হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে জাপানি কনসোর্টিয়াম অস্বীকৃতি জানালে, সরকার অন্য আন্তর্জাতিক অপারেটরের সন্ধান করবে। এই তথ্য জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
শনিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘জাপানি কনসোর্টিয়ামের সাথে আমাদের আলোচনাগুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগে যেসব বিষয় অস্পষ্ট ছিল, সেগুলোও এবার স্পষ্ট করেছি। আশা করি, চলতি সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাছ থেকে উত্তর পাব। এখন বল তাদের কোর্টে, তাই আমরা অপেক্ষা করছি।’
উপদেষ্টা আরো জানান, যদি সুমিতোমো সম্মতি না দেয়, তবে অবশ্যই অন্য কোনো অপারেটরকে কাছে দায়িত্ব দিতে হবে। সেটি হতে পারে জাপান বা অন্য কোনো দেশ। কারণ, আমি দেশের জন্য কাজ করি। তবে, এই পর্যন্ত অন্য কোনো দেশের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাননি বলেও স্বীকার করেন তিনি।
বশিরউদ্দীন বলেন, লেনদেন পরামর্শক হিসেবে কাজ করা আন্তর্জাতিক ফাইনান্স করপোরেশন (আইএফসি) আগেই একটি রূপরেখা দিয়েছিল এবং বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সব বিষয়ে স্বচ্ছ সাড়া দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা চাই টার্মিনালটি একজন দক্ষ আন্তর্জাতিক পরিচালকের পরিচালিত হোক, যাতে সেবার মান ও ব্যবস্থাপনা উন্নত হয়।
বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) ও জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে তিন দিনের চূড়ান্ত আলোচনা আগামী ৭ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সিএএবি’র সদর দফতরে প্রথম দু’দিনের অধিবেশনে সংস্থার চেয়ারম্যান সভাপতিত্ব করেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তৃতীয় টার্মিনালটি ২১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকায় প্রধানত জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর তহবিলে নির্মিত। বর্তমানে এটি ‘পরিচালনার জন্য প্রস্তুত।’
গত আগস্টে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরীক্ষামূলকভাবে টার্মিনালটি ব্যবহার করেছিল। কিন্তু জাপানি কনসোর্টিয়ামের সাথে সমঝোতার অভাবে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।
সুমিতোমো করপোরেশন নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামে জাপান এয়ারপোর্ট টার্মিনাল কোম্পানি, নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট কর্পোরেশন, সোজিতজ করপোরেশন এবং জাপানি সরকারি সংস্থা রয়েছে। এদের মূলত পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি দেয়া হয়।
এই চুক্তি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জাইকা’র অর্থায়নে নির্মিত প্রকল্পের অংশ হিসেবে করা হয়।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দুই বছরের জন্য নতুন টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে।
সূত্র জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের কারণে কনসোর্টিয়ামের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তারা এখন টার্মিনালের আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ ও আয়ের ভাগ চাচ্ছে।
বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ (সিএএবি)-এর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, সরকারের সাথে কনসোর্টিয়ামের আলোচনায় মূল অমীমাংসিত বিষয় হলো রাজস্ব ভাগাভাগি। সরকার কত ভাগ পাবে এবং তারা কত ভাগ নেবে তা নিয়েই দ্বন্দ্ব চলছে।
টার্মিনালটি অক্টোবর ২০২৩ সালে ‘সফট ওপেনিং’ এর মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়। এটি শাহজালাল বিমানবন্দরের যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮ মিলিয়ন থেকে ২৪ মিলিয়নে বাড়াবে এবং কার্গো পরিচালনাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
টার্মিনালটি ঢাকা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং হজ ক্যাম্পের সাথে সংযুক্ত। এটি ভবিষ্যতের বিমান খাতের উন্নয়ণে কেন্দ্রীয় ‘হাব’ হিসেবে গড়ে উঠবে।
যদিও বিমান বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, অপারেটর চূড়ান্ত করতে দেরি হলে খরচ বাড়তে পারে। কারণ টার্মিনালে বাসানো যন্ত্রপাতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে প্রকল্পের কৌশলগত সুবিধা ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পটি ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে নির্মিত হয়েছে। এটির ফ্লোরস্পেস ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার।
উন্নতমানের এই স্থাপনায় থাকবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি আগমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং ৩টি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক।