আমীর খসরু

দেড় বছরে কোটি মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করবে বিএনপি

তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থান নিয়ে বিএনপি নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে। আমরা তরুণদের চাকরি কিভাবে দেব, তার সব প্রস্তুতি শেষ করেছি।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
বক্তব্য রাখছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
বক্তব্য রাখছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী |বাসস

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে বিএনপি দেড় বছরে এক কোটি মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করবে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহার প্রণয়নে কিভাবে নাগরিক প্রত্যাশার অধিকতর ও কার্যকর প্রতিফলন করতে পারে, সে বিষয়ে একটি ট্রেইস কনসালটিং সংলাপে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থান নিয়ে বিএনপি নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে। আমরা তরুণদের চাকরি কিভাবে দেব, তার সব প্রস্তুতি শেষ করেছি।

তিনি আরো বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমাদের নতুন ইকোনমিক মডেলে যেতে হচ্ছে। এ জন্য আমরা এক কোটি লোকের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। দায়িত্ব পেলে ডে ওয়ান থেকে কাজ করবে বিএনপি।’

আমীর খসরু বলেন, ‘বিএনপির আসন্ন নির্বাচনী ইশতেহারে মূল ফোকাস থাকবে কর্মসংস্থান, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য চাকরি। বিএনপি ১৮ মাসে ১ কোটি চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যার বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই প্রণীত হয়েছে। এই কর্মসংস্থান হবে কৃষি, ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিস ও আইটি সেক্টরে স্কিল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে।’

তারেক রহমানকে গণতন্ত্রের বাতিঘর ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তকের সন্তান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মতো তার সন্তান তারেক রহমানও গণতন্ত্রের সংগ্রাম চালিয়ে স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করেছেন। আট বছর আগে ভিশন ২০৩০ দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। পরবর্তীকালে অনেক পরিবর্তন মাথায় রেখে ২৭ দফা এবং পরবর্তীকালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএনপি। সরাসরি সাধারণ মানুষের প্রস্তাবনা নিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে।’

আমীর খসরু আরো বলেন, ‘বর্তমান সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে, তারা এই সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছেন। এই সংবিধানে গণভোট নিয়ে কিছু নেই। আগামীতে নির্বাচনে পাস করে সংসদে গিয়ে সংবিধানে গণভোট যুক্ত করে এরপর গণভোটে আসতে পারে।’

এ সময় গণভোটের দাবি নিয়ে কথায় কথায় রাস্তায় না নামার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় দাবি নিয়ে রাস্তায় যাবেন, সেটা হবে না। আপনাদের দাবি নিয়ে আপনারা মাঠে যাবেন আর এর বিপরীতে যদি দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দল কর্মসূচি দেয় তাহলে সংঘর্ষ বাঁধবে না?’

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য কেমন জানি একটা স্বৈরাচারী মনোভাব চলে আসছে। কনসাসের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের ৩১ দফার অনেক কিছুই কনসাসের মধ্যে আসেনি, তাই বলে কি আমি মাঠে নামবো? আমি জনগণের কাছে যাব।’

কিছু রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ঐকমত্যের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। চ্যাপ্টার ক্লোজড। দীর্ঘ আলোচনার পর ঐকমত্যের মাধ্যমে সনদ সই হয়েছে। এর বাইরে ভিন্নমতের প্রতি সম্মান থাকতে হবে। ঐকমত্যের বাইরে যেয়ে নতুন ইস্যু সৃষ্টি করলে আপনারা ঐকমত্যকে সম্মান করছেন না। আপনাদের চিন্তাভাবনা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না। আপনারা ক্ষমতায় আসুন, এরপরে পরিবর্তন করুন।’

আমীর খসরু বলেন, সবার প্রতিবাদের অধিকার আছে। জনগণ ম্যান্ডেট দিলে সেসব বাস্তবায়ন করবো।

চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বিদেশীদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হবে বলে উল্লেখ করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এগুলো হলো— পারস্পরিক সম্মানবোধ, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, ভূরাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ না করার শর্ত।

তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি ডিজিটাল প্রশাসন চালু করতে চায়, যাতে সরকারি অফিসে সরাসরি যাতায়াত কমে যায় এবং দুর্নীতি হ্রাস পায়। সব সরকারি পারমিট ও লাইসেন্স অনলাইনে ইস্যু করার উদ্যোগ নেয়া হবে।’

বিএনপি’র এই নেতা বলেন, প্রয়োজনে কিছু প্রশাসনিক সেবা প্রাইভেট সেক্টরে দেয়ার কথাও বিবেচনায় রয়েছে।

সংলাপে আরো উপস্থিত ছিলেন— প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, ট্রেইস কনসাল্টিংয়ের প্রধান নির্বাহী ফুয়াদ এম খালিদ হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাব এনাম খান ও ডাকসু’র ভিপি সাদিক কায়েম।

অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ছাড়াও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, ডাকসু-জাকসু ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র : বাসস