ড. ইফতেখারুজ্জামান

সরকার পক্ষপাতিত্ব করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়

‘পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না চায়, তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কঠিন হবে। এজন্য নির্বাচনে পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি।’

বিশেষ সংবাদদাতা
আরএফইডি ও টিআইবির আয়োজনে ইলেকশন ট্রেনিং কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. ইফতেখারুজ্জামান (মাঝে)
আরএফইডি ও টিআইবির আয়োজনে ইলেকশন ট্রেনিং কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. ইফতেখারুজ্জামান (মাঝে) |নয়া দিগন্ত

নির্বাচনকালীন সরকার যদি পক্ষপাতিত্ব করে, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না চায়, তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কঠিন হবে। এজন্য নির্বাচনে পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ মাইডাস ভবনে টিআইবি দফতরে নির্বাচন কমিশন-বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন আরএফইডি ও টিআইবির আয়োজনে ইলেকশন ট্রেনিং কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, টিবিএস’র নির্বাহী সম্পাদক সাখাওয়াত লিটন, ডাটা জার্নালিস্ট ও এডুকেটর মুহাম্মদ ইমরান। উপস্থিত ছিলেন আরএফইডির সভাপতি কাজী জেবেল ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেকেই এখন প্রশাসনে আছেন। দুর্বলতা মাথায় নিয়েই এগোতে হবে।’

তিনি বলেন, আমাদের অবকাঠামো বলতে সুশাসন ও জবাবদিহি, সরকারব্যবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, সততা, ট্রান্সপারেন্সি ও অ্যাকাউন্টেবিলিটি— এসবকে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে। এটা শুধু গত ১৬ বছরের নয়, প্রায় ৫৪ বছর ধরেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।’

‘সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের মাধ্যমে দ্বিগুণ দলীয় প্রভাবের মধ্যে আনা হয়েছে। পেশাগত বিরোধ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেগুলোকে কখনো কার্যকর করা হয়েছে, আবার অনেক ক্ষেত্রেই অকার্যকর করে রাখা হয়েছে,’ বলেন তিনি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে, দেড় বছরে পুরো বিষয়টিকে নতুন করে গুছিয়ে ফেলা খুব একটা সহজ কাজ নয়। সে কারণেই অনেকের প্রশ্ন, এই প্রশাসন দিয়ে আমরা কি সত্যিকারের সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করতে পারি? এই প্রশ্নের পেছনে যুক্তি আছে। কারণ, পতিত সরকারের অ্যাজেন্ট বা সহযোগীরা প্রশাসন ও আইন সংস্থায় নেই— এটা বলা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আবার যাদের দীর্ঘদিন বঞ্চিত করা হয়েছে, তাদের অবস্থান ফিরে পাওয়ার মধ্যেও দলীয়করণ প্রতিস্থাপিত হয়েছে। সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। পাশাপাশি আছে আরেকটি শক্তি— যারা চেষ্টা করছে নিরপেক্ষ থাকতে, পেশাগত জীবনে সবসময় পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে।’

তার মতে, এই তিন ধরনের শক্তির টানাপোড়েনের মধ্যেই প্রশাসন এগোচ্ছে এবং তারা নিজেদের ভূমিকা পালন করবে। তবে এটিকে রাতারাতি পরিবর্তন করা কিংবা পুরো প্রশাসন নতুন করে সাজানো সম্ভব নয়।

‘আমাদের সময় দিতে হবে, যাতে একটি স্থিতিশীলতা তৈরি হয় এবং নতুন ধরনের পেশাদারিত্ব গড়ে ওঠে,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের ‘অবহিত করার’ যে বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে, সেটি হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনসংক্রান্ত আইন ও নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হলেও প্রত্যাশিত সংস্কার এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষ করে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তা ঝুঁকি তৈরি করছে।’

তিনি বলেন, ‘এ বাধা অপসারণ করা দরকার। তবে সেটি না হলেও সাংবাদিকদের নিজেদের অবস্থান থেকে, আইন ও নীতিমালার মধ্যে থেকে, সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’