জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এক জায়গায় না এলে কমিশন একাধিক প্রস্তাব সরকারকে দেবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
আজ রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে রাজনৈতিক দলগুলো সাথে বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আয়োজিত সংলাপের চতুর্থ দিনে তিনি এ কথা বলেন।
আলী রীয়াজ বলেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ছয়টি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, এ ছয়টি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি এটাকে একটি জায়গায় আনা যায়। উপস্থিত ৩০টি রাজনৈতিক দল যদি একটি প্রস্তাব দেয়, তাহলে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সানন্দে সেই প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারব। আমরা বলব, সেই একটি প্রস্তাব আছে, এটা বাস্তবায়নের পথ এভাবে আপনারা (অন্তবর্তীকালীন সরকার) বিবেচনা করতে পারেন।
কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, ১৬ সেপ্টেম্বরের আলোচনায় যে সমস্ত বিষয় উঠে এসেছিল, সেগুলোকে আমরা বিশেষজ্ঞদের কাছে অবহিত করেছি। এর ভিত্তিতে তারা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের আগের অবস্থানকে ব্যাখ্যাও করেছেন।
তিনি বলেন, আপনাদের মধ্যে যদি একমত হওয়ার জায়গা তৈরি হয়, তাহলে এটা বাস্তবায়ন করা সহজতর হবে। দ্রুততার সাথে করা সম্ভব হবে। এই সমস্ত বিবেচনায় আজকে সকালে কমিশন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং কমিশনের প্রধানের সাথে বৈঠক করেছে। তিনি সবসময় এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে।
প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াসহ সনদকে সবার গ্রহণযোগ্য করে স্বাক্ষরিত একটি রাজনৈতিক দলিলে পরিণত করা যায় কি না, সে বিষয়ে আমাদের তাগিদ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আজকে আপনাদের কাছে আমরা এসেছি একটি মাত্র কারণে, সেটি হচ্ছে আপনাদের পক্ষ থেকে যদি আরো সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট এবং স্বল্প প্রস্তাব থাকে বাস্তবায়নের, তাহলে আমাদের পক্ষে সেটাকে সমন্বিত করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন উপায় উপস্থাপন করব। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, অবশ্যই ১৫ অক্টোবরের আগে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়ার সাথে আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক ব্যস্ততা আছে। নির্বাচনী প্রস্তুতি আছে। আপনারা বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন, সেগুলো যেন বাধাবিঘ্ন না হয়, সেটা আমরা করতে চাই। তাছাড়া মেয়াদের দিক থেকে ১৫ অক্টোবরই মেয়াদ শেষ হবে। তারও আগে আমরা এটা শেষ করতে চাই।
আলী রীয়াজ বলেছেন, আজকে আমরা প্রত্যাশা করছি, আপনারা সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করবেন। আপনারা যদি দলগত বিবেচনার বাইরে গিয়ে সম্মিলিতভাবে কোনো প্রস্তাব দিতে পারেন, সেটা নিয়ে আমরা আলাপ আলোচনা করব। এর প্রেক্ষাপটে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, যদি আজকে ৩০টি রাজনৈতিক দল এক জায়গায় আসেন, তাহলে আমরা আর বিশেষজ্ঞদের সাথে বসবই না। কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, বিশেষজ্ঞতার সাথে আবার বসার, তাহলে সেটা আমরা বসব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রাণ দিয়ে, তাদের রক্ত দিয়ে আমাদের একটা দায়িত্ব দিয়েছেন। আপনারা তার অংশীদার। ১৬ বছর আপনাদের নেতাকর্মীরা জেল-জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন সহ্য করেছে। আপনাদের কর্মীরা প্রাণ দিয়েছেন। নাগরিকরা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের একটা স্বপ্ন আছে, একটা জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র, যেখানে আমাদের নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত হবে। সেরকম একটি রাষ্ট্রের জায়গায় যাওয়ার জন্য যে সংস্কার, সেই দায়িত্ব আপনাদের ওপর অর্পিত হয়েছে। আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে। এটা দায়িত্ব নয়, এটা আমাদের দায়। সেই দায় আমাদের পালন করতে হবে। কেবলমাত্র সনদ স্বাক্ষর করাই সে দায়ের শেষ নয়। আমাদের সবাইকে মিলে এই প্রচেষ্টা এই রাষ্ট্রের সংস্কার কাঠামোগত সংস্কারের জায়গাটা তৈরি করতে হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, প্রাণের বিনিময়ে আমরা এখানে এসেছি। আমরা যেন বিস্তৃত না হই। দলের চেয়ে সবচেয়ে বড় হচ্ছে, নাগরিকদের অধিকারের প্রশ্ন। নাগরিকদের অবদান, আপনাদের দলের কর্মীদের অবদান, যারা প্রাণ দিয়েছেন, তারা আমাদের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, যারা বেঁচে আছেন, আহত অবস্থায়, তারা আমাদের কাছে প্রত্যাশা করছেন। আসুন, আমরা সবাই মিলে সেই প্রত্যাশায় জায়গাটায় যাতে যেতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. আইয়ুব মিয়া।