মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, হাওর বাংলাদেশের কৃষি ও মৎস্য সম্পদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মোট বোরোধান উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক হাওরাঞ্চল থেকে আসে। কিন্তু কৃষিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে হাওরের মৎস্য সম্পদ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
রোববার (৩১ আগস্ট) সকালে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা পরিষদ হলরুমে জেলার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার নিবন্ধিত মৎস্যজীবীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদফতর কিশোরগঞ্জ যৌথভাবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, হাওরাঞ্চলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ রক্ষায় কৃষিখাতে বালাইনাশক ব্যবহার সীমিত করতে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিভাবে কৃষিতে বালাইনাশক কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো যায় এবং একইসাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ রক্ষা করা যায়, সে বিষয়ে কাজ চলছে। এ সংক্রান্ত যে ঘোষণা আসবে, তা সবাইকে মেনে চলতে হবে।

মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে হাওরে প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটছে। জমিতে পলির পরিবর্তে এখন বালি জমছে, যা প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে। আবার সব প্রাকৃতিক পরিবর্তন প্রকৃতির সৃষ্টি নয়, অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিবর্তনের জন্য মানুষ দায়ী।
অবৈধ জাল ব্যবহারকারীদের সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, কিছু দুষ্টু মানুষ অবৈধ জাল আর ইলেকট্রনিক শক ব্যবহার করে মাছ ধরছে যা ক্রমেই উদ্বেগজনক আকার ধারণ করছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন মানুষ হয়ে কিভাবে এমন ক্ষতি করা সম্ভব?
তিনি বলেন, হাওরে পর্যটকরা ভ্রমণে এসে পরিবেশের ক্ষতি করছেন, অথচ স্থানীয় মানুষের কষ্ট বোঝেন না। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম মহাসড়কে যথেষ্ট ব্রিজ ও কালভার্ট না থাকায় পানিপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। আরো ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করা গেলে মাছের চলাচল সহজ হবে এবং সবাই উপকৃত হবেন।
ইজারা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ হাওরে বর্তমানে ৪৫টি ইজারামুক্ত জলাশয় ও ৩১২টি ইজারাযুক্ত জলাশয় রয়েছে। সরকার চায় একমাত্র প্রকৃত মৎস্যজীবীরাই যেন ইজারা পেতে পারে সে লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ে কাজ করা হচ্ছে।
পরে উপদেষ্টা গাবতলী ব্রিজ সংলগ্ন ইটনা হাওরে ৫৫০ কেজি পোনামাছ অবমুক্ত করেন।

মতবিনিময় সভায় কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমতের সভাপতিত্বে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো: আবদুর রউফ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, মিঠামইন উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মো: আব্দুল্লা আল মামুন বক্তৃতা করেন।
এ ছাড়া ইটনা উপজেলার মৎস্যজীবী প্রতিনিধি মো: স্বপন মিয়া, মিঠামইন উপজেলার প্রতিনিধি মো: আজিজুর হক এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার প্রতিনিধি মো: কাকন মিয়া বক্তব্য প্রদান করেন।
সভায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ হাওর অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য অধিদফতরের পরিচালক মো: মনিরুল ইসলাম।