একটা বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রেরণা নিয়ে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে কাওমি অঙ্গণের মাকছুদ। মানুষের অধিকার নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার লড়াই করেছেন তিনি। এই অন্যায়, বৈষম্য, জুলুম সহ্য করে দেশে মাথানত করে বেঁচে থাকার জন্য জন্ম নেননি। তাই নিজের স্বপ্ন, বিশ্বাস আর দায়িত্ববোধ থেকেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছিলেন এই সাহসী সৈনিক।
এখন নতুন বাংলাদেশে আবার চারপাশের অন্যায়-অবিচার, বৈষম্য, চাঁদাবাজি ধর্ষণ, আর শোষণের বিরুদ্ধে কীভাবে আরো সুন্দরভাবে, সংগঠিত হয়ে দাঁড়ানো যায়, কীভাবে জুলাইকে রক্ষা করা যায় সে ভাবনাতেই দিন পার করছেন তিনি।
এর সাথে পড়াশোনা, জুলাই পরবর্তী বিভিন্ন এক্টিভিজম দেশের স্বার্থে কোনো ডাক এলে আবারো স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করবেন। আন্দোলনের পর ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরি করার কাজে মনোযোগ দিয়েছেন। দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কাজ করছেন জুলাই নিয়ে।
বলছিলাম বৈষম্যবিরোধী কওমি ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মাকছুদুর রহমান জুনায়েদের কথা। তিনি দাওরায়ে হাদিসে (মাস্টার্স) পড়ছেন জামিয়াতুল আনোয়ার যাত্রাবাড়ী ঢাকায়। জুলাইয়ের আগুন ঝরা দিনে যাত্রাবাড়ির রণাঙ্গনে ছিলেন তিনি। ইট-পাটকেলের আঘাতে পড়ে যাওয়া আবার ঘুরে দাঁড়ানো কিংবা পুলিশের টিয়ারশেল উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সেই ভয়াল দিনের কথা জানালেন নয়া দিগন্ত অনলাইনের মুখোমুখি এক সাক্ষাৎকারে।
নয়া দিগন্ত : জুলাই আন্দোলন কীভাবে শুরু করেছিলেন?
মাকছুদ : জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকেই অনলাইনে আমার এক্টিভিজম ছিল অনেক বেশি। রাজপথে অংশ নিই ১১ জুলাই। শাহবাগ ব্লকেড করা হয়। তখন আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সেখানে যাই, আমার উদ্দেশ্য ছিল ন্যায্য দাবিতে সমর্থ করা।
ঠিক ওই সময় আমি একটা স্ট্যাটাস দেই—‘কোটা কী জিনিস বুঝি না, আমরা মেধার মূল্যায়ন চাই। অন্যথায় মানচিত্র থেকে স্বৈরাচার বিলুপ্ত হবে, ইনশাআল্লাহ।”
এই স্ট্যাটাসের পর থেকেই প্রচুর হুমকি আসতে থাকে। আমি আন্দোলনের মাঠে পোড় খাওয়া লোক। এসব কেয়ার করিনি, এর আগেও এমন অনেক হুমকি-ধামকি আমি ফেস করেছি।
নয় দিগন্ত : তখন কী ভাবছিলেন, যাত্রাবাড়ি এলাকায় শুরু করেছিলেন?
