বিমান দুর্ঘটনা

চলে গেলেন আরো চার শিক্ষার্থী, মোট মৃত্যু ২৭

মঙ্গলবার রাত সোয়া ৩টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
মাইলস্টোন স্কুলে হতাহতদের উদ্ধার তৎপরতা
মাইলস্টোন স্কুলে হতাহতদের উদ্ধার তৎপরতা |নয়া দিগন্ত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে প্রশিক্ষরত যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আরো চার শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- এরিকসন (১৩), আরিয়ান (১৩), নাজিয়া (১৩) ও সায়ান ইউসুফ (১৪)। এ নিয়ে মর্মান্তিক এ বিমান দুর্ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৭ জনে।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাত সোয়া ৩টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।

যদিও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ২০। এছাড়া পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় আটজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার রাত দেড়টার দিকে এ তথ্য জানায় আইএসপিআর।

এর আগে রাত ৮টার দিকে আইএসপিআরের দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২০। আহত ১৭১ জন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পরে আরো তিনজনের মৃত্যুর খবর আসে। তারা হলেন- অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তানভীর আহমেদ, সপ্তম শ্রেণির আফনান ফাইয়াজ, মাইলস্টোন স্কুলের প্রাইমারি সেকশনের হেড কো-অর্ডিনেটর মাহেরীন চৌধুরী।

বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহত ও নিহতের সংখ্যাও জানায় আইএসপিআর।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়—

১. কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল: আহত ৮ জন, নিহত নেই

২. জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট: আহত ৭০ জন, নিহত ২

৩. ঢাকা মেডিকেল: আহত: ৩, নিহত ১

৪. সিএমএইচ-ঢাকা: আহত ১৭, নিহত ১২

৫. কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটাল: আহত ১, নিহত ২

৬. লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টার, উত্তরা: আহত ১১, নিহত ২

৭. উত্তরা আধুনিক হসপিটাল: আহত ৬০, নিহত ১

৮. উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল: আহত: ১, নিহত নেই।

রাত ৮টার দিকে দেওয়া আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিহতের সংখ্যা ‘দুই’ উল্লেখ করা হয়। যদিও পরবর্তীতে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো সাতজনের মৃত্যুর কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, সেখানে চিকিৎসাধীন মাহেরীন চৌধুরী (৪০) ও আফনান (১৪) মারা গেছেন। রাত দেড়টার দিকে ডা. শাওন বিন রহমান জানান, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আব্দুল্লাহ সামিনও (১৪) মারা গেছেন। তিনি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। অর্থাৎ রাত দেড়টার দিকে আইএসপিআরের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের মৃত্যুর সর্বশেষ তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

রাত সোয়া ৩টার দিকে ডা. শাওন বিন রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আরো চার শিক্ষার্থী মারা গেছেন। এর মধ্যে এরিকসনের শরীরের ১০০ শতাংশ, আরিয়ানের ৮৫ শতাংশ, নাজিয়ার ৯০ শতাংশ এবং সায়ান ইউসুফের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। বর্তমানে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও আইসিইউতে ৪২ জন চিকিৎসাধীন আছেন।’

প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল যাদের বেশিরভাগই হতাহত হন।

বিস্ফোরণের পর চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু শিক্ষার্থী দগ্ধ হয়। স্থানীয়রা ও উদ্ধারকারী দল তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

দুর্ঘটনার পরপর উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। উত্তরাসহ আশপাশের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধারকাজ শুরু হয়। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেয়া হয়।

সোমবার (২১ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিমান ও হতাহতদের উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

তবে বিমান বাহিনী বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ সরানো পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে মোতায়েন ছিল। রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঘটনাস্থল থেকে সব ইউনিট প্রত্যাহার করা হয়।

এ ঘটনায় শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) যৌথ তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।