২০২৫ সালে এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ভয়াবহ ফল বিপর্যয় হয়েছে। ২০ বছরের ইতিহাসে পাসের হার ছিল সর্বনিম্ন। এমন ফলাফলে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। এর প্রভাব দেখা গেছে ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণ বা খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদনে। ফলে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ২ লাখ ২৬ হাজার শিক্ষার্থী ৪ লাখ ২৮ হাজার খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন।
এর মধ্যে ঢাকায় আবেদনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, আর বরিশাল বোর্ডে সবচেয়ে কম। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন বেশি করেছেন।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পুনঃনিরীক্ষণে ঢাকার পরেই রয়েছে কুমিল্লা ও রাজশাহী বোর্ড। বিপরীতে সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে। গত ১৬ অক্টোবর ফল প্রকাশের পরদিন (১৭ অক্টোবর) থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৭ দিন শিক্ষার্থীরা প্রতি বিষয়ে ১৫০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করার সুযোগ পান।
ঢাকা : এ বোর্ডের ২ লাখ ৯২ হাজার ৫৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছেন ৬৬ হাজার ১৫০ জন, যা থেকে জমা পড়েছে মোট এক লাখ ৩৬ হাজার ৫০৬টি বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন।
কুমিল্লা : দ্বিতীয় সর্বাধিক আবেদন জমা পড়েছে কুমিল্লা বোর্ডে। এ বোর্ডে ২২ হাজার ৫০৩ জন শিক্ষার্থী ৪২ হাজার ৪৪টি খাতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছেন।
চট্টগ্রাম : এ বোর্ডে ২২ হাজার ৫৯৫ জন মোট ৪৬ হাজার ১৪৮টি খাতা চ্যালেঞ্জ করেছেন।
রাজশাহী : আবেদন করেছেন ২০ হাজার ৯২৪ জন। তাদের চ্যালেঞ্জকৃত খাতার পরিমাণ ৩৬ হাজার ১০২টি।
যশোর : এ বোর্ডে ২০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী ৩৬ হাজার ২০৫টি বিষয়ে আবেদন করেছেন।
দিনাজপুর : আবেদনকারীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৩১৮ জন এবং খাতার সংখ্যা ২৯ হাজার ২৯৭টি।
ময়মনসিংহ : এ বোর্ডে আবেদন করেছেন ১৫ হাজার ৫৯৮ জন, খাতার সংখ্যা ৩০ হাজার ৭৩৬টি।
সিলেট : এ বোর্ডে আবেদন করেছেন ১৩ হাজার ৪৪ জন শিক্ষার্থী। খাতার সংখ্যা ২৩ হাজার ৮২টি।
কারিগরি : কারিগরি বোর্ডে আবেদন করেছেন ১২ হাজার ৭ জন। তাদের খাতার সংখ্যা ১৫ হাজার ৩৭৮টি।
মাদরাসা : এ বোর্ডে আবেদন করেছেন ৭ হাজার ৯১৬ জন শিক্ষার্থী। মোট ১৪ হাজার ৭৩৩টি খাতার পুনঃনিরীক্ষণ চেয়ে আবেদন করেছেন তারা।
বরিশাল : এ বোর্ডে আবেদনকারীর সংখ্যা সবচেয়ে কম। মাত্র ৮ হাজার ১১ জন শিক্ষার্থী, মোট আবেদনপত্র ১৭ হাজার ৪৮৯টি।
ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে বেশি আবেদন
বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের বছরগুলোর মতো এবারও ইংরেজি ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে সবচেয়ে বেশি পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন এসেছে।
কর্মকর্তাদের মতে, এই দুই বিষয়ে লেখনিভিত্তিক প্রশ্নসহ ধাপে ধাপে মার্কিং পদ্ধতির কারণে ভুল বা নম্বর অসঙ্গতির আশঙ্কা তুলনামূলক বেশি থাকে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশেষ করে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র এবং আইসিটি তত্ত্ব অংশে তাদের প্রাপ্ত নম্বর প্রত্যাশার তুলনায় কম এসেছে।
পুনঃনিরীক্ষণে কী করা হয়?
ফল পুনঃনিরীক্ষণে পরীক্ষার খাতা নতুন করে দেখা হয় না। বরং আবেদন পাওয়ার পর শিক্ষা বোর্ডের বিশেষ কমিটি বিশেষ কিছু ধাপ অনুসরণ করেন৷
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের ভিত্তিতে নম্বর যোগের ভুল সংশোধন করা হয়।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বর সঠিকভাবে যোগ হয়েছে কি না, তা যাচাই করা হয়। এরপর খাতার নম্বর ট্যাবুলেশন শিটে (ফল সংরক্ষণ তালিকা) সঠিকভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে কি না, সেটিও মিলিয়ে দেখা হয়। এছাড়া কোনো অতিরিক্ত উত্তরপত্র বা পৃষ্ঠা বাদ পড়ে গেছে কি না, সেটিও পরীক্ষা করা হয়। তবে নতুন করে মার্কিং করা হয় না।
তিনি আরো জানিয়েছেন, কোনো খাতায় পুনরায় মূল্যায়ন বা নতুন করে নম্বর দেওয়া হয় না- শুধু গণনাগত বা ট্যাবুলেশনভিত্তিক ভুল পাওয়া গেলে তা সংশোধন করা হয়। ফল পুনঃনিরীক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর কমানো হয় না, বরং যদি কোনো ভুল ধরা পড়ে, নম্বর শুধু বাড়ানো হয়। ফলে আবেদনকারীরা কোনো ঝুঁকিতে থাকেন না। সাধারণত পুনঃনিরীক্ষণের পর অনেক শিক্ষার্থীর ফলই পরিবর্তিত হয়।
ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যেই পুনঃনিরীক্ষণের ফল
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী ফল প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যেই পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা গত ১৬ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছি। সে অনুযায়ী ১ মাসের মধ্যেই পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হবে।
তিনি জানান, ফল পরিবর্তন হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাঠানো হবে। পাশাপাশি সংশোধিত ফল সংশ্লিষ্ট বোর্ডের ওয়েবসাইটেও দেখা যাবে।