মাকছুদ : প্রথম যখন শাহবাগে যাই এরপর থেকে আমার মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা কাজ করতে থাকে। কীভাবে আন্দোলন বেগবান করা যায় এ নিয়ে ভাবছিলাম। এরপর ১৫ জুলাইয়ে ইউআইইউ, নর্থ সাউথ এই দিকের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ছিল। আমার কিছু বন্ধু, যারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তারাও অংশ নেয়। আমি ব্যক্তিগত কাজে ওই দিকে গেলে, তাদের সাথে কথা হয় এবং পরে ওখানকার ছাত্রদের সাথে আমিও আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেই। আমি মাদরসাশিক্ষার্থী ছিলাম বলে তারা আমাকে পেয়ে অনেক খুশি হয়।
বিকেলের দিকে আমি আমার মাদরাসার বন্ধুদের কল দিয়ে বললাম, এই আন্দোলনে আরো গভীরভাবে থাকতে হবে, কারণ সরকার যেভাবে নৃশংসতা শুরু করেছে, সেটা আর সহ্য করা যায় না। এরপর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসি। রাতে আমাদের মাদরাসার অনেক বন্ধু একত্রিত হলাম।
বলে রাখি, ওই রাতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনেরও একটি মিছিল ছিল। ওরা যখন পৌঁছায়, তখন এদের মিছিল শুরু হয়। আমি তখন এখানে চলে আসি বড় একটা টিম হয়ে সেখানে অংশ নেই।
পরে আমরা পরামর্শ করি, এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে নয়, একটি সংগঠিত টিম করতে হবে। সেই আলোচনা থেকেই একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হয়, নাম দেয়া হয় (বৈষম্যবিরোধী কওমী ছাত্র আন্দোলন) এটা প্রাথমিক কাজ ছিলো অনলাইনে যোগাযোগ বহাল রাখা এবং একত্রে অংশগ্রহণের দিকনির্দেশনা দেয়া, এর পর ২ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী কওমি ছাত্র আন্দোলনের প্রথম দৃশ্যমান বিক্ষোভ মিছিল করি। সেদিন ব্যাপকভাবে সাড়া ফেললে রাতে ওই টিম নিয়ে অনলাইনে পেজের মাধ্যমে সরাসরি সারা দেশের বিভিন্ন মাদরাসারশিক্ষার্থীদের সাথে কানেক্ট হইতে আত্মপ্রকাশ করি। ৪ তারিখে পেজ ইভেন্টের মাধ্যমে ঘোষণা দেই সারাদেশের মাদরাসাগুলো মাদরাসার সামনে বিক্ষোভ করার।
সরকারের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এই চিন্তাই আমাদের মনে ছিল। সত্যি বলতে, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল একটাই, জালিমের পতন এবং একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন।
নয়া দিগন্ত : আন্দোলনে যাওয়ার প্রেরণা পেলেন কীভাবে?
মাকছুদ : আসলে কেউ আলাদা করে উৎসাহ দেয়নি। তবে বলতে বাঁধা নেই সম্মিলিতভাবে সকলের প্রকাশ্যে অংশ নেয়া, সমর্থন, এটা অনুপ্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছে। তবে মৌলিকভাবে নিজ তাগিদেই নেমেছিলাম। ভেতর থেকে একটা তীব্র তাড়না কাজ করছিল, আর চুপ থাকা চলে না। এই অন্যায়, বৈষম্য, জুলুমের দেশে মাথা নত করে বেঁচে থাকার জন্য জন্ম হয়নি। তাই নিজের স্বপ্ন, বিশ্বাস আর দায়িত্ববোধ থেকেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছি।

এখানে একটা বিষয় আলাদাভাবে বলে রাখি, আমি ২০২০ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেরও একজন সক্রিয় রাজপথের যোদ্ধা ছিলাম। তখন খুলনায় অবস্থান করতাম, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমি জানতাম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পথটা কেমন। সত্যি বলতে, আমার লক্ষ্য সবসময়ই একটাই, জালিমের পতন আর একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন।
নয়া দিগন্ত : আন্দোলনে আহতদের নিয়ে কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?
