প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়ার হাত ধরেই এলজিইডিতে প্রাণস্পন্দন ফিরতে শুরু করেছে। তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। তার এ অর্জিত অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে যেতে চান অনন্য এক উচ্চতায়।
দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এলজিইডির কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিক্ল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নয়া দিগন্ত অনলাইনের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসান।
প্রশ্ন : এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে আপনি কবে এবং কীভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন? যাত্রাটা কেমন ছিল?
আব্দুর রশীদ মিয়া : এলজিইডি সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসিন, প্রধান প্রকৌশলী আলি আখতার হোসেন এবং প্রধান প্রকৌশলী গোপাল চন্দ্র দেবনাথ ( রুটিন ওয়ার্ক) অবসরে যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি একজন প্রধান প্রকৌশলীর শূণ্যতায় ভুগছিলো। এ সময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে আমার নাম প্রস্তাব করা হয়।
আমি জাপানের বহুজাতিক কোম্পানি মিতসুবিসিতে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি। পরবর্তীতে ১৯৮৯-এ বাংলাদেশ কর্মকমিশন (পিএসসি)-এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো (এলজিইবি)-তে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করি।
আমি ২০০৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে এলজিইডি কুষ্টিয়া জেলায় যোগাদান করি। ২০০৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে, পরে সিরাজগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেছি।
২০০৮ সালে আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। পরে সিরাজগঞ্জ জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবেও কর্মরত ছিলাম।
এছাড়া এলজিইডিতে সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি।
ঢাকায় পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য প্রথম আবাসন প্রকল্প ‘ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীনিবাস নির্মাণ শীর্ষক’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছি।
চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাকে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থেকে (মানবসম্পদ উন্নয়ন, মাননিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ) এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রশ্ন : আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে কী ধরনের পরিবর্তন ও অগ্রগতি এসেছে?
আব্দুর রশীদ মিয়া : আমি এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এলজিইডির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দেই। গতিশীলতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করছি। আমি যোগদানের পর এলজিইডির বিভিন্ন কার্যক্রম তদারকি করছি এবং কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করে বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি। এতে করে প্রাণস্পন্দন ফিরতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
প্রশ্ন : আপনি কোথায় কোথায় কর্মরত ছিলেন?
আব্দুর রশীদ মিয়া : আমি এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর কর্মকাণ্ডের মধ্যে মূলত উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার এবং সচিবের পরামর্শে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সাথে আস্থাবৃদ্ধিতে সফলতার সাথে কাজ করেছি। বিগত সময়ে আমি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন)-এ দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালন করি। আমি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে মানবসম্পদ, পরিবেশ ও জেন্ডার ইউনিটেও কর্মরত ছিলাম।
প্রশ্ন : এ সময় আপনার উল্লেখযোগ্য কাজগুলো কী কী?
আব্দুর রশীদ মিয়া : মানব সম্পদ বিভাগে দায়িত্বপালনকালে প্রতিষ্ঠানের জনবল ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন এবং কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে জনবল নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ প্রদান, কর্মীর দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং একটি স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরি।
এছাড়াও, মানব সম্পদ বিভাগ কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দেখাশোনা করা এবং তাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত উন্নয়ন সহায়তা করেছি। গ্রামীণ ও শহর অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে কাজ করি।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মানবসম্পদ উন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ ইউনিট) হিসেবে আমি প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (পিইডিপি-৪) এর দায়িত্ব পালন করেছি। মানব সম্পদ বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে জনবল ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি এবং একটি স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরিতে কাজ করেছি। নারীর ক্ষমতায়নেও ব্যাপক ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন : এলজিইডি কোন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে?
আব্দুর রশীদ মিয়া : এলজিইডি একটি বিকেন্দ্রীকৃত সংস্থা, যার মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম বেশি। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন করে থাকে। এলজিইডি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : আপনি এলজিইডির ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন?
আব্দুর রশীদ মিয়া : আমি এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বৃহৎ স্বার্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন, দক্ষ মানব সম্পদ গঠনে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চেষ্টা করবো।