মানবপাচারকে একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সংগঠিত অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশে এই অপরাধ নির্মূলে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিশ্ব মানবপাচার বিরোধী দিবস উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘ অভিবাসন নেটওয়ার্কের কাউন্টার-ট্র্যাফিকিং ইন পারসনস টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে ঢাকায় এক উচ্চপর্যায়ের জাতীয় সভা এই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশ।
এবারের দিবসের বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য ছিল, ‘মানবপাচার একটি সংগঠিত অপরাধ-শোষণ বন্ধ করুন।’
অনুষ্ঠানে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। তারা সবাই পাচার চক্র ধ্বংস, সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার এবং ভুক্তভোগী ও বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) জনাব খোন্দকার মো: মাহবুবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ পাচার নির্মূলে কঠোর আইন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরো গভীর করার মাধ্যমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা আমাদের প্রচেষ্টার কেন্দ্রে থাকতে হবে।’
আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতিনিধি বিশেষ অতিথিরা এই প্রতিশ্রুতির প্রতি সংহতি জানান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. বের্ন্ড স্পেনিয়ার বলেন, ‘মানবপাচার হলো সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি এবং এটি একটি বৈশ্বিক অপরাধ। অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা ইউরোপের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার এবং নিরাপদ, বৈধ ও মর্যাদাপূর্ণ শ্রম অভিবাসনকে উৎসাহিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টার ভিত্তি হচ্ছে ইইউর মানবপাচারবিরোধী কৌশল, যা চাহিদা হ্রাস, পাচারকারীদের ব্যবসায়িক মডেল ভেঙে দেয়া এবং বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মতো ভুক্তভোগীদের সহায়তা দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়। একজন মানুষ পাচারের হাত থেকে রক্ষা পেলে একটি জীবন বাঁচে, একটি ভবিষ্যৎ পুনঃরুদ্ধার হয়।’
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সিটিআইপির কারিগরি উপস্থাপনা ছিল, যেখানে উদীয়মান পাচারের প্রবণতা ও জাতীয় প্রতিক্রিয়া কৌশল তুলে ধরা হয়।
একজন ভুক্তভোগীর হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা ‘ভিকটিমের কণ্ঠ’ অংশগ্রহণকারীদের সামনে মানবপাচারের প্রকৃত প্রভাব ও সারভাইভার-কেন্দ্রিক সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়।
এই দিবস উদযাপন মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় অঙ্গীকার এবং পাচারের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতিফলন। এটি একটি বৃহত্তর সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ, যার আওতায় সারাদেশে এই সপ্তাহব্যাপী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারণা এবং কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যার নেতৃত্বে রয়েছে জাতিসঙ্ঘ অভিবাসন নেটওয়ার্ক ও সিটিআইপির টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ। ইউএনবি