মাকছুদ : আহতদের স্মৃতি বলতে গেলে অনেক কিছুই মনে পড়ে। কারণ আমি নিজেই একাধিক আহত সহযোদ্ধাকে (উপস্থিত) ট্রিটমেন্ট দিয়েছি। রক্তাক্ত অবস্থায় টেনে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছি। শুরু দিকের একটি ঘটনা আজো চোখের সামনে ভাসছে।
১৯ জুলাই বিকেলে আমরা কাজলা অবস্থান করছি, রোডগুলো নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ কোনো ধরনের কথা ছাড়াই পুলিশ মুহুর্মুহু শর্টগান, ছররা গুলি আর টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে। চারপাশ ধোঁয়ায় ঢেকে যায়, চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। কোনোরকমে দেয়ালের চিপায় আশ্রয় নিই। ঠিক তখনই সামনে থাকা এক সহযোদ্ধার পিঠ ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ করে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল, আহা। তাকে কাধের উপর হাত দিয়ে কোনোরকমে টেনে এক কোণায় নিয়ে আসি। নিজ হাতে রক্ত মুছি, কাছের একটা ফার্মেসি থেকে কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম এনে আপাতত রক্তক্ষরণ বন্ধের চেষ্টা করি।
কিন্তু অদ্ভুত বিষয়, আমরা এতটাই আন্দোলনের স্পৃহায় উন্মাদ ছিলাম, নিজের ভাইয়ের রক্ত দেখে ভয়ে পিছিয়ে আসিনি। বরং সেই মুহূর্তেই আরো দৃঢ় হয়েছি। আশপাশের সবাই মিলে প্রতিরোধে নেমে পড়ি, ইট সংগ্রহ করে ছুঁড়তে শুরু করি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও যৌথবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
সত্যি বলতে, সেই সময়ের কথা ভাবলে আজো ভেতরটা কেঁপে ওঠে। আমরা খুবই মর্মাহত, কারণ তখনকার অনেক সহযোদ্ধা আজ চোখ হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে, কেউ হারিয়েছে হাত। অথচ যারা এই আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন করে এই দেশকে জাগিয়ে তুলেছিল, স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিল, সেই মানুষগুলোর পর্যাপ্ত চিকিৎসা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। পরতে পরতে গাফিলতি, অবহেলা। এটা আমাদের খুব ব্যথিত করে। আসলে এই যন্ত্রণার ভাষা খুঁজে পাই না। মাঝে মাঝে মনে হয়, আফসোস করারও আর ভাষা নেই।
নয় দিগন্ত : যখন ইন্টারনেট ছিল না ওই সময়ে কী পরিকল্পনা করেছিলেন?
মাকছুদ : আসলে তখন একটা বড় ভয়ের কারণ ছিল বাসায় বাসায় গিয়ে তল্লাশি করাটা। এ নিয়ে অনেক আতঙ্কিত থাকতাম। ওই সময়ে মূল ভরসা ছিল মুখে মুখে খবর নেয়া-দেয়া। সরাসরি যোগাযোগ আর গ্রুপ ভিত্তিক সমন্বয়। কার কোথায় অবস্থান, কখন কোথায় জমায়েত হবে এসব জানাতে আমরা ফোনকল, মেসেজ বা সরাসরি দেখা করেই পরিকল্পনা করতাম।
বিশেষ করে বলে রাখি, আমি বাসা নিয়ে থাকি এজন্য রাতের বেলায় ছোট ছোট টিম করে বা বিভিন্ন বাসায় কে কোথায় থাকে এটা জানা আছে, গিয়ে খোঁজ-খবর নিতাম। আশপাশের মাদরাসার ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতাম, নতুন পরিকল্পনা করতাম। তখনকার দিনের সাহস আর বন্ধুত্বই ছিল সবচেয়ে বড় শক্তি। কেউ কারো অপেক্ষায় থাকেনি, যার যেখানে সম্ভব, সেখান থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছে। একটা কথা সত্য, তখন আন্দোলন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল, আন্দোলন থেমে থাকেনি।
নয়া দিগন্ত : আপনি কীভাবে আহত হলেন?
