কেআইবির নির্বাচন

প্রশাসক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অপসারণ দাবি বিএনপিপন্থী কৃষিবিদদের

‘কেআইবির মর্যাদা ও ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে প্রস্তুত।’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রশাসক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অপসারণ দাবিতে বিএনপিপন্থী কৃষিবিদদের বিক্ষোভ সমাবেশ
প্রশাসক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অপসারণ দাবিতে বিএনপিপন্থী কৃষিবিদদের বিক্ষোভ সমাবেশ |নয়া দিগন্ত

কৃষিবিদদের জাতীয় সংগঠন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-এর প্রশাসক আব্দুর রব খানের অপসারণ ও গঠিত নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিএনপিপন্থি কৃষিবিদরা। বিএনপিপন্থি কৃষিবিদদের সংগঠন এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সোমবার দুপুর ৩টায় রাজধানীর খামারবাড়ি সড়কের কেআইবি কমপ্লেক্স এর সামনে থেকে এই মিছিল শুরু হয়ে ফার্মগেট বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মোড় হয়ে ফের একই জায়গায় গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। তবে, এর আগে থেকেই ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে বিএনপিপন্থি কৃষিবিদেরা কেআইবি চত্বরে হাজির হন। তাদের মধ্যে সাবেক ছাত্রদল নেতা,কৃষক দল ও বিএনপিপন্থি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অফিসটাইম হলেও খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই), এআইএস, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর (ডিএলএস), বিএআরসি, পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট, সাভারের বিএলআরআই, গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ব্রি), মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট, মৎস্য অধিদফতরসহ কৃষি ও মৎস্য খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরও দেখা যায় এই মিছিল ও সমাবেশে।

বিএনপিপন্থি কৃষিবিদদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কেআইবির প্রশাসক লে. কর্নেল (অব:) মো: আব্দুর রব খান আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৮ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেন। তারা দাবি করছেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে জামায়াতপন্থিদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সংগঠনের বিএনপিপন্থি সদস্যদের বড় একটি অংশ চাচ্ছেন জাতীয় নির্বাচনের পরে যেন এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

নব গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা না করলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই ভোট করার প্রস্তুতি হিসেবে ভোটার তালিকা হালনাগাদের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায়।

এ্যাব-এর নেতারা এই নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য কেআইবির প্রশাসকের কাছে দাবি জানালেও কোনো কাজ হয়নি। এ অবস্থায় সোমবার বিএনপিপন্থি কৃষিবিদেরা প্রশাসকের অপসারণ ও নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন।

সমাবেশে অ্যাবের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান কায়সারের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন বিপ্লবের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেআইবির সাবেক সভাপতি কৃষিবিদ ইব্রাহিম খলিল, এ্যাবের সাবেক আহ্বায়ক কৃষিবিদ আনোয়ারুন নবী মজুমদার বাবলা ও রাশিদুল হাসান হারুন, সাবেক সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, এ্যাবের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন চঞ্চল, অধ্যাপক আবুল বাশার ও শফিকুল ইসলাম শফিক ও সদস্য অধ্যাপক জমশেদ আলম প্রমুখ।

সমাবেশে কেআইবির সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বলেন, সাধারণ সভা ছাড়া যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ। যারা এই কমিশনের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের পদত্যাগ করা উচিত।

কৃষিবিদ আনোয়ারুন নবী মজুমদার বাবলা বলেন, আমি কেআইবির নির্বাচিত মহাসচিব ছিলাম। আমার সময়ের সভাপতির কোনো মতামত না নিয়েই প্রশাসক কমিশন গঠন করেছেন। অথচ একটি সাধারণ সভা ডেকে বা সাবেক সভাপতি ও মহাসচিবদের সঙ্গে পরামর্শ করেই এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। আমরা নির্বাচনের পক্ষে, কিন্তু সব প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক।

রাশিদুল হাসান হারুন বলেন, কেআইবির মর্যাদা ও ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে প্রস্তুত।

কামরুজ্জামান কায়সার বলেন, বর্তমান প্রশাসক কৃষিবিদদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একতরফাভাবে আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের সঙ্গে বসে অবৈধ কাজ করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে এই প্রশাসকের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। এর বিচার হতেই হবে। আমরা সিনিয়র কৃষিবিদদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবো। এর আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। কোনো অনিয়ম আমরা মেনে নেবো না।

শাহাদাত হোসেন বিপ্লব বলেন, প্রশাসক সিনিয়র কৃষিবিদদের মতামত ছাড়াই নিজের ইচ্ছেমতো নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। এতে রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছু নয়। বর্তমানে সংগঠনটিতে প্রায় ৩৩ হাজার সদস্য রয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী শাসনামলে কৃষিবিদদের পেশাজীবি সংগঠন কেআইবিকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়। নির্বাচন ছাড়াই বেশির ভাগ কমিটি প্রায় ৩৩ হাজার সদস্যের এই শীর্ষ সংগঠন পরিচালনা করে এসেছে। কেআইবি থেকেই কৃষি ও মৎস্য খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, পদোন্নতি,পদায়ন ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেছেন নেতারা।

এছাড়া, কেআইবির হলভাড়াসহ প্রতিমাসে যে কোটি টাকার আয় আসে তা-ও নয়-ছয় করেছেন আওয়ামী প্রভাবশালী নেতারা। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কৃষিবিদদের এই শীর্ষ সংগঠনটি দখলে নেয় বিএনপিপন্থি নেতারা। বিএনপিপন্থি নেতাদের বিভিন্ন গ্রুপ, উপ-গ্রুপ স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়ায়। আগের মতোই কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দেখা দেয় দলাদলি। হলরুম ভাড়া ও খাবারের টাকার ভাগবাটোয়ারার দ্বন্দ্ব নিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি বিএনপিপন্থী দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। এমন পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গত ২০ জানুয়ারি লে. কর্নেল মো: আব্দুর রব খানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়।