সংবাদ সম্মেলনে নিরাপত্তা উপদেষ্টা

করিডোর নিয়ে কারো সাথে কথা হয়নি, হবেও না

আমরা কারো চাপের মুখে নেই। কেউ চাপ দিচ্ছে না।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান |ইন্টারনেট

অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ‘করিডোর’ নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করেনি। কিন্তু বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রাণ সরবরাহের একটি ‘চ্যানেল’ তৈরির জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাব বাংলাদেশ বিবেচনা করছে।

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিকে একটি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সেই সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন তিনি।

খলিলুর রহমান বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘের যে কার্যক্রম মিয়ানমারে চলছে, সেটা রাখাইনে আর চলা সম্ভব না। কারণ যুদ্ধাবস্থার কারণে মানবিক ত্রাণ রাখাইনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত মার্চ মাসে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন, রাখাইনের ত্রাণ সাহায্য দিতে পারি কি না। আমরা বিষয়টা বিবেচনা করছি। কিন্তু এতে বেশ কিছু আবশ্যকতা আছে।’

তিনি জানান, জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে আরাকান আর্মিকে জানানো হয়েছে, এই সাহায্য বা সহায়তা প্রাপ্তি বা বিতরণের ব্যাপারে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

‘আর আমাদের পক্ষ থেকে শঙ্কা হচ্ছে, আরাকানের যে নতুন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তামূলক প্রশাসন তৈরি হয়েছে, সেখানে আমরা রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের চিহ্ন দেখছি না। আমরা আরাকান আর্মিকে সরাসরি বলেছি, আমরা কোনোরকম অ্যাথনিক ক্লিনজিং (জাতিগত নির্মূল অভিযান) সহ্য করব না। তাদের বলেছি, তারা যদি শুধু রাখাইনদের নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করতে চায়, তাহলে তারা হবে একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মনে করে এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা। এই কাজ করার সবগুলো অপশন আমাদের টেবিলে থাকবে। আমাদের সকল কূটনৈতিক ও অন্যান্য প্রচেষ্টা দিয়ে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। আমরা এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাই।’

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশে একটি করিডোর দেয়ার যে গুজব তৈরি হয়েছে, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিচ্ছি, করিডোর নিয়ে আমাদের সাথে কারো কোনো কথা হয়নি এবং কারো সাথে কোনো কথা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে করিডোর দিচ্ছি না। আমরা যেটা করছি, যেহেতু আরাকানে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা, এইড উপকরণ অন্য কোনো সাপ্লাই রুট দিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসঙ্ঘ আমাদের বলল, কিছুটা দূরে তো বর্ডার। আপনার এইটুকু আমাদের সাহায্য করবেন, যাতে আমরা ওপারে নিয়ে যেতে পারি। জাতিসঙ্ঘ তার বিভিন্ন সহযোগীদের মাধ্যমে রাখাইনের ভেতরে যেসব চ্যানেল আছে, সেটা ব্যবহার করে রাখাইনের জনগণের কাছে মানবিক সাহায্য পৌছে দেবেন।’

খলিলুর রহমান বলেন, ‘আরাকানের যে অবস্থা, তাতে করিডোরের কোনো প্রয়োজন নেই। করিডোর সৃষ্টি করে লোকজনের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কোনো প্রয়োজনীয়তা এখন নেই। যেটা প্রয়োজন আছে, সেটা হলো ত্রাণ সরবরাহ করা।’

‘এটা করতে পারলে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে এবং সেই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে পারব। আরাকানের অবস্থা যতদিন অস্থিতিশীল থাকবে, ততদিন আমরা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলতে পারবে না। আর প্রত্যাবাসনের কথা বলতে না পারলে প্রত্যাবাসন কৌশলের কথাও বলতে পারব না।’

রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার পরে ব্যবস্থাপনা কিভাবে হবে, এই প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘পুরো কন্ট্রোল থাকবে জাতিসঙ্ঘের, ওপারে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানকার নিরাপত্তা, সবকিছু তাদের দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ব সীমান্ত পর্যন্ত, সেখানে মাদক পাচার হচ্ছে কি না, অন্য কিছু হচ্ছে কি না, সেটা আমরা দেখব। দুই পক্ষ সম্মত হলে, কনফ্লিট কমলেই শুধু আমরা যাব।’

ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ দেয়া হলে কোন রুটে সেটা হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই পক্ষ, সকল পক্ষ যদি রাজি হয়, তাহলে আমরা সবার সাথে বসে সেটা ঠিক করব। এটা কেবলমাত্র সরকারের নয়, সকল অংশীজনের সাথে বসে ঠিক করব। এখনো সেই পর্যায়ে আমরা যাইনি।

করিডোর ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সাথে কোনো মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সাথে কোনো মতপার্থক্য নেই। সেনাপ্রধানের সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা এক সমতলে অবস্থান করছি। এ নিয়ে কোনো ফাঁকফোকর নেই।’

তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়হীনতার সুযোগ নেই আর সেনাবাহিনীর সাথে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমেরিকা কেন, আমরা কারো চাপের মুখে নেই। কেউ চাপ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সবার সাথে কথা বলছি। তাহলে (চাপ) যেটা নেই, সেটা তো আমি অনুভব করতে পারছি না।’