ফ্যাসিবাদীর নিগ্রহ শেষে নীড়ে ফিরেছেন যে বিহঙ্গ

ফিনিক্স পাখির মতো জ্বলে ওঠা জীবন নিয়ে মৃত্যুর খিলান থেকে ফিরে আসে যে বিহঙ্গ— যার মেরুদণ্ডের জোড়ায় জোড়ায় বিঁধে রয়েছে ফ্যাসিবাদীর বিষাক্ত তীর— যে ভাটি-বিধৌত ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সবুজ ফাউন্টেনে আঁকা গণতান্ত্রিক মুক্তির শ্বেতপত্র নিয়ে সুদীর্ঘ ১৭ বছরের একসমুদ্র তৃষ্ণা নিয়ে ফিরে এসেছেন সাম্য-ন্যায়ের রাষ্ট্র বিনির্মাণে— তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন আপসহীন নেত্রী, লৌহ মানবী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তাসনীম মাহমুদ
ফিনিক্স পাখির মতো জ্বলে ওঠা জীবন নিয়ে মৃত্যুর খিলান থেকে ফিরে আসে যে বিহঙ্গ...
ফিনিক্স পাখির মতো জ্বলে ওঠা জীবন নিয়ে মৃত্যুর খিলান থেকে ফিরে আসে যে বিহঙ্গ... |নয়া দিগন্ত

ফিনিক্স পাখির মতো জ্বলে ওঠা জীবন নিয়ে মৃত্যুর খিলান থেকে ফিরে আসে যে বিহঙ্গ— যার মেরুদণ্ডের জোড়ায় জোড়ায় বিঁধে রয়েছে ফ্যাসিবাদীর বিষাক্ত তীর— যে ভাটি-বিধৌত ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সবুজ ফাউন্টেনে আঁকা গণতান্ত্রিক মুক্তির শ্বেতপত্র নিয়ে সুদীর্ঘ ১৭ বছরের একসমুদ্র তৃষ্ণা নিয়ে ফিরে এসেছেন সাম্য-ন্যায়ের রাষ্ট্র বিনির্মাণে— তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন আপসহীন নেত্রী, লৌহ মানবী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এক-এগারোর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাপ-লুডুর রেসে মাতৃভূমি বন্ধকের দেন-দরবারে, জগৎশেঠীয় সিদ্ধান্তের চরম নাজুক সময়ে মইনুল রোডের বাসা থেকে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেফতার করা হয় বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, রাজনীতির বরপুত্র তারেক রহমানকে।

যে হানাদার বাহিনীর অমানুষিক-বর্বর নির্যাতনে কেঁদে উঠেছিলেন একাত্তরের মা, যে মহিয়সী খাননি ভাত ১৮টি বছর ছেলের শোকে— তারাও লজ্জিত হতেন, যদি দেখতেন— স্বাধীন দেশের পতাকার নিচে নির্যাতনের লোহমর্ষক! হ্যাঁ, ওই বছরের ২৮ নভেম্বর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিপীড়নের এমন-ই এক বেদনাবিধুর বর্ণনায় অশ্রুসজল হয়েছিলেন তিনি।

দেশের অলিখিত প্রথম আয়নাঘরে রিমান্ড, নির্যাতন আর ১৮ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার নামে অঘোষিতভাবে জোরপূর্বক নির্বাসনে পাঠানো হয় রাজনীতির এই রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত পালকের তরুণ শ্বেতবিহঙ্গকে।

লন্ডনের নির্বাসনে, আহত জীবনেও ভারতীয় উপমহাদেশের ৪০০ বছরের ইতিহাস উপেক্ষা করে জবানবন্দীর খেলনাচনে দস্তখত করে তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে একের পর এক সাজানো, অহেতুক, মিথ্যা-রাষ্ট্রীয় মামলা।

ঈগলের পুনরাবৃত্তি— নব-গাহনের মতো, প্রতিকূলতার গাঢ়-অন্ধকার মাড়িয়ে সুদূর লন্ডনের স্বদেশবিচ্ছিন্ন জীবনে থেকেও তিনি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে থেকে ভালোবেসেছেন সবুজের ফাউন্টেনে আঁকা এই মানচিত্রকে। পরিচালনা করেছেন বিএনপি নামক দিশেহারা সংগঠনকে। ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সাথে তার ভার্চুয়াল যোগাযোগ দলকে করেছে ঐক্যবদ্ধ-উজ্জীবিত।

সহদরহারা ক্ষত-কলিজার ব্যথাবুকে তার নেতৃত্ব, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপিকে করে তোলে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের এক জ্বলন্ত ভিসুভিয়াস। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তার দিকনির্দেশনাতে তারই দল আগ্নেয়গিরির উদগীরণের লাভার মতো নেমে আসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে।

নীল মেরুন জলপাই রঙের পোশাকীর ঘাতক বুলেট একে একে ভেদ করে গেছে শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ ও নারীর শরীর... তবু দমে যায়নি বিপ্লব; দমে যায়নি জেন-জেড সমন্বয় এবং তার দল। এপিসি সাঁজোয়া যান উপেক্ষা করে অতঃপর মঞ্জরিত মৌমাছির গুঞ্জনে বেজে উঠলো গণহত্যার মসনদ ভাঙার ঢাক— আর ধুনিত তুলার মতো অগণন ছাত্র-জনতা আয়নাবাজির আয়নাঘর গুঁড়িয়ে ছিনিয়ে নিয়ে এলো সেই দুর্বিনীত মাহেন্দ্রক্ষণ— পাঁচ আগস্ট ২০২৪, স্বাধীনতা বিজয় সার্বোভৌমত্ব।

এরপরও নীড়হারা পাখির মতো ঘরে ফিরতে পারেননি তিনি। অথচ; গৃহবন্দী-অসুস্থ মায়ের আঁচলে কতদিন মুখ মোছা হয়নি তার! তিনি স্বপ্ন দেখেন, দেশে ফিরবেন। হযরত শাহজালাল, শাহ পরাণ, শাহ মাখদুম, খানজাহানের এই পূণ্যভূমি ধরে হেঁটে যাবেন— ছুঁয়ে দেখবেন সেই পবিত্র মাটি, যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছেন তার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান, ভাই আরাফাত রহমান কোকো আর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জননীকে উৎখাত করা চব্বিশের শহীদরা...।

হাসপাতালের সফেদ বিছানায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা মায়ের কথা মনে পড়ায় কত রাত নিরবে কেঁদেছেন তিনি, তবু প্রায় ৮৪টি রাষ্ট্রীয় মামলার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইকে সম্মান জানিয়ে আজন্ম লড়াকু পাখিটি অতঃপর হ্যামিলনের বাঁশির সুরে ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে, সেই লালিতস্বপ্নের বাস্তবায়নে; জন্মভূমির মাটি ছুঁয়েছেন আজ।

একটা শাদা পাখি, যার পালক আওয়ামী ফ্যাসিবাদের তীরে ক্ষত-বিক্ষত হয়। তার জন্য; এখন অপেক্ষার প্রহর- ভোরের আলোড়নে মিছিলের ঠোঁট গেয়ে উঠবে কী সমন্বিত গণতন্ত্রের বুলি? সফল হবে কী তার সমন্বিত প্ল্যান?