নির্বাসন ও সংগ্রামের দীর্ঘ দেড় যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশে ফিরে মায়ের সান্নিধ্য পেলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরে বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রবেশ করেন তারেক রহমান। সেখানে গুরুতর অসুস্থ মমতাময়ী মায়ের কাছে যান তিনি। দীর্ঘ সময় পর দেশের মাটিতে মাকে কাছে পেয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে তার মায়ের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন তারেক রহমান। বেশ কিছুক্ষণ তিনি মায়ের পাশে একান্ত সময় কাটান। এ সময় তার সাথে ছিলেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।
এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশান অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ।
এর আগে, আজ বৃহস্পতিবার তারেক রহমানকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট (বিজি-১০২) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রথমে ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাকেসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে বুকে বুক মেলান তিনি। এছাড়া, উপস্থিত নেতাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
বেলা সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সবার আগে বাংলাদেশ খ্যাত লাল-সবুজ রঙের বিশেষ নিরাপত্তা সম্বলিত বাসে চড়ে ৩০০ ফিটের কাছে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলে আসেন।
সেখানে পৌঁছে নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। এ সময় বিশেষ মঞ্চে উঠে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন এবং দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভাষণ দেন তিনি।
ভাষণে তারেক রহমান বলেন, ‘আজ আপনারা জানেন, এখান থেকে আমি আমার মা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে যাবো। যে মানুষটি এ দেশের মাটি, এ দেশের মানুষকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। তার সাথে কী হয়েছে আপনারা জানেন। সন্তান হিসেবে আমি চাইব, আপনারা আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার মন পড়ে আছে আমার মায়ের হাসপাতালের ঘরে। কিন্তু সেই মানুষটি যাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের আমি কোনোভাবেই ফেলে যেতে পারি না। সেজন্যই হাসপাতালে যাওয়ার আগে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি আমি।’
আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা জিয়াউর রহমানের মাজার ও সাভার স্মৃতিসৌধে যাবেন তারেক রহমান। শনিবার নির্বাচন কমিশনে এনআইডি কার্যক্রম শেষ করে শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তিনি। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যাবেন।
দীর্ঘ দেড় যুগ পর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গন, নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সর্বসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ, কৌতূহল ও আবেগের সঞ্চার হয়েছে। এই প্রত্যাবর্তন শুধু একজন নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং সর্বজনীন প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষার মেলবন্ধন। যার সাথে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসমাগমের সম্ভাবনা।
একদিন পাহাড়সম অভিযোগ মাথায় নিয়ে চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যে, ছিলেন নির্বাসনে। আজ দেড় যুগ পরে তিনি দেশের মাটিতে ফিরে এসেছেন আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি জনপ্রিয়তা নিয়ে; গণ-মানুষের নেতা আর জাতির ঐক্যের প্রতীক হয়ে। বাসস


