বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং দলটির যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি এম এ মালেক। গত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে ধরে প্রায় ১৯ বছর আসতে পারেননি প্রিয় মাতৃভূমিতে। আওয়ামী লীগ সরকারের হিংসা পরায়ণ হয়ে খেটেছেন জেলও। ৫ আগস্ট দেশের ফেরার পর রাজনীতি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ফেরা এবং জীবন নির্বাহ নিয়ে কথা হয় দৈনিক নয়া দিগন্ত অনলাইনের। স্পষ্টভাবেই জবাব দেন সকল প্রশ্নের। গত শুক্রবার সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়।
নয়া দিগন্ত : বর্তমান দেশের পরিস্থিতিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এম এ মালেক : দেশের পরিস্থিতি উন্নয়নে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস বা উনার ক্যাবিনেট চেষ্টা করছেন । আমাদের দলের চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান সহযোগিতা করছেন । সরকার সার্বিক পরিস্থিতি আমার দৃষ্টিতে একটু এলোমেলো এখন পর্যন্ত । এনসিপির বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন কেউ গোপালগঞ্জের যেতেই পারছে না। মনে হয়, একটা দেশে মানে দুইটা আইনের শাসন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ব্রিফ করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সশস্ত্র বিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছে, প্রশিক্ষণ দিচ্ছে । এ প্রশিক্ষণের পিছনে ইন্ডিয়ার 'র' কমপ্লিটলি হাত আছে । প্রশাসন ম্যাক্সিমামই আওয়ামী সমর্থিত প্রশাসন রয়েছে। সচিবালয় একই কাহিনী । বিজনেস সেক্টরে এখন সেই আওয়ামী মজুদাররা । সিন্ডিকেট সব জায়গায়।
তিনি বলেন, নিম্ন কোর্টে জামিন দেয় না। আপার (উচ্চ) কোর্টে আসলে জামিন হয়ে যায়। পৃথিবীতে জজ সাহেবরা ঘুষ খায়। অনেক জায়গায় শুনেছি। আমি দেখিনি কোথাও। শুনেছি জজ সাহেবরা ঘুষ খেয়ে ক্লায়েন্ট ছেড়ে দেয়। এখনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে। এখনও অর্থনৈতিকভাবে খুব দুর্বল বাংলাদেশ। এখনো বাংলাদেশে 'র' খুব বেশি ইনফ্লুয়েন্স আছে। 'র'-এর এগেন্স্টে কেউ কথা বলছে না। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে ভারতকে কষ্ট দেয়া যাবে না। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, নেইবার (প্রতিবেশী) কান্ট্রি হিসেবে ভারতের সাথে বন্ধুত্ব চাই। আমাদের দেশে ডেমোক্রেসি ফিরে আসুক সেটা কোনোদিন ভারত চাইবে না। তারা আমাদের দেশে অটোক্রোসি গভর্মেন্টকে সাপোর্ট দেয়।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচন নিয়ে আগামীতে কোনো শঙ্কা থেকে যাচ্ছে কি?
এম এ মালেক : বাংলাদেশে ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন এবং একটা ভালো গভর্মেন্ট দরকার। একটা শক্তিশালী উইং দরকার যাতে বাংলাদেশে এবং বিদেশের কাছেও যাতে গ্রহণযোগ্যতা। এর জন্য একমাত্র প্রয়োজন ইলেকশন। ফেব্রুয়ারি মাসে ইলেকশন যদি না হয়, দেশে অরাজকতা বাড়বে। চক্রান্ত এটা চলছে দেশে। অন্যকে ব্লেম করছি। এনসিপির এক ইয়াং ব্রাদারের বাড়ি হঠাৎ করে বড় বিল্ডিং। তারাও চাঁদাবাজির দিকে যাচ্ছে। দেশের আইনের শাসন এবং ইলেকশন ফেব্রুয়ারি মাসে ইলেকশন নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাঝে সমঝোতা হয়েছে, নির্বাচনের কথা হয়েছে। সরকারকে সহযোগিতা করছি আমরা। আশা করছি, সকল সমস্যার অনলি সলিউশন ইলেকশন।
এআই ব্যবহার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, এআই ব্যবহার করে ইন্ডিয়ানরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সো এই আর্টিফিশিয়াল বিষয়গুলো আজকাল মানুষ বোঝে। বাট এগুলো প্রটেকশন দিতে হবে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন প্রতিবেদকের সাথে কথা বলছেন এম এ মান্নান : নয়া দিগন্ত
নয়া দিগন্ত : আপনার অভিযোগ ' অনেক দলই ভারতের পক্ষে কথা বলে। ভারতকে কাছে চায়, কোলে তুলতে চায়। এক্ষেত্রে আপনার দল অবস্থা?