মাকছুদ : সিরিয়াস আহত হইনি, তবে ১৮ জুলাই প্রতিরোধের সময় এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা কখনো ভুলতে পারব না। সেদিন আমরা কয়েকজন মিলে ড্রেনের মধ্যে ব্যবহার করে এমন গোল সিমেন্টের চাক্কা রাস্তায় এনে ব্যারিকেড দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। ঠিক সেই সময় ছাত্রলীগ হঠাৎ ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। তাদের ছোড়া ইট এসে আমার বাম কাধে আঘাত করে। প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে কোনোরকমে সেই চাক্কার আড়ালে আশ্রয় নিই।
এ অবস্থায় হঠাৎ করে পুলিশ গুলি ছোড়া শুরু করে। সবাই যে যেখানে ছিল সেখান থেকে নিরাপদ আশ্রয় নিতে দৌড়ে যায়। আমি তখন, একা ওখানে আটকে যাই, তখন আমার পেছনে দু’একজন ছাড়া আর কেউ নেই। সেদিন সত্যিই মনে হয়েছিল, হয়তো আর বেঁচে ফিরব না। সবাই আড়াল থেকে চিৎকার করে বলছিল, দৌড় দাও, দৌড় দাও। কিন্তু আমি সেই শক্তি পাচ্ছিলাম না।
আমি মাথা উঁচু করতেই দেখি, সামনে থেকে পুলিশ সরাসরি ফায়ার করছে, কয়েকবার চেষ্টা করেছি উঠে দাঁড়াবার, বার বার গুলি করছে। হঠাৎ এক ফাঁকে যখন গুলি বন্ধ হয়, আমি কোনোরকমে উঠে পাশের রাস্তায় দৌঁড় দেই। তখনই আবার গুলি শুরু করে এ সময় কয়েকটা ছর্রা গুলি আমার উরুর পেছনে এসে লাগে। এরপর কোনোরকমে ভর দিয়ে কাছের এক ফার্মেসিতে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। সেই যন্ত্রণার মাঝেও মনে হয়েছিল, এই ক্ষত তুচ্ছ, কারণ লড়াইটা ছিল নিজেদের ভবিষ্যৎ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর।
নয়া দিগন্ত : আন্দোলনের প্রতিফলন কতটুকু হচ্ছে, তারুণ্যের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
মাকছুদ : যে স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম, তার প্রতিফলন খুব একটা দেখছি না। আমরা চেয়েছিলাম একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক, শোষণমুক্ত বাংলাদেশ যেখানে মানুষ তার অধিকার নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। কিন্তু আজো দেখি, চাঁদাবাজি, নির্বিচারে হত্যা, মানুষের নিরাপত্তা নেই, অন্যায়-অবিচার চলছে আগের মতোই, বরং অনেক ক্ষেত্রে আরো নিষ্ঠুরভাবে এসব হচ্ছে।
সেই সময় ভেবেছিলাম, এই আন্দোলন থেকে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হবে। অথচ আজো সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পথে মানুষকে লড়তে হচ্ছে। আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না, বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে, আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই হুমকি, মামলা, নির্যাতন, পূর্বের মতোই করছে।
তবুও মনে করি, আমরা (তরুণ প্রজন্ম) হারিনি। এই আন্দোলন শুধু সরকার পতনের লড়াই ছিল না, এটা ছিল একটা মানসিক বিপ্লব, মানুষের ভেতরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস জাগিয়ে তোলা। সেই বীজ আজো বেঁচে আছে, বড় হচ্ছে। হয়তো সময় লাগবে, কিন্তু এই স্বপ্ন একদিন পূর্ণ হবেই, ইনশাআল্লাহ।
নয়া দিগন্ত : ওই সময় যাত্রাবড়ির দৃশ্য বা পরিস্থিতি কেমন ছিল?
মাকছুদ : যাত্রাবাড়ী ছিলো যেন এক মৃত্যুপুরী শহর। মৃত্যুর খবর এমন সাধারণ হয়ে গিয়েছিল যেন কেউ মরে গেছে এটা আর বিস্ময়ের কিছু ছিল না। কেউ বলতো, ওখানে একটা মরছে, আরেকজন বলতো, "ওই গলিতে দুইটা পড়ছে।' তখন মনে হতো, বাসায় ফিরতে পারবো না, মৃত্যুটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল।
৫ আগস্টের একটি বিভীষিকাময় ঘটনার কথা বলি। সেদিন পুরো বাংলাদেশ উত্তাল, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে। তবে সকালটা ছিল অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি, কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ঢল নেমেছে। দুপুর তখন ১২টা, কাজলা টোল প্লাজা থেকে খবর আসছে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত নাকি লক্ষাধিক মানুষের অবস্থান।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো টোল প্লাজা পার হতে পারছিলাম না। সেখানে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি, তারা যেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। হাঁটু গেড়ে বসে বারবার টিয়ারশেল ছুঁড়ছে, কখনো গুলি করছে। যোহরের আজান হলে আমরা রাজপথেই নামাজের প্রস্তুতি নেই। মনে একটা আতঙ্কও ছিল, নামাজরত অবস্থায় গুলি করে বসে কিনা। আবার মনে হচ্ছিল, নামাজের মধ্যে যদি শহীদ হই, তাও তো বড় সৌভাগ্য!
