ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গড়ে ওঠা পশুর হাটে কোরবানির জন্য সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাঝারি আকারের গরুর। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গতবারের তুলনায় এবার বড় গরুর চাহিদা অনেক কম।
আজ শুক্রবার সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি কোরবানির হাটে দেখা গেছে, যেসব গরুর দাম ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ওই সব গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
মেরুল বাড্ডা অস্থায়ী গরুর হাটে এবারই প্রথম গরু নিয়ে এসেছেন আলম ব্যাপারী। এর আগে আফতাবনগর হাটে এলেও এবার আফতাবনগরে হাট না বসায় ছয়টি গরু নিয়ে এসেছেন মেরুল বাড্ডা।
তিনি বলেন, ‘আমার ছয় গরুর মধ্যে চারটিই মাঝারি সাইজের। চারটি গরুই এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৬২ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি দুই গরুর দাম প্রতিটি পাঁচ লাখ করে বলছি। বড় সাইজের এই দুইটা গরুর দাম সর্বোচ্চ দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এর বেশি কেউ বলে নাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘গতবার পাঁচ লাখ টাকার গরু কোরবানির দুই দিন আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। অহরহ ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার গরু আফতাবনগরে বিক্রি হয়েছে। এবার বড় গরু কেনার লোকই দেখলাম না। দাম কেউ দুই লাখের উপরে বলতে চায় না।’
মানিকগঞ্জ থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটে চারটি গরু নিয়ে এসেছেন মনির হোসেন। তিনটি গরু বিক্রি হলেও একটি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘অবিক্রিত গরুটি পালতেই সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। সাড়ে সাত লাখ টাকা দাম চাচ্ছি। পাঁচ লাখ হলেই ছেড়ে দিবো। কিন্তু ক্রেতা পাচ্ছি না। এত বড় গরুর দাম মানুষ সর্বোচ্চ বলে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।’
একই হাটের আরেক গরু ব্যবসায়ী লেদু হাওলাদার বলেন, ‘আগের বার ঈদে বড় গরু বিক্রি করতে না পেরে লোকসান হয়েছিল। এবার এসেছি মাঝারি আকারের গরু নিয়ে। গরু ভালোই বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারাও দাম দিচ্ছেন ভালো।’
ক্রেতারা কেন বড় গরু কিনছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে গরু কিনতে আসা খরিদ্দার আবুল কালাম বলেন, ‘বাস্তবিক অর্থে যারা ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে গরু কেনেন তারা হয় বড় ব্যবসায়ী, নয়তো অবৈধ টাকার মালিক। অনেক উচ্চবিত্তও ২০ লাখ টাকার গরু কেনেন না। তারা দরকার হলে ৫ লাখ টাকায় চারটি গরু কেনেন। ২০ লাখ টাকার গরুতে কোরবানির উদ্দেশ্যের চেয়ে শো-অফের (লোক দেখানো) উদ্দেশ্যই মুখ্য।’
আরেক ক্রেতা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আগের কোরবানির ঈদে সাদিক অ্যাগ্রোর উচ্চবংশীয় গরু কিংবা মতিউরের ছাগলকাণ্ড অনেকের জন্য বড় শিক্ষা। মানুষ এখন সচেতন হয়েছেন। কেউ ২০ লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনলে সবার আগে চোখ পড়ে তার আয়ের উৎসে। আর সেখানেই আমাদের দেশের মানুষের বড় ভয়। কারণ সৎ পথে টাকা আয় করে আর যাহোক কারো ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে গরু কেনার ইচ্ছা জাগে না।’
অন্যদিকে, ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার ৬০ হাজার টাকার নিচে ছোট সাইজের কোনো গরু পাওয়াই যাচ্ছে না। বাজার ঘুরে ক্রেতাদের অভিযোগের সত্যতাও মিলে। আনুপাতিক হারে ছোট আকারের গরুও বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায়।
এমন দামের কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, গরুর আকার ছোট হলেও লালন-পালন ও পরিবহনে যে ব্যয় হয়েছে তাতে ছোট গরুর দামও বেশি পড়ে যায়। ন্যূনতম লাভে বিক্রি করতে চাইলেও গরুর দাম দাঁড়ায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়।
এবার পশুর হাটে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ছাগল। বেশিভাগ ছাগলের দাম ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে। জায়গাভেদে ছাগলের দামের তারতম্য হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে হাটের বদলে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছাগল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা, মিলছে তুলনামূলক সস্তা দামে।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গাইবান্ধা থেকে ২০টি ছাগল নিয়ে এসেছেন সফেদ আলি। তিনি বলেন, ’১০ থেকে ১২ কেজি গোশত হবে এমন সাইজের ছাগলের দাম ১৫ হাজার টাকা চাচ্ছি। ২০ কেজির ওপরে গোশত হবে এমন ছাগল ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।’
এবার ছাগলের ক্রেতা ভালো- প্রসঙ্গ তুলে আরেক ছাগল বিক্রেতা মইজউদ্দিন বলেন, ‘এবার গরুর থেকে মানুষ ছাগল বেশি কিনছে। যারা আসছেন, অনেকেই দু‘টা করে ছাগল কিনে বাড়ি ফিরছেন।’
ক্রেতাদের কেন ছাগলে আগ্রহ বেশি- খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কোরবানি দিতে হবে এবং সাশ্রয়ী দামে পাওয়ায় ছোট গরুর বদলে অনেকেই ছাগল বেছে নিচ্ছেন।
এমনই একজন হাজী আলি, তিনি শাহজাদপুরের বাসিন্দা। এবার তিনটি ছাগল কিনেছেন ভাটারা থেকে। গতবার গরু কোরবানি দিলেও এবার ছাগল দিচ্ছেন তিনি।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায় যে গরু পাওয়া যায় তার অবস্থা বেহাল একেবারেই। আমরা তিন ভাই একসাথে কোরবানি দিই। দামে-দরে গরু পছন্দ না হওয়ায় ৪৫ হাজার টাকায় এই তিনটা ছাগল কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, এবার রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ২১টি অনুমোদিত পশুর হাট বসেছে। বড় হাটগুলোতে গরু-ছাগলের পাশাপাশি উঠেছে মহিষ, ভেড়া ও দুম্বাও। যদিও কোরবানির জন্য এসব প্রাণীর চাহিদা একেবারেই কম। সূত্র : ইউএনবি