আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস (আইডিপিডি) ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আবারো প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তি অগ্রগতিতে জাতীয় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। অনুষ্ঠানটিতে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন (ওপিডি), জাতিসঙ্ঘ সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, যুব প্রতিনিধি ও উন্নয়ন সহযোগিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকায় বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্স সেন্টারে (বিসিএফসিসি) আজ অনুষ্ঠিত এই আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল— ‘সামাজিক অগ্রগতির জন্য প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন’।
জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সোশ্যাল সিকিউরিটি পলিসি সাপোর্ট (এসএসপিএস) প্রোগ্রাম ও সাইটসেভার্সের ‘ইক্যুয়াল বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। অস্ট্রেলিয়া সরকারের অর্থায়নে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে জাতিসঙ্ঘ আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয়, আইএলও, ইউএন উইমেন, ইউনিসেফ ও ডব্লিউএফপি কারিগরি সহায়তা প্রদান করে।
দিনব্যাপী এই জাতীয় সিম্পোজিয়ামটি মূলত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের— বিশেষ করে যুব-সমাজকে অধিকার, প্রবেশগম্যতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
গত এক দশকে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে, এখনো শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সরকারি সেবা এবং নীতি-নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে।
ইউএনডিপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছরের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসের জাতীয় আয়োজনটি এসব বৈষম্য দূর করতে সমন্বিত পদক্ষেপ ও সুস্পষ্ট জাতীয় প্রতিশ্রুতির ওপর গুরুত্ব দেয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজন বিবেচনায় না নিলে আমাদের সমাজ কখনোই পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে পারে না। সঠিক তথ্য, কার্যকর কাঠামো এবং প্রবেশগম্য সেবা— এগুলোর মাধ্যমেই অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়।’ তিনি জাতীয় সমন্বয় কমিটিকে সক্রিয় করার প্রতিশ্রুতি দেন।
ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাই কমিশনার ও ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর জেমস গোল্ডম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্বে কাজ করতে প্রস্তুত যুক্তরাজ্য। আমরা বিশ্বাস করি, এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব। যেখানে প্রতিজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্মান, সমর্থন ও সুযোগ পাবে।’
আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনন কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সম্মানজনক ও প্রবেশগম্য সুযোগ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা এমন একটি শ্রমবাজার গঠন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা শুধু সুযোগই পাবে না; মর্যাদার সাথে বিকশিতও হতে পারবে।’
ইউএনডিপির ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ (ওআইসি) দ্রাগান পোপোভিচ বলেন, ‘নীতি সংস্কার থেকে শুরু করে বিচার, সুশাসন ও জেন্ডার কাঠামোর মধ্যে প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। শুধু আইনে নয়, প্রতিদিনের জীবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অন্তর্ভুক্তি বাস্তবে রূপ দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’
সাইটসেভার্স ইউকে’র গ্লোবাল ক্যাম্পেইনস প্রধান টেসা মারফি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গণযোগাযোগ ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিচালক) মুহাম্মদ হিরুজ্জামান, সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: সাইদুর রহমান খানসহ জাতিসঙ্ঘ সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সাইটসেভার্স বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আমরিতা রেজিনা রোজারিও।
এরপর যৌথ কী-নোট উপস্থাপন করেন ইউএনডিপি’র এসএসপিএস প্রোগ্রামের প্রজেক্ট ম্যানেজার আমিনুল আরিফিন এবং সাইটসেভার্সের ক্যাম্পেইন অ্যাডভাইজার আয়ন দেবনাথ। তারা ২০২৬-২০৩০ মেয়াদে প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গঠনের একটি কৌশলগত রোডম্যাপ তুলে ধরেন।
সিম্পোজিয়ামের বিভিন্ন থিম্যাটিক সেশনে মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও কমিউনিটি সাপোর্ট, প্রবেশগম্য অবকাঠামো ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি-এই তিনটি মূল স্তম্ভ নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রত্যেকটি সেশনে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ উঠে আসে, যা বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন যাত্রাকে আরো টেকসই ও রূপান্তরমুখী করে তুলতে সম্মিলিত অঙ্গীকারকে শক্তিশালী করে।
দিনব্যাপী সিম্পোজিয়াম শেষ হয় সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, ওপিডি, সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০২৬-২০৩০ রোডম্যাপ কার্যকর করার উদ্দেশ্যে, যেন ‘ইক্যুয়াল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার পথে কোনো মানুষ পিছিয়ে না থাকে। বাসস



