আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
তিনি জানান, সংসদ নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হবে, যথা- স্ট্যাটিক, মোবাইল ও সেন্ট্রাল রিজার্ভ। আর তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আচরণবিধির প্রয়োগে কমিশন কঠোর অবস্থানে থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা মোতায়েন পরিকল্পনার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার-ভিডিপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে পরিকল্পনা সমন্বয় ও দিকনির্দেশনামূলক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সঞ্চালনা করেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। সভায় চারজন নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবলায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ইসি সচিবলায়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো সংবাদ মাধ্যমকে অবহিত করেন।
তফসিল : আখতার আহমেদ জানান, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে (ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের) তফসিল ঘোষণা করা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে হবে। তিনি আরো জানান, প্রায় ১৩ কোটি ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুবিধার্থে ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য প্রায় ৪৩ হাজার কেন্দ্র ও দু’ লাখ ভোটকক্ষ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে আগামী ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য মক ভোটিংয়ের পর এ সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা : ইসি সচিব জানান, সংসদ নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হবে যথা- স্ট্যাটিক, মোবাইল ও সেন্ট্রাল রিজার্ভ। এক ভাগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্রে ‘স্ট্যাটিক’ দায়িত্ব পালন করবেন। আরেক ভাগে থাকবে মোবাইল ফোর্স, যারা ভ্রাম্যমাণ ও স্থায়ী চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করবে।
তৃতীয় ভাগে থাকবে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ফোর্স, যারা প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা দেবে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে ‘লিড মিনিস্ট্রি’ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করবে এবং নির্বাচন কমিশন সার্বিক সমন্বয় ও মনিটরিং করবে। এজন্য কেন্দ্রে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। বর্তমানে ইন এআইডি টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সেনাবাহিনীকে যে ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল পাওয়ার দেওয়া হয়েছে তা আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে। তারা সেই ক্ষমতা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে।
কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল ও সাইবার সিকিউরিটি সেল : ইসির নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং গুজব অপতথ্য প্রতিরোধে উচ্চ পর্যায়ের কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠিত হবে বলে ইসি সচিব জানান। এতে সেনা, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর প্রতিনিধিরা যুক্ত থাকবেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য শনাক্ত ও প্রতিহত করতে গঠন করা হবে সাইবার সিকিউরিটি সেল। ইউএনডিপির প্ল্যাটফর্ম, ইসির নিজস্ব সক্ষমতা, তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি, এনটিএমসি ও বিভিন্ন সংস্থার ফ্যাক্ট-চেকিং সুবিধা ব্যবহার করে অনলাইনে গুজব মোকাবেলা করার ব্যবস্থা রাখা হবে বলে ইসি সচিব উল্লেখ করেন।
আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে কন্টিনজেন্সি পরিকল্পনা : ইসি সচিব জানান, প্রতিটি এলাকায় কন্টিনজেন্সি প্ল্যান রাখা হবে। পাহাড়ি অঞ্চলে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে অতিরিক্ত প্রস্তুতি নেয়া হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বৈধ অস্ত্র জমা, সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি বাড়ানোসহ পোস্টাল ব্যালট পরিবহন, কাস্টডি ও গণনার সময় কঠোর নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়।



