আ’লীগের কর্মসূচি ঘিরে ঢাকায় কড়া নিরাপত্তা, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা

ঢাকায় আ’লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে; বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে ঢাকায় কড়া নিরাপত্তা
আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে ঢাকায় কড়া নিরাপত্তা |সংগৃহীত

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বৃহস্পতিবারের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রয়েছে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তায় সাধারণ মানুষ ও যান চলাচল কিছুটা কম দেখা গেছে।

এদিকে, যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এবং আওয়ামী লীগের যেকোনো পদক্ষেপ প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিতে দেখা গেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের জোটভুক্ত সহযোগী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলও করেন তারা।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হবে আজ। এ দিনেই ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।

গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, যা জনমনে নতুন করে অস্থিরতা ও সহিংসতার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ঢাকায় ১২ প্লাটুন বিজিবি ও আশপাশের জেলাগুলোতে আরো ২ প্লাটুন মোতায়েন করেছে।

বুধবার (১২ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো: সাজ্জাত আলী বলেন, লকডাউনকে কেন্দ্র করে যেকোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে পুলিশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

রায়ের তারিখ ঘোষণা ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে আজ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ডিএমপির ১৭ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর বাইরে মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরাও।

এর আগে, গত ২৩ অক্টোবর অভিযোগ ও যুক্তিতর্ক শেষে ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের জন্য দিন ঠিক করেন বিচারপতি মো: গোলাম মোর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

বহুল আলোচিত এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শহীদ আবু সাঈদের বাবা ও স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এ ছাড়া ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। এই মামলায় সর্বমোট ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এর আগে, গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।

এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরো দু’টি মামলা রয়েছে। এর একটি হয়েছে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায়। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

সূত্র : ইউএনবি