নয়া দিগন্ত : এই যে একটা ভয়ের মুহূর্ত, তখন কী পরিকল্পনা করেছিলেন?
মাকছুদ : নামাজ শেষ করে ভাবছিলাম কী করা যায় ঠিক ওই মুহূর্তে জানতে পারলাম শেখ হাসিনা পদত্যাগ করছেন। সেনাপ্রধান ভাষণ দিবেন বিকেল ৩টার দিকে। তখন বাঁধভাঙা আনন্দে ফেটে পড়লাম। কিন্তু অবাক হলাম, পুলিশ পিছু হটছে না, আগের মতোই মারমুখী ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। কি আশ্চর্য!
তখন আমাদের একটা বড় টিম ছিল, আমি সেই টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম। কাছের কলেজ, ভার্সিটির ভাইদের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিলাম গলি পথ দিয়ে মাদরাসা রোডের দিক থেকে পুলিশকে ধাওয়া দিতে হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা গলির মুখে ঢুকলাম। হঠাৎ পুলিশ আমাদের সাথে কথা বলার ভান করলো। তখন আমাদের দু'ভাই হাত উঁচু করে সামনে এগিয়ে গেলো। কিন্তু কথা বলার আগেই ঠাস ঠাস—দুইটা গুলি সোজা তাদের বুক চিরে বেরিয়ে গেল।
এ কোন নৃশংসতা, এই দৃশ্য ভাষায় বোঝানো যাবে না। যিনি দেখেছেন তিনিই জানেন। আমার মুখ থেকে তখন অভিশপ্ত শব্দ বের হতে থাকে। চিৎকার করে তাকবির দিতে থাকি। আমি ধীরে ধীরে লাশের দিকে এগোচ্ছিলাম। কারণ জানতাম, লাশ গুম করে ফেলা হচ্ছিল। আমি সামনে এগোতেই, তখনই একজন পুলিশ আমার দিকে রাইফেল তাক করে। আমি সেটা দেখতে পাইনি। ঠিক তখন, আমার সহযোদ্ধা রবিউল ইসলাম তন্ময় আমাকে বললো, 'ভাই, ভাই, গুলি করলো!'—এই বলে আমার কলার ধরে হ্যাঁচকা টান দিলে আমি মাটিতে পড়ে যাই।
আহা, জালিমের বুলেট আমাকে বাঁচাতে আসা তন্ময় ভাইয়ের মাথা ছিদ্র করে বেরিয়ে গেল। ধপ করে লাশটা কোলে পড়ল। আবার আমার পাশের আরেক ভাইয়ের (ক্যামেরাম্যান) বুকটাও বুলেট লেগে ছিদ্র হয়ে গেল, সেও আমার পাশে নিথর পড়ে রইল। পেছনের সবাই দৌঁড়ে পালিয়ে গেল। আমি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। আমি নিজ হাতে সেই ভাইদের মাথা ধরে রাখতে চাইলাম, কিন্তু রক্তের স্রোতে হাত ভিজে যাচ্ছিল।
আমি তখন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলাম। কোনোভাবে লাশ তুলে নেয়ার চেষ্টা করছি। তখন আশপাশের সহযোদ্ধারা এসে আমাকে ধরে। আমি আবার পুলিশের দিকে যেতে চাইলে চার-পাঁচজন মিলে আমাকে জোর করে আটকে রাখে। তন্ময় আর বুকে গুলিবিদ্ধ আরেক ভাইকে তাড়াতাড়ি ভ্যানে করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ-ঢামেক হাসপাতালে পাঠাই। এরপর কয়েকজনকে বড় মাদরাসায় নেয়া হয়।
