বন্যা ঝুঁকিতে ৫২ মিলিয়ন মানুষ : পরিবেশ উপদেষ্টা

পাথর খেকোদের দৌরাত্ম্য কমছে না। তাদের দৌরাত্ম্য দেখেও সিলেটবাসী নীরব; তাদের কোনো ভূমিকা নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদক
‘ফ্লাড হ্যাজার্ড ইন সিলেট রিজিওন : প্রবলেমস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক এক সেমিনার
‘ফ্লাড হ্যাজার্ড ইন সিলেট রিজিওন : প্রবলেমস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক এক সেমিনার |নয়া দিগন্ত

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রায় ৫২ মিলিয়ন মানুষ বাংলাদেশে বন্যা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশ বন্যার ঝুঁকির মধ্যে ১০ নম্বর। আর জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ঝুঁকি যেটা বন্যার দিক থেকে তাতে অবস্থান ৭ নম্বর ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে রয়েছে।

আজ শনিবার (১০ মে) রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে জালালাবাদ অফিসার্স অ্যাসাসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ফ্লাড হ্যাজার্ড ইন সিলেট রিজিওন : প্রবলেমস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, বন্যা পরিস্থিতির এই সংকটে আমাদের কয়েকটা প্রিপেয়ারনেস বা প্রস্তুতিটা আরো বাড়াতে হবে। আমাদের সত্যিকার অর্থে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবো কিন্তু নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমদায়িত্ব করবার যে পদক্ষেপটাও নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এ সংকট মোকাবিলায় আমাদের বিশ্ব জলবায়ু পরিস্থিতির পূর্বাভাসটা সঠিকভাবে পেতে হবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু নিয়ে কাজ করা সংস্থার সাথে আলাপ আলোচনা চালাচ্ছি। তারা যেন আমাদেরকে সাইট স্পেসিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আগাম তথ্য দেয়, তাদের যে হাই রেজুলেশন ডাটা আছে সেটা থেকে যদি তারা আমাদের সুবিধা দেয়। আমাদের যে ঘাটতিটা রয়েছে সেটা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করবো। এখন পর্যন্ত আলোচনা যেভাবে চলছে তাতে মনে হচ্ছে আমরা পার্টনারশিপ বা অংশীদারিত্বে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাবো।

পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ উপদেষ্টা সিলেটের পাথর খেকোদের ব্যপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাথর খেকোদের দৌরাত্ম্য কমছে না। তাদের দৌরাত্ম্য দেখেও সিলেটবাসী নীরব; তাদের কোনো ভূমিকা নেই।

তিনি আরো বলেন, এতটা বছর আইনি লড়াই করেছি। আগে মানববন্ধন ও আইনি লড়াই করতাম। আইনিনী লড়াই করে ৪ বছর পাথর তোলা বন্ধ রেখেছি। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে সেখানে ব্যপক লুটপাট হচ্ছে। কিন্তু এখন তো এ মন্ত্রণালয় আমার না। এ ব্যপারে তিনি জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনসহ সবার সহোযোগিতা চান।

পরিবেশ উপদেষ্টা আরো বলেন, বাংলাদেশের বড় সমস্যা বন্যা হলেও এদেশের পলি উর্বর। কিন্তু আমাদের অ্যাক্টিভ ডেল্টার কারণে আমাদের বন্যার সুবিধাও আছে। এদিকে, বন্যা আটকানোর কোনো সুযোগ নেই। ঐতিহাসিক সময় থেকে বন্যা হচ্ছে আবার ভূতাত্বিক গঠনও হচ্ছে।

‘ফ্লাড হ্যাজার্ড ইন সিলেট রিজিওন; প্রবলