রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্লট বরাদ্দ বিধিমালা ও নিদেশিকা সংশোধন করে প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও তার আওতাধীন সংস্থাগুলোর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গত এক বছরের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রম ও অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়।
এতে জানানো হয়, মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য, বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য নির্ধারিত বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে এবং একই পরিবারের একাধিক সদস্যের প্লট ও ফ্ল্যাট প্রাপ্তির সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৪ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্লট অথবা ফ্ল্যাট বা স্পেস বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার আলোকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে এই তদন্ত কমিটির কার্যক্রম চলামান রয়েছে।
এতে জানানো হয়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দুদকের সাবেক কমিশনার, সাবেক সচিব, সাবেক জেলা জজ ও প্রভাবশালী সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় বরাদ্দকৃত ১২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় শেরে বাংলা নগরস্থ সাবেক গণভবন কমপ্লেক্স এলাকার ১৭ দশমিক ৪৭ একর জমিসহ ভবন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে রেজিস্ট্রেশন করে হস্তান্তর করেছে। গণপূর্ত অধিদফতর ও স্থাপত্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে জাদুঘরের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন- ২০২৪ এর শহীদ পরিবারদের জন্য স্থায়ী বাসস্থান প্রদানের জন্য ‘৩৬ জুলাই’ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার মিরপুর এলাকায় ৮২০টি এবং কর্মক্ষমতা হারানো জুলাই যোদ্ধা পরিবারের জন্য এক হাজার ৫৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ দু’টি প্রকল্প একনেক কর্তৃক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে রাজধানীর শাহাবাগে একটি এবং জেলা পর্যায়ে আটটি সহ মোট নয়টি জুলাই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৫৫টি জেলা শহরে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পরিকল্পিত নগরায়নের লক্ষ্যে বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৫, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং ময়মনসিংহ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৫’র খসড়া প্রণীত হয়েছে এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এছাড়াও স্থানিক পরিকল্পনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
নিম্ন বেতনভুক্ত সরকারি কর্মচারীদের আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকার আজিমপুরে ৮৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নেয়া জনস্বার্থ বিরোধী পাঁচটি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। এতে সরকারের মোট ৪২৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিশেষ অডিট কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে ২০০৯-২০২৪ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও প্লট অথবা ফ্ল্যাট বরাদ্দ সংক্রান্ত ২৮২টি অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছে এবং এ সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এছাড়াও এই সময়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে বিশেষ অডিট কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে গণপূর্ত অধিদফতরে ১৪ হতে ২০ গ্রেডের ৪৯৪ জন এবং স্থাপত্য অধিদফতরে ৩৫ জন কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অসদাচরণের অভিযোগে গণপূর্ত অধিদফতর ও স্থাপত্য অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এবং সহকারি স্থপতি পদমর্যাদার মোট ১১জন কর্মকর্তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত করেছে। এছাড়াও বহুল আলোচিত রূপপুর গ্রিন সিটি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ২৫জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিগত সরকারের আমলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার কার্যক্রম স্থবির ছিল।
সচিবালয়ের অভ্যন্তরে অফিসের স্থান সঙ্কট নিরসনকল্পে ১৫তলা ও ২০তলা বিশিষ্ট দু’টি ভবন নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও সচিবালয়ের সাততলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরসমূহ দ্রুততার সাথে সংস্কার ও মেরামত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ফ্লোরসমূহে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, দুর্যোগ ও ত্রাণ অধিদফতর, উত্তরা থানা ভবনসহ সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা সংস্কার ও মেরামত করে সংশ্লিষ্ট দফতরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, দফতর বা সংস্থার লীজ প্রদানকৃত প্লট বা ফ্ল্যাট গ্রহীতাদের লিজ পরবর্তী সম্পত্তি হস্তান্তর, নামজারি বা আম-মোক্তারনামাসহ বিভিন্ন সেবায় পূর্বানুমোদন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকায় সৃষ্ট হয়রানি ও ভোগান্তি দূর করার লক্ষ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এ ধরণের পূর্বানুমোদন গ্রহণ প্রথা বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
গণপূর্ত অধিদফতরের কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা আনা, সুষ্ঠু মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সেবার মানোনন্নয়নের লক্ষ্যে অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদনের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও নৈতিকভিত্তি দিয়ে প্রশিক্ষিত করার লক্ষ্যে গণপূর্ত অধিদফতরের সব পর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণ নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদনের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
গহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদফতরের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনাসহ সুষ্ঠুভাবে সরকারী কার্য সম্পাদনের লক্ষ্যে রাজস্বখাতে স্থায়ীভাবে ১০৭ টি ক্যাডার পদ এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সহায়ক কর্মচারী পদে ২০৪টি অস্থায়ী পদসহ মোট ৩১১ টি পদ সৃজন করা হয়েছে। বাসস