মাদরাসার ছাত্ররা তখন গেট থেকে বের হয়নি নামাজে ছিল। নামাজ শেষে আমার রক্তাক্ত জামা নিয়ে স্লোগান শুরু হয়—'লাশের রক্তের বদলা চাই!' আমি আর কয়েকজন মিলে গেট ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেলি। তখন অনেক ছাত্র আমাদের সাথে বেরিয়ে আসে, এরপর আমিসহ কয়েকজন মিলে ঢামেকে যাই, যেহেতু তন্ময়ের ফোন আমাদের কাছে ছিল ওর বাবা কল দিলে আমি বললাম আপনি একটু ঢামেকে যান, এর পর আমরা সেখানে গিয়ে লাশ বুঝে নেই। লাশ নিয়ে বাড়িতে যাই এবং উনার থেকে বিদায় নিয়ে আবার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

এরপর থেকেই শুরু হয় মূলত এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, যার শেষ দৃশ্য আমরা সবাই জানি, পুলিশের অমানবিক হত্যা, এরপর যাত্রাবাড়ী থানা গুড়িয়ে দেয়া, এবং স্বাধীন করা । যার সাক্ষী আমরা সবাই।
নয়া দিগন্ত : ৫ আগস্ট (৩৬ জুলাই) কোন এলাকায় ছিলেন?
মাকছুদ : ৫ আগস্ট (৩৬ জুলাই) সেদিন আমি যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছিলাম। মূলত কাজলা টোল প্লাজা থেকে শুরু করে মাদরাসা রোড, ওই দিকে কাজলা সেতু পর্যন্ত আমরা অবস্থান নেই। ওই দিন সকাল থেকেই সেখানে ছিলাম। সেখান থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছি। দুপুরের পর যাত্রাবাড়ী মাদরাসা ও আশপাশের এলাকা ছিল মূল কেন্দ্রবিন্দু। এরপর মোড়ে সর্বশেষ সেখান থেকেই পুলিশ ও যৌথবাহিনীর নৃশংসতার মুখোমুখি হই, আর সেখান থেকেই রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ শুরু হয়, এর পর সেখান থেকে আমরা একটা মিছিল নিয়ে ঢাবি, দোয়েল চত্বর হয়ে শহিদ মিনারের দিকে গেলাম।
নয়া দিগন্ত : জুলাইয়ের পর কেউ আপনার খোঁজ নিয়েছে?
মাকছুদ : জুলাইয়ের পর খুব কম মানুষই আমার খোঁজ নিয়েছে। যারা সত্যিকারের কাছের ছিল, কিছু বন্ধুবান্ধব আর সহযোদ্ধা তারা খোঁজ নিয়েছিল। তবে যারা একসময় বড় বড় কথা বলত, অনেকেই যেন ভুলে গেছে। আমরা যারা মাঠে ছিলাম, তাদের পাশে দাঁড়ানোর মানুষ খুব কমই আছে। অনেক সময় মনে হয়েছে, এই পথটা বড় একাকী। তবু আফসোস নেই, কারণ আমি জানি, আমাদের কাজ মানুষের জন্য, স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য। তৃপ্তি এটুকুই।
নয়া দিগন্ত : গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের প্রাপ্তি নিয়ে যদি কিছু বলেন।
মাকছুদ : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রাপ্তি বলতে চেয়েছিলাম—বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত হোক এমন একটি দেশ হিসেবে, যেখানে রাসূল সা:-এর দেখানো ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও মানবিকতার আদর্শের প্রতিফলন থাকবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, বরং আরো ইসলাম বিদ্বেষী নানা ধরনের কর্মকাণ্ড চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে, বাংলাদেশের মানুষের বোধ বিশ্বাসকে উপেক্ষা করে পশ্চিমা, সংস্কৃতি সুকৌশলে পুশ করা হচ্ছে, এটা লজ্জার বিষয়, অনেক ক্ষেত্রে দেশের ভাবমূর্তি আজো কলুষিত হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বেচ্ছাচারী মনভাবে অন্যায়-অবিচার, জুলুম নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে বহু মানুষ আজো বাংলাদেশকে শোষণ আর নির্যাতনের মাঠ বলেই দেখে।