এম এ মালেক : আমি একবারে ক্লিয়ার করে বলি, কোনো ন্যাশনালিস্ট (জাতীয়তাবাদী) ‘মা’ বিক্রি করে না, কোনো ন্যাশনালিস্ট দেশ বিক্রি করে না । আমার দল ন্যাশনালিস্ট। আমার দলের অবস্থান দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাই, আমরা ‘মা’ বিক্রি করব না। যত বড় মহাশক্তি হোক ইন্ডিয়ার কাছে আমরা মাথা নত করব। অনেকে মূলত ক্ষমতায় থাকার জন্য ‘মা’ (দেশ) বিক্রি করেছে। এগুলো বিএনপি করবে না। এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি।
নয়া দিগন্ত : ১৯ বছর পর সম্ভবত বাংলাদেশ এসেছেন। আপনার স্বপ্নের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিকে থেকে প্রত্যাশার জায়গাটা কি মিল খুঁজে পাচ্ছেন?
এম এ মালেক : সত্যিকার অর্থে ১৫ বছর এটা টোটালি ওয়ান সাইডেড শাসন ছিল। এখন তো দেশে আসতে পারছি। এটলিস্ট একটা আশা হয়েছে, মিনিমাম হলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনের শাসন সু-প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করছেন। অনেকে বিচার পাচ্ছে। গত সরকারের সময় ১০০ শতাংশ ছিল হোপলেস, কোনো আইনের শাসন ছিল না। এখন এটলিস্ট ধরেন ৪০ শতাংশ আইনের দিকে আসছে। ৬০ শতাংশ আউট অফ কন্ট্রোল আছে। কারণ প্রশাসনে ম্যাক্সিমাম আওয়ামী লোকজন রয়েছে। একমাত্র যেটা আমি রিসেন্ট লক্ষ্য করছি, সেনাবাহিনীর ভূমিকাটা দেশের পক্ষে রয়েছে। চাইলে সেনাবাহিনী কিন্তু ক্ষমতা নিতে পারতো। তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হ্যান্ডেল না করলে পুলিশকে মানুষ পিটিয়ে তুলে ফেলতো।
রাজনীতিতে একটা মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকতে হবে। পরস্পরের প্রতি একটা শ্রদ্ধা থাকতে হবে। এখানে একগুঁয়েমি করা ঠিক হবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো দুঃখে প্রবাসীরা কাঁদে। মানুষের ভোটাধিকার ফিরে দিতে আন্দোলন করেছি। দেশে গুম, খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি জাতিসংঘের সামনে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রবাসীদের জায়গা জমি গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগরা দখল করে আছে। এখন অনেক প্রবাসী সেগুলোর বিচার পাচ্ছে না । রেমিট্যান্স যোদ্ধা হলেন প্রবাসীরা। তাদের বাড়ি দখল করবে কেন?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, সরকারকে বলব, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসীদের ন্যায় দাবির পক্ষে একটি অবস্থান নেন। প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিতে হবে। এবং প্রবাসীদের যারা ডুয়েল সিটিজেন আছে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাদের আছে, বাংলাদেশী ভোটার যারা আছে, তাদেরকে যেভাবে হোক ভোট দেয়ার রাইট (অধিকার) আছে। এবং তাদের নির্বাচন করারও রাইট দিতে হবে। দ্বিপক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিভিন্ন মতের মানুষ ও প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
নয়া দিগন্ত : গত ১৫ ধরে সরকারের বিরুদ্ধে প্রবাসী হিসেবে লড়াই করেছেন দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরে দেয়ার দাবিতে, প্রবাসীদের ভোটের অধিকারের চেয়ে দাবি করেছেন, দাবি বাস্তবায়নে আপনার কোনো ভূমিকা থাকবে কিনা?
