আগামীর সরকারকে শক্তিশালী ম্যান্ডেটের ওপর দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, যদি ম্যান্ডেট দুর্বল হয়, তাহলে হয়তো অনেক কাজই করা সম্ভব হবে না। সেই শক্তিশালী ম্যান্ডেট যদি পেতে হয়, তবে অবশ্যই জনসমর্থন লাগবে।
রোববার রাতে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জনপ্রত্যাশা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কী করবে, সেই পরিকল্পনাগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে নেতাকর্মীদের ছড়িয়ে পড়ার আহ্বানও জানান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
নেতাকর্মী এবং মঞ্চে উপস্থিত বক্তাদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের চিন্তা-ভাবনা এক। শব্দে হয়তো কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এতগুলো মানুষ আমরা একইভাবে একই কথা ও একই কাজ চিন্তা করছি। আমরা যদি সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে অবশ্যই ইনশাআল্লাহ আমরা কাজগুলো করতে সক্ষম হব।
বিএনপি সরকার গঠন করলে কী কী করবে, তার পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন বক্তা এখানে বলেছেন, এয়ার কন্ডিশন ঘরের ভেতরে থাকলে হবে না। আমাদেরকে ছড়িয়ে পড়তে হবে। ইয়েস উনি ঠিক বলেছেন। জনগণের কাছে যদি আমাদের এই পরিকল্পনাগুলো পৌঁছে দিতে পারেন, তাহলে আমি মনে করি, দেশ ও জাতির উপকার হবে। এই কাজগুলো করার জন্য জনসমর্থন প্রয়োজন। এই কাজগুলো করার জন্য আগামী সরকারকে সেভাবে শক্তিশালী ম্যান্ডেটের উপরে দাঁড়াতে হবে। যদি ম্যান্ডেট দুর্বল হয়, তাহলে হয়তো অনেক কাজ করা সম্ভব হবে না। সেই শক্তিশালী ম্যান্ডেট যদি পেতে হয়, অবশ্যই জনসমর্থনের প্রয়োজন।
তারেক রহমান বলেন, যারা আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবেন, প্রথমে একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। সেটা হচ্ছে রুল অফ ল- মানুষের নিরাপত্তা বা আইনশৃঙ্খলা, এক বাক্যে যা আমরা বলি- এই জিনিসটাকে প্রথমেই বোধ হয় আমাদের চেষ্টা করতে হবে, সর্বশক্তি দিয়ে এটাকে এনসিওর করার।
তিনি বলেন, যে কয়জন মানুষ এই ঘরে উপস্থিত আছেন, কমবেশি প্রত্যেকেই ঢাকা শহরে থাকেন। প্রতিদিন আপনাদের ঢাকা শহরের জ্যাম পোহাতে হয়। অথচ এখানে কেউ ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে কথা বলেননি। কিন্তু এটি এমন একটি বিষয়, যেটি অবশ্যই আগামী সরকারকে এড্রেস করতে হবে। অন্যথায় যেভাবে এনার্জি, সময় ও পরিশ্রম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাতে জাতি প্রতিদিনই পিছিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এটা সয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা সয়ে গেলে চলবে না। বরং এর সলিউশন বের করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন, ঢাকা শহরে প্রায় দেড় দুই কোটি মানুষ বাস করতো শুনতাম। এখন নতুন পরিসংখ্যান বলছে- এটা বোধহয় তিন কোটির কাছাকাছি প্লাস মাইনাস হবে। এত মানুষ ঢাকা শহরে বাস করে। তিন কোটি মানুষও যদি বসবাস করে, আড়াই কোটি মানুষও যদি বসবাস করে- আমাদেরকে ধরে নিতে হবে প্রতিদিন প্রায় দু’কোটি মানুষ অন্তত চলাফেরা করছে। এই দু’কোটি মানুষ কমবেশি স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করবে, এরকম পরিস্থিতি আমাদেরকে তৈরি করতে হবে। সেটি বোধহয় নেই। চলাফেরার জন্য এনাফ স্কোপ তাদের থাকতে হবে। বিভিন্ন ডিফারেন্ট কাইন্ড অফ ট্রান্সপোর্টেশন মোবিলিটি থাকতে হবে। সেই বিষয়টি আলোচিত হয়নি।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে যদি এই মুহূর্তে আড়াই থেকে তিন কোটি মানুষ থেকে থাকে, তাহলে প্রত্যেকের একদিনের সব ধরনের কাজ করার জন্য ১০০ লিটারের মতন পানি প্রয়োজন, অথচ তা আমাদের নেই। এই মুহূর্তে ঢাকা শহরে যদি আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার বের করতে হয়, তাহলে প্রায় ১০০০ ফিটের কাছাকাছি নিচে যেতে হয়। আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল এতটা নিচে চলে গেছে। খুব কাছে যেই নদী -বুড়িগঙ্গা নদী- সেই নদীর পানি সম্পূর্ণ ব্যবহারের অযোগ্য। তার থেকে একটু দূরে শীতলক্ষা নদী। এটাও ব্যবহারের অযোগ্যের কাছাকাছি চলে গেছে। তারপরও সেখান থেকে পানি এনে ফিল্টার করে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু সেটার পরিমাণও ধীরে ধীরে কমে আসছে। সুতরাং এখন থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে। নতুন করে যেই পানি প্রজেক্ট হচ্ছে, সেটা মেঘনা নদী থেকে আনা হচ্ছে। তবে মেঘনা নদীর আশেপাশে এখন অনেক মিল ফ্যাক্টরি অনেক হচ্ছে। কয়েক বছর পরে হয়তো এটিও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাবে।
তারেক রহমান বলেন, এই মুহূর্তে সবকিছু মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি লিটারের মতন পানি সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ ঢাকা শহরে তিন কোটির মতো লোক বসবাস করছে। হিসাব করলে গড়ে এক থেকে দেড় লিটার পানি আমরা পাচ্ছি। এর ভয়াবহতা আপনাদের বিবেচনা করার জন্য আমি অনুরোধ করছি। এরকম পরিস্থিতিকেও আমাদেরকে এড্রেস করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা পরিকল্পনা যেটা গ্রহণ করেছি, যদি সেই পরিকল্পনাগুলোর ৪০ পারসেন্টও বাস্তবায়ন করতে পারি- আমার মনে হয় ওই সমস্যা থেকে বের করে আনতে পারব। কেন ইয়াং জেনারেশন ড্রাগের ভেতরে যাচ্ছে! একটা মানুষের বয়স যখন ১৫/১৬, কিংবা ২০/২৫ বছর হয়, তখনই তাকে স্পেসটা তৈরি করে দিতে হবে। যেখানে সে ডিবেট করবে, যেখানে সে গেমসে অংশগ্রহণ করবে, যেখানে সে আর্ট অ্যান্ড কালচারে পার্টিসিপেট করবে। এই স্পেসগুলো তো বন্ধ। কাজেই তার শারীরিক শক্তি কোথায় সে ব্যয় করবে, তাকে স্পেসটা দিতে হবে। আমরা সেই স্পেসটা ক্রিয়েট করার চেষ্টা করছি। আমরা ইনশাআল্লাহ সুযোগ পেলে সেই স্পেসটা তৈরি করব। আমরা বিশ্বাস করি, আপনি শুধু শাস্তি দিয়ে বা অন্য কোনো ট্রিটমেন্ট করে এটার সমাধান করা সম্ভব না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন প্রমুখ।
এতে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইন অনুষদের সাবেক ডিন ড. বোরহান উদ্দিন খান।



