জাতীয়তাবাদী বিশ্বাসীদের সরিয়ে দেয়াই শেখ হাসিনার লক্ষ্য ছিল বলে মন্তব্য করেছেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আব্বার (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) রায় যেদিন ঘোষণা দেয়া হয় সেদিন আমার বাবার হাতে রায় ছিল। সেই রায়টাও মিনিস্ট্রি থেকে বের হয়ে এসেছিল। তখন আমরা প্রমাণ করতে পারি, রায়গুলো কিন্তু ট্রাইবুনালে লেখা হচ্ছিল না। রায়গুলো লেখা হচ্ছিল ল’ মিনিস্ট্রিতে।’
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে হত্যা করা হয়। তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনার এইম (লক্ষ্য) একটাই ছিল, তার প্রতিপক্ষ যারা আছে, যারা জাতীয়তাবাদীতে বিশ্বাস করে, তাদেরকে যেভাবে হোক না কেন, তার রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া। দুনিয়ার মধ্যে যতগুলো আজ পর্যন্ত ডিক্টেটর (স্বৈরাচার) দেখেছেন সবাই কিন্তু একই ধরনের কাজই করতো, তাদের মেইন জিনিস ছিল হত্যা, খুন ও গুম। এগুলোর মাধ্যমেই কিন্তু তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতো। শেখ হাসিনাও একই জিনিস করেছে। এই গেম প্ল্যানের মধ্যেই আমার বাবাও ফেঁসে যান। আমার বাবাকেও সেই একইভাবেই হত্যা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গত ১৬ বছরের মধ্যে হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য যে যে কাজগুলো করেছে, ওটার মধ্যে একটা বেশ বড় কাজ ছিল এই আইসিটি ট্রাইব্যুনাল। এটির মাধ্যমে তার মেইন এনিমি (প্রধান শত্রু) হিসেবে দেখতো তাদেরকে এর মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে, তার এই চিন্তাধারাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আইসিটি ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে আমরা লড়াই করে এসেছি। এটা কি আসলে আদৌ কোনো ধরনের কোর্ট, নাকি না। এটা প্রমাণ করার জন্য সক্ষম হয়েছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিচারপতিরা যারা আছেন অথবা আমাদের আগের যে আইনমন্ত্রীরা ছিলেন, তাদেরকে যখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতেন, এই আইসিটি ট্রাইব্যুনাল কি ইন্টারন্যাশনাল নাকি ডোমেস্টিক? তারা কিন্তু গোল পোস্ট নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতো। তাদেরকে যখন কোন সময় জিজ্ঞেস করা হতো যে এটা বাংলাদেশের আইন কেন মেনে কাজ করছে না, তখন তারা বলতো ‘না, এইটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল, এটা ইন্টারন্যাশনাল মানের হচ্ছে। বিদেশীরা যখন জিজ্ঞেস করতো ‘ইন্টারন্যাশনাল নর্মস কেন এই আইসিটি ট্রাইব্যুনাল ফলো করছে না’। তখন বলতো ‘না, এটা তো আমাদের ডোমেস্টিক ট্রাইব্যুনাল’। ওরা কোনো সময় কিন্তু আমাদেরকে খোলামেলা বলতে পারেনি, যে আইসিটি ট্রাইব্যুনাল কোন জুরিসডিকশনে কাজ করছে।’
হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাবার বিরুদ্ধে ২০টা চার্জ দেয়া হয়েছিল, এই ২০টা চার্জকে তারা প্রমাণ করার জন্য অথবা আমাদেরকে ডিফেন্ড করার জন্য খালি চারজন সাক্ষী এলাও করেছিল। এখন আমরা তাও লড়াই করে গিয়েছি। আমাদেরই একজন তৎকালীন একজন জজ, সে নিজে সাক্ষ্য দিতে আসতে চেয়েছিলেন। সে বলেছিলেন যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তখন পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে তার সাথেই ছিলেন। সে নিজে আসতে পারেননি। তবে উনি জাস্টিস সিনহার কাছে পারমিশন চেয়েছিলেন, কিন্তু জাস্টিস সিনহা অনুমতি দেননি। কেস চলাকালীন ওই স্কাইপ কেলেঙ্কারিও কিন্তু বের হয়ে এসেছিল, যেখানে জাস্টিস নাসিমের নিজ গলায় শোনা যাচ্ছে, উনি বলছেন ‘সাকাকে যদি আমরা ফাঁসি দিয়ে দিতে পারি, তাহলে আমার জন্য কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের জায়গা খালি হয়ে আছে, ওখানে আমাকে জায়গা দিয়ে দিবেন’।’
তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে এখন কিছু কিছু মানুষ সাহস দেখানো শুরু করেছে। কিছু কিছু মানুষ আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে। তারা নিজেরাও প্রমাণ নিয়ে আসছে আমাদের কাছে। এগুলোর মধ্যেও মধ্যে একটি বড় জিনিস আমাদের হাতে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ফরেন মিনিস্ট্রি তাদের বিদেশী দূত যেগুলো আছে, সেখানে যখন মেসেজ পাঠানো হয় সেগুলাকে সাইফার বলা হয়। এই সাইফার গুলোকে বেশিভাগ সময় কোড সিক্রেট থাকে। এইটারই একটা সাইফার মেসেজ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এই সাইফার মেসেজের মধ্যে বলা আছে, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার বাবার পক্ষে চারজনকে কোনোভাবেই যেন ভিসা না দেয়া হয়। এই সাইফার মেসেজের মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে, আমাদের সাথে একটা খুব বড় অন্যায় হয়েছে। আমার বাবাকে হত্যায় আওয়ামী লীগ রেজিমের সরকার সরাসরি জড়িত ছিল। আমরা আপনাদেরকে বলে দিতে পারি, এটা হয়তো বা বাংলাদেশের জন্য একটা খুব কালো দিন হয়ে দাঁড়াবে। আপনারা বুঝতে পারছেন যে সাক্ষীদেরকে বাংলাদেশে না আসতে দেয়া একটা মানুষকে তারপরে ডিফেন্স ঠিকমত না দিতে দেয়া কত বড় একটা অনিয়ম হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান ফরেন মিনিস্ট্রিকে একটা লিগ্যাল নোটিশ পাঠাচ্ছি আমরা, তাদের কাছে অনুরোধ করছি, তাদের কাছে আমরা ডিমান্ড করছি, এই সাইফার মেসেজগুলাকে ডিক্লাসিফাই করে দেয়া হোক। এই সাইফার মেসেজ আমার বাবার ট্রায়ালের সাথে যতগুলো সাইফার মেসেজ জড়িত আছে, প্রতিটা যেন ডিক্লাসিফাই করে দেয়া হয়। এবং সেগুলো যেন আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে বলেন, ‘আমরা আবার কোর্টে যাব। আশা করি, আমরা প্রমাণ করতে পারব, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নির্দোষ ছিলেন এবং তাকে জুডিসিয়াল মার্ডার করা হয়েছে।’