কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কার অপরিহার্য : আখতার

‘রাষ্ট্র যদি একজন ব্যক্তি বা একটি রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং যদি পুরোনো, অকার্যকর ব্যবস্থা চলতেই থাকে, তবে দেশের কোনো শ্রেণিই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে না।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
এনসিপি অ্যাগ্রোনমিস্ট উইং আয়োজিত ‘ইয়াং অ্যাগ্রিপ্রেনিউরস : দ্য নিউ স্ট্রেংথ অব দ্য ন্যাশনাল ইকোনমি’ শীর্ষক সেমিনারে আখতার হোসেন
এনসিপি অ্যাগ্রোনমিস্ট উইং আয়োজিত ‘ইয়াং অ্যাগ্রিপ্রেনিউরস : দ্য নিউ স্ট্রেংথ অব দ্য ন্যাশনাল ইকোনমি’ শীর্ষক সেমিনারে আখতার হোসেন |বাসস

বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কার না হলে কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র যদি একজন ব্যক্তি বা একটি রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং যদি পুরোনো, অকার্যকর ব্যবস্থা চলতেই থাকে, তবে দেশের কোনো শ্রেণিই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে না।’

রাজধানীর ফার্মগেটের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বার্ক) সম্মেলন কক্ষে জাতীয় কৃষি দিবস উপলক্ষে এনসিপি অ্যাগ্রোনমিস্ট উইং আয়োজিত ‘ইয়াং অ্যাগ্রিপ্রেনিউরস : দ্য নিউ স্ট্রেংথ অব দ্য ন্যাশনাল ইকোনমি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আখতার হোসেন বলেন, ‘আগের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচারিত উন্নয়ন বয়ানের নিচে কৃষকেরা বঞ্চিত হয়েছেন। অনেকেই ঋণের ফাঁদে পড়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন, আর উপকারভোগীরা বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের উন্নয়ন জাতির জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। তাই রাজনৈতিক সহিংসতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে এমন একটি নীতিনির্ভর রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে এগোতে হবে যেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও অন্যান্য সব খাতে সমতা, ভারসাম্য ও নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করা যায়।’

বাংলাদেশের বিশাল কৃষি সম্ভাবনার উল্লেখ করে আখতার বলেন, ‘উর্বর জমি, নদী, খাল-বিল ও জলাধারসমৃদ্ধ এই দেশে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পান না, কৃষি উদ্যোক্তারা বাধার সম্মুখীন হন, আর নীতিনির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ উপেক্ষিত হয়।’

তিনি বলেন, ‘কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে প্রাকৃতিকভাবে উর্বর দেশ হয়েও বাংলাদেশ আজ খাদ্যনির্ভর, অথচ কৃষিখাতকে সমন্বিত ও কৌশলগতভাবে পরিচালনা করা গেলে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করা সম্ভব।’

বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যালায়েন্স কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে খাদ্য সার্বভৌমত্ব অর্জিত হবে, নির্ভরতা কমবে এবং জনগণের কল্যাণে স্বাধীনভাবে নীতি গ্রহণ সম্ভব হবে।’

কৃষিকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করে আখতার বলেন, ‘কৃষকের সমস্যাগুলো জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত করে তা সমাধানের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

জুলাই চার্টার ও গণভোটকে ঘিরে চলমান রাজনৈতিক বিভ্রান্তির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক সংস্কার আদেশে এখনো কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে এবং কিছু রাজনৈতিক দল গণভোটের ফলাফলের বাধ্যবাধকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট অস্বীকার করা মানে জনগণের সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করা। যারা জনগণের ম্যান্ডেট অস্বীকার করবে, জনগণ শেষ পর্যন্ত তাদেরকেই প্রত্যাখ্যান করবে।’

আখতার সরকারকে জুলাই চার্টার বাস্তবায়ন আদেশের অস্পষ্টতা দূর করার আহ্বান জানান এবং সব রাজনৈতিক দলকে গণভোটের ফলাফলকে সম্মান জানাতে অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, ‘বাধা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে সবার সম্মিলিতভাবে কাজ করা উচিত।’

সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আসাদুজ্জামান সরকার, এনসিপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামন্তা শারমিন এবং সিনিয়র যুগ্ম প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান মাসুদ। বাসস