প্রতিবাদলিপিতে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে “গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেসময় শেখ হাসিনার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়ে আর পেছনে ফিরতে হয়নি এই কর্মকর্তার।” অথচ আমি কোটালীপাড়া উপজেলার ইউএনও ছিলাম, টুঙ্গিপাড়ার নয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “২০ জন ব্যবসায়ীকে মানব পাচারের অভিযোগ এনে দেশে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের সম্পদ হাতিয়ে নেন” প্রতিবেদকের এই বক্তব্যর পক্ষে অন্তত একটি প্রমাণ দিতে আমি অনুরোধ করছি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এ সকল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক মামলা”। “প্রলোভন” দেখিয়ে যেসব শ্রমিক দিয়ে মামলা করা হয়েছে তাদের অন্তত একজনের সাক্ষাৎকার আপনাদের চ্যানেল এ প্রকাশের অনুরোধ করছি।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, “ --- ফেসবুকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আদম ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায়ীদের সম্পদ আত্মসাৎ এবং আদম ব্যবসার মাধ্যমে প্রায় শতকোটি টাকা উপার্জন করে পাড়ি জমান আমেরিকায়।” প্রতিবেদকের কাছে এই তথ্যের অন্তত একটি প্রমাণ দিতে অনুরোধ রইলো।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, “২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রবাসী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে ব্রুনেই হাইকমিশনের ভেতরে আটকে নির্যাতন চালায় জিলাল সিন্ডেকেটের লোকেরা।” অথচ আমি ব্রুনেইতে যোগদানের আগেই সাইফুল ব্রুনেইতে ব্লাকলিস্টেড হয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসে। সাইফুলের পাসপোর্ট/টিপি দেখলে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, “ওই ঘটনায় (কামরুলকে অনাকাঙ্খিত চোর-থাপ্পোড় মারার ঘটনায়) ব্রুনেইয়ে মামলার পর কয়েকজন গ্রেফতার হলেও কৌশলে রক্ষা পান জিলাল হোসেন।” ওই ঘটনায় কে গ্রেফতার হয়েছে তা আমার জানা নেই (প্রতিবেদককে জানাতে অনুরোধ করছি)। প্রথমত ওই অনাকাঙ্কিত ঘটনার সময় আমি ঢাকাতে ছিলাম; দ্বিতীয়ত, প্রতিবেদক হয়তো জানেন যে আমি কূটনীতিক হিসেবে ব্রুনাইতে কর্মরত ছিলাম।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, “ --- ঘুষ না দেয়ায় ভিসার সিল কেটে দেয়া হয়---।” বিদেশী নাগরিকের ভিসা দেয়ার কাজ শ্রম উইং এর নয়, কনস্যুলার উইং এর, যার দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান যুগ্মসচিব (অডিট ক্যাডার) মাইনুল হাসান । যে উইং এর কাজ আমার না সেই উইং এর বিষয়ের সাথে আমাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করা অত্যন্ত অনভিপ্রেত।
প্রতিবেদনে প্রকাশ, “ ---- ঘুষের প্রতিবাদ করার আগে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। ঘুষ দাবির প্রতিবাদ করার পরই তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয় ---।” প্রতিবেদককে অনুরোধ করবো তিনি যেন ভিসা দালাল মেহেদী হাসানের সাথে আর একবার যোগাযোগ করে তার কাছ থেকে যেন জানতে চায় ঠিক কোন সুনিদিষ্ট কাজের জন্য তিনি হাইকমিশনে গিয়েছিলেন যার জন্য হাইকমিশনের কর্মচারীরা তারা কাছে “ঘুষ দাবি” করে; এবং ওই কাজের/আবেদনের অন্তত একটি কপি যেন প্রতিবেদক তুলে ধরে আর একটি সংবাদ প্রকাশ করেন।
আরো পড়ুন: সেই জিলাল হোসেনকে বরখাস্ত করলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
প্রতিবেদকের বক্তব্য : বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা জিলাল হোসেন ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট থেকে একই বছরের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত টুঙ্গিপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। টুঙ্গিপাড়ার উপজেলার সরকারী ওয়েবসাইটে এই তথ্য এখনও দেখা যাচ্ছে।
২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর পুলিশের বিশেষ শাখার একটি গোপনীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ব্রুনাইতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনার কর্তৃক ১৬ জন বাংলাদেশী নাগরিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মানবপাচারের অভিযোগ এনে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের পাসপোর্ট বাতিল করত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র প্রেরণ করা হয়। ব্রুনাইতে অবস্থিত বাংলাদেশী নাগরিকদের এ সকল সাজানো অভিযোগ দিয়ে ডেকে নিতেন এবং মারধর করতেন। এ সকল শ্রমিক নিয়োগকারী বাংলাদেশী মালিকদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দায়ের করতে শ্রমিকদের বাধ্য করতেন মর্মে জানা যায়।
মো: মনির হোসেনকে যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয় সেই অভিযোগের সংশ্লিষ্ট মামলা থেকে বিজ্ঞ আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস প্রাপ্ত হন। শাহেদ আহম্মেদ মজুমদার ও জসিম সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তার সুষ্পষ্ট কোনো প্রতিবেদন বাংলাদেশ হাইকমিশন, ব্রুনাই ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেননি। সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ সকল অভিযোগের বিষয়ে আদালতের শরনাপন্ন হননি। আদালতের দারস্থ না হয়ে শুধুমাত্র দাপ্তরিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। দীর্ঘদিন নিষেধাজ্ঞার কবলে থেকে তারা কর্মহীন, অসহায় হয়ে পড়েছে ও তাদের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা ধ্বংসের সম্মুখিন।
ব্যবসায়ীদের মানব পাচারের অভিযোগ এনে দেশে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের সম্পদ হাতিয়ে নেন বলে ভোক্তভোগী ব্যবসায়ীরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের কপি প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়াও ভুক্তোভোগী আসিফের এমন অভিযোগের ভিডিও গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
একজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ইচ্ছা না থাকলেও দুতাবাসের কর্মকর্তারা মামলা প্রস্তুত করে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন একজন বাদী। পরবর্তীতে তিনি মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন।
ব্রুনাই লেবাই উইংয়ের অফিসিয়াল ফেসবুকে দেওয়া একাধিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির স্ত্রিনশট প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সম্পদ আত্নসাত এবং আদম ব্যবসার মাধ্যমে প্রায় শতকোটি টাকা উপার্জনের ভূক্তভোগীদের ভিডিও, হোয়াটসআপের স্ক্রিনশট প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা জিলাল হোসেন যোগদানের আগেই ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ব্রুনেইতে ব্লাকলিস্টেড হয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসে বলে দাবি করেন জিলাল হোসেন। সেই সাইফুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার মামলা দেয়ার জন্য টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেন জিলাল হোসেন। এবং সাইফুলের কোম্পানির সত্যায়নে জিলাল হোসেনের স্বাক্ষরিত কপিও প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
প্রবাসী ব্যবসায়ী কামরুলকে মারধর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে জিলাল হোসেনের অধীনস্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রশীদকে প্রত্যাহার করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রত্যাহারের বিষয়টি ভুলবশত প্রতিবেদনে গ্রেফতার লেখা হয়েছে। তার দপ্তরে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনার দায় জিলাল হোসেন কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কিন্তু মন্ত্রণালয় জিলাল হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শুধুমাত্র আব্দুর রশীদকে প্রত্যাহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
মালেশিয়ান নাগরিক সারা বিনতে ওয়াকিল ভিসা দেয়ার পর ঘুষ না দেয়ায় ভিসার সিল কেটে দেয়া হয় এমন অভিযোগ করেন। এটি কুটনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত এবং এতে ওই দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে বলে সেসময় একজন সাবেক কুটনৈতিক এমন বক্তব্য দেন। ব্রুনাই দূতাবাসের সেই সময়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
ঘুষ ও দুতাবাসে নির্যাতনের প্রতিবাদ করলে মেহেদীসহ ৩৩ জন প্রবাসীর পাসপোর্ট বাতিলের উদ্যেগ নেয় দুতাবাস। কর্মকর্তাদের ঘুষ ও নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে প্রবাসী কল্যাণ/পররাষ্ট্র/স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন মেহেদী হাসান। জিলাল হোসেনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের আগ পর্যন্ত মেহেদীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা ছিল না। অভিযোগ দেয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হয়। মেহেদীর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ৮টি মামলায় মেহেদী হাসান নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।
একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলাটি তদন্তে প্রাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণে ও প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে এবং দালিলিক স্বাক্ষ্য পর্যালোচনায় প্রতিয়মান হয় যে, অত্র মামলার বাদী নিজের ক্রোধ ও স্বার্থ সিদ্ধির জন্য পরিকল্পিতভাবে আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনয়ন করে মামলা দায়ের করেছেন। তদন্তকালে বাদীনি জেনেশুনে মিথ্যা অভিযোগ আনয়ন করেছেন। বিধায় বাদীনির বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০০০ এর ১৫ ধারায় অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। পাসপোর্ট বাতিলের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেন মেহেদী হাসান। আদালত দুতাবাসের পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং তাৎক্ষনিক পাসপোর্ট ফেরত দেয়ার আদেশ দেন। পরবর্তীতে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে সুপ্রিম কোর্ট আপিল আবেদনটি খারিজ করে দেন।