তবুও আমরা আশাবাদী। কারণ আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশ যুলুমের পাপড়ি ছিঁড়ে একদিন ন্যায়ের পথে ফিরে আসবে। আল্লাহ্ যখন চাইবেন, তখনই এই মাটি হবে আল্লাহভীরু, ইনসাফপ্রিয় মানুষের ভূমি। বাংলাদেশ শুধু মানচিত্রে নয়, আদর্শেও হবে বিশুদ্ধ, ইসলামী মূল্যবোধে গড়া একটি দেশ—এটাই আমাদের স্বপ্ন ও দোয়া। 'সাহায্য তো কেবলমাত্র আল্লাহ্র কাছ থেকেই আসে।'
এমন একটি বাংলাদেশ চিন্তা করেছিলাম—যেখানে ছাত্র-জনতা আর কোনোদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রক্ত ঝরাবে না, বরং রাষ্ট্র নিজেই মজলুমের পাশে দাঁড়াবে, জালিমের শাস্তি নিশ্চিত করবে। যেখানে সত্য কথা বলার কারণে কেউ গুম, খুন, নির্যাতনের শিকার হবে না।
একটি নৈতিকতা ও ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ আল্লাহ্র ভয়ে অন্যায় থেকে বিরত থাকবে, রাষ্ট্রের নেতৃত্ব ঈমানদার ও আমানতদারদের হাতে থাকবে। যেখানে দুনিয়ার স্বার্থ নয়, আখিরাতের নাজাতকে সামনে রেখে ন্যায় ও সদাচারের ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হবে।
নয়া দিগন্ত : জুলাইয়ের এক বছর পার হলো এখন কী মনে হয়?
মাকছুদ : জুলাইয়ের সেই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু সেই দিনের স্মৃতি এখনো মনে জীবন্ত। মনে হয় এই এক বছর যেন শত বছরের মতো দীর্ঘ ও ভারী। আমরা যারা রাস্তায় ছিলাম, চোখের সামনে শহীদের রক্ত দেখেছি, আহত ভাইদের আহাজারি শুনেছি, তাদের হৃদয়ের ক্ষত আজো শুকায়নি।
আমার অনুভূতি দ্বিমুখী—একদিকে দুঃখ, হতাশা আর কষ্ট। কারণ আজো সেই রক্তের দামে কাঙ্ক্ষিত ইনসাফ, ন্যায়, পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। অনেক সহযোদ্ধা আজ পঙ্গু, কেউ চোখ হারিয়েছে, কেউ পরিবার-সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। অথচ যারা এই দেশে নতুন ইতিহাস রচনা করেছিল, তাদের খবর রাখার মতো কেউ নেই।
অন্যদিকে, আমার অন্তরে শোকের মাঝেও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাওয়াক্কুল বেড়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি, যুলুমের অবসান একদিন হবেই। আমরা হয়তো সেই দিনের দেখা পাবো, নাও পেতে পারি, কিন্তু এই সংগ্রাম আল্লাহর কাছে বৃথা যাবে না। এই এক বছরে আমি বুঝেছি— এই পথ শুধু রাজপথের লড়াই নয়, এটা আত্মা, নফস আর ঈমানের পরীক্ষা।
দেশে যদি আবার কেউ জালিম হয় তবে তার পতন হবেই, আর সত্য ও ন্যায়ের বিজয় একদিন অবশ্যই আসবে, ইনশাআল্লাহ।
নয়া দিগন্ত : জুলাইয়ের এখন কীভাবে ভূমিকা রাখছেন?