এম এ মালেক : প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবং দাবি বাস্তবায়নে আমি কাজ শুরু করেছি । এ বিষয়ে নির্বাচনী কমিশন, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টামণ্ডডলীর সাথে, আমাদের বিএনপি স্ট্যান্ডিং কমিটির সাথে একাধিক মিটিং করেছি। এবং সবাই আমাদের দাবির সাথে একমত হয়েছে। প্রেস ক্লাবে প্রেস কনফারেন্স করেছি প্রবাসীদের পক্ষে। তবে একটা কন্ডিশন দিয়েছি, প্রবাস বলতে- ইন্ডিয়া এবং ফ্যাসিস্ট, এছাড়া গত ১৫ বছর ধরে ভারতে যারা আছে, এদেরকে ভোটাধিকার দেয়া যাবে না। কারণ গত ১৫ বছর অবৈধভাবে ইন্ডিয়ান সিটিজেনরাও এ ভোটার হয়েছে। আমি চাই না, কোনো ইন্ডিয়ান সিটিজেন বাংলাদেশে এসে ভোট দেখ।
নয়া দিগন্ত : গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের মানুষ বা বিএনপির নেতাকর্মীরা অপেক্ষায় তাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন, তিনি কবে ফিরবেন যদি বলতেন?
এম এ মালেক : বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। গত ১৫ বছর আন্দোলন তারেক রহমানের নেতৃত্বে সফল হয়েছে। এই কথাটা শুধু আমার না। ইভেন জামায়াতের আমিরও বলেছেন, তারেক রহমান দেশের বাইর থেকে যে ডাইনামিক লিডারশিপ দিয়েছে, ধন্যবাদ। বিবিসির সিরাজ রহমানও বলেছেন, এই যুগের কার্লমার্কস তারেক রহমান। তার চিন্তাধারা বুদ্ধি, চেতনা সব দিয়ে কিন্তু দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছেন।
তারেক রহমান অচিরেই বাংলাদেশে আসবেন, যেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। ঘোষণাটা আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির মহাসচিব অচিরেই দেবেন।
নয়া দিগন্ত : আপনি যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি, তারেক রহমানও সেখানে আছেন। অনেকের প্রশ্ন; তারেক রহমান সাহেব ওখানে কিভাবে জীবন নির্বাহ করছেন, বিশেষ করে অর্থনীতিক বিষয়টা কিভাবে মেইনটেইন করেন?
এম এ মালেক : প্রথমে যখন তারেক রহমান সাহেব লন্ডনে যান, তখন উনি যে বাড়িতে থাকতেন সেই বাড়ির ভাড়া একবারে অল্প ছিল। বেগম খালেদা জিয়া দিয়েছেন পয়সা। পরবর্তী পর্যায়ে উনার ওয়াইফ ডাক্তার জোবাইদা রহমান, উনি ভেরি হাই ক্লাস ডাক্তার, উনার মেয়ে জাইমা রহমান ব্যারিস্টার...। উনি (তারেক রহমান) জিয়াউর রহমানের ছেলে। দেখেন, তার বিরুদ্ধে এত চক্রান্ত করল আওয়ামী লীগ , পত্রপত্রিকা বিভিন্নভাবে লেখালেখি গত ১৬ বছরে, মিনিমাম একটা করাপশনের সত্যতা প্রমাণ করতে পেরেছে কি আওয়ামী লীগ? শুনেন, যদি আপনি সৎ পথে থাকেন, আল্লাহ একটা না একটা ব্যবস্থা করেন।
তারেক রহমানের সততার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার জানামতে, দেশের একজন বড় ব্যবসায়ী আমার কাছে গিয়েছিলেন, তারেক রহমানকে বাড়ি কিনে দেয়ার প্রস্তাব করেন। তারেক রহমান তার সাথে দেখাই করেননি। এটাই তারেক রহমানের অনেস্টি, তার সততা। উনি খুব সিম্পল লাইফ লিড করেন। উনার শার্টগুলো কম দামের। উনার (তারেক রহমান) খুব ইচ্ছা মনে মনে এবং একটা শখ ছিল, একটা বেন্টলি গাড়ি চড়বেন, বেন্টলি গাড়িতে কেনার তওফিক নেই উনার। আরেকজন বললেন , "ঠিক আছে, আমি একটা বেন্টলি গাড়ি আপনাকে (তারেক রহমানকে) দিচ্ছি "। উনার মেয়ে জায়মা বললেন, আব্বু (তারেক রহমান) একটা গরিব মানুষের দেশের পলিটিক্স করেন। বেন্টলি গাড়ি উনাকে মানায় না। খোদার কসম করে বলছি, এই স্টেপ নেয়ার পর উনি আর ওইদিকে আগাননি। তারেক রহমান ভেরি সিম্পল লাইফ লিড করেন। বাংলাদেশে আসলে বুঝতে পারবেন। উনি একটা দামি শার্টও পরেন না। উনি কমদামি কাপড় চোপড় পরেন এবং জাস্ট নরমাল লাইফ লিড করেন।
নয়া দিগন্ত : সময় দেয়ার জন্য নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
এম এ মালেক : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।