদের আত্মদানের পথ ধরেই চব্বিশের বিপ্লব। বাংলাদেশে হাসিনার ফ্যাসিজমের সূচনা হয় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বইঠা দিয়ে মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যার মাধ্যমে।

তারা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পরিচালিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে হাসিনাসহ তার দোসরদের ফাঁসির দাবি জানান।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির, ঢাকা -৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি, ঢাকা-৫ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোহাম্মদ কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণে সহকারী সেক্রেটারি, ঢাকা-৬ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ড. আব্দুল মান্নান প্রমুখ।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে অ্যাডভোকেট এস. এম কামাল উদ্দিন, আব্দুস সালাম, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন, কামরুল আহসান হাসান, সৈয়দ সিরাজুল হক, শাহীন আহমেদ খান, শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শহীদ মুহাম্মদ জসিম উদ্দিনের ভাই জাকির হোসেন, শহীদ মো: জসিম উদ্দিনের পরিবার, শহীদ শাহজাহান আলীর ভাই, শহীদ রুহুল আমীনের ছেলে আসাদ, শহীদ হাবিবুর রহমানের পরিবার। এছাড়াও অনুষ্ঠানে মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর লগি-বইঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে হত্যার করার প্রকাশ্যে নির্দেশ দিয়ে হাসিনা পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। হাসিনার নির্দেশে ২৮ অক্টোবর লগি-বইঠা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যার পর তারা লাশের উপর নৃত্য করেছে। এতোকিছুর পরও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে কিন্তু রাজপথ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। কারণ, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী। তারা এদেশ আধিপত্যবাদের কাছে ছেড়ে দেয়নি। চারদলীয় জোটের কর্মসূচি হলেও সেদিন বিএনপিসহ অন্য দলগুলো জামায়াত-শিবিরের সাথে মাঠে ছিল না। যদি তারাও এগিয়ে আসতো তবে আধিপত্যবাদের দোসর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সেদিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারতো না। পরবর্তীতে দীর্ঘ ১৬ বছর জাতির পর জুলুম-নির্যাতন করার সুযোগ পেতো না।

তিনি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় দায়ের করা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, শাপলা চত্বরের গণহত্যার শহীদ পরিবারের মতোই ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারকে এবং আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসন করতে হবে।