মাকছুদ : জুলাই আন্দোলনের পর আমি থেমে থাকিনি। শুধু প্রতিবাদ করে বসে থাকাই আমার কাজ ছিল না—আমি বিশ্বাস করি, দেশের জন্য কাজ করতে হলে সবক্ষেত্রে সক্রিয় থাকতে হয়। তাই আন্দোলনের পরবর্তী সময় যখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবনতি ছিলো তখন আমি রাজপথের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মতো দায়িত্বশীল কাজেও অংশ নিয়েছি, যখন কোথাও বিশৃঙ্খলা তৈরি হতো, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, বিশেষ করে যাত্রাবাড়ীতে ছিনতাই যেন না হয় এজন্য দারুণভাবে কাজ করেছি, এমনকি কয়েকজনকে ধরে সেনাবাহিনী হাতে সোপর্দ করেছি।

এর পর ফেনীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যখন বন্যায় মানুষ মানবেতর অবস্থায় ছিল, আমি তখন বিজয়-২৪ নামে সামাজিক খুলি এই সংগঠনের মাধ্যমে সরাসরি সেখানে উপস্থিত হয়ে ত্রাণ, সহায়তা, প্রদান করি, সাহস দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।
নয়া দিগন্ত : আন্দোলনে নেতৃত্ব ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আপনার বার্তা কী?
মাকছুদ : আহত আন্দোলনকারীদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে, ওয়ারিয়র্স ওফ জুলাই নামে সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে কখনো হাসপাতাল, কখনো তাদের পরিবারের কাছে, কখনো মিডিয়ার কাছে ছুটেছি যাতে ভালো চিকিৎসা নিয়ে আওয়াজ তোলা যায়। কেউ যেন অবহেলিত না হয়, সেই দায়িত্ববোধ থেকে নানা রকম এক্টিভিজম চালিয়ে গেছি।
এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে আমি সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছি। আমার প্লাটফর্ম থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছি অন্যায়, অবিচার আর জুলুমের এই শক্তিকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে পাঠাতে আমি আমার শক্তি, মেধা, সাহস দিয়ে মাঠে ছিলাম, আছি, ইনশাআল্লাহ থাকব।
এখনো নিয়মিত বিভিন্ন মিটিং, মিছিল, সভা-সেমিনারে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রকে বারবার কঠোর অবস্থানে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বারবার বলছি, বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য দয়া-নরম কথা নয়, এখন কঠোর সিদ্ধান্ত দরকার। ন্যায়বিচার, ইনসাফ, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে শিকড়ে আঘাত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
আমি বিশ্বাস করি, এই লড়াই শুধু রাজনৈতিক না, এটা নৈতিক, আদর্শিক ও মানবিক দায়িত্ব। তাই রাজপথ, অনলাইন, সংগঠন—সব জায়গায় আমার ভূমিকা অব্যাহত আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
নয়া দিগন্ত : জুলাইকে জাগ্রত রাখতে প্রয়োজন হলে আবারো আন্দোলনে যাবেন?
মাকছুদ : নিঃসন্দেহে। আবারো যদি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, কিংবা জনগণের ন্যায়বিচারের প্রশ্নে বিপ্লবের ডাক আসে, আমি প্রথম সারিতে থাকব, ইনশাআল্লাহ।
এটা শুধু আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং ঈমান, আত্মমর্যাদা, দেশপ্রেম ও মানবিক দায়িত্ব থেকে আমার অঙ্গীকার। কারণ আমি বিশ্বাস করি, জালিমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, মজলুমের পাশে থাকা। এটাই মুসলিমের পরিচয়। এই জমিনের হক, এই জাতির রক্ত, এই দেশের ভবিষ্যৎ কোনো স্বার্থান্ধ গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হতে পারে না।
আমরা যারা জুলাই আন্দোলন দেখেছি, যুলুম-নিপীড়ন পেরিয়ে এসেছি, শহীদের রক্ত দেখেছি, তারা কখনো নিরপেক্ষ থাকতে পারি না। আমার সংগ্রাম চলবে যতক্ষণ না এই দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হয়, যতক্ষণ না মজলুমের কান্না থামে।
আমি বিশ্বাস করি, আবার যদি ডাক আসে, এই জাতি আবারো প্রমাণ করবে আমরা হার মানিনি, আমরা মাথা নত করিনি। আমি সেই ময়দানে আছি, থাকব, ইনশাআল্লাহ। 'তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যতক্ষণ না পৃথিবী থেকে ফিতনা দূর হয় এবং দ্বীন কেবল আল্লাহর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়।' (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৯৩)