বিমান নিরাপত্তায় যুক্তরাজ্যের মূল্যায়নে সর্বোচ্চ নম্বর পেল বেবিচক

ওসমানী বিমানবন্দরও ৯৪ শতাংশ সামগ্রিক স্কোর এবং ১০০ শতাংশ কার্গো ব্যবস্থাপনার নম্বর পেয়েছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন

বাংলাদেশের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে উচ্চ প্রশংসা পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের পরিবহন দফতর (ডিএফটি) কর্তৃক পরিচালিত সর্বশেষ নিরাপত্তা মূল্যায়নে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এইচএসআইএ), ঢাকা ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ওআইএ) উভয়ই অসাধারণ রেটিং অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে সম্পন্ন ওই মূল্যায়নে ডিএফটি শাহজালাল বিমানবন্দরকে সামগ্রিকভাবে ৯৩ শতাংশ নম্বর দিয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত ব্যবস্থা মূল্যায়ন (কার্গো) বিভাগে পেয়েছে শতভাগ, অর্থাৎ ১০০ শতাংশ।

ওসমানী বিমানবন্দরও ৯৪ শতাংশ সামগ্রিক স্কোর এবং ১০০ শতাংশ কার্গো ব্যবস্থাপনার নম্বর পেয়েছে। সফররত যুক্তরাজ্যের পরিদর্শক দল সিএএবি’র প্রস্তুতি ও পারফরম্যান্সে ‘গভীর সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করেছে।

ডিএফটির এই বিদেশী বিমানবন্দর মূল্যায়ন কর্মসূচি মূলত যুক্তরাজ্যে যাত্রী ও কার্গো পরিবহনকারী বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা মান যাচাইয়ের জন্য পরিচালিত হয়।

২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের যৌথভাবে এই পরিদর্শন কর্মসূচি চালু আছে, যার আওতায় সময় সময় পরবর্তী মূল্যায়ন সম্পন্ন হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য যাচাই করতে।

সিএএবি জানিয়েছে, এই ফলাফল বাংলাদেশের বিমান নিরাপত্তা অগ্রযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চার সাথে বাংলাদেশের সামঞ্জস্যের প্রতীক।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই অর্জন আমাদের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃঢ়তা ও দক্ষতার প্রতিফলন, যার সরাসরি প্রভাব রয়েছে জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ওপর।’

বিবৃতিতে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, ২০১৬ সালে কার্গো স্ক্রিনিং-সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। ফলে রফতানিকারকদের তৃতীয় দেশে পুনরায় পণ্য স্ক্রিনিং করতে হতো, যা ছিল ব্যয়বহুল ও জটিল প্রক্রিয়া।

এরপর থেকে সিএএবি ও সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অবকাঠামো, সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। কার্গো নিরাপত্তায় যুক্ত করা হয়েছে আধুনিক বিস্ফোরক শনাক্তকরণ সিস্টেম (ইডিএস) ও বিস্ফোরক শনাক্তকরণ কুকুর (ইডিডি) প্রযুক্তি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবারকার অসাধারণ স্কোর প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ অতীতের সীমাবদ্ধতাগুলো সফলভাবে অতিক্রম করেছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘যুক্তরাজ্যের এই স্বীকৃতি আমাদের বৈশ্বিক অংশীদারদের আশ্বস্ত করে যে বাংলাদেশের বিমান ও কার্গো নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে।’

এতে যোগ করা হয়, এই সাফল্য বিদেশি বিমান সংস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা কমাবে।

সিএএবি জানায়, এই অসাধারণ অর্জন সম্ভব হয়েছে ‘দূরদর্শী নেতৃত্ব, সুদৃঢ় নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এবং কার্যকর বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাস্তবায়নের’ ফলে।

সংস্থাটি ধারাবাহিক উন্নতির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে জানিয়েছে, বাংলাদেশের বিমান নিরাপত্তা আরো উন্নত ও শক্তিশালী করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও মানসম্মত বিমান পরিবহন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ধরে রাখতে কাজ করবে।

সূত্র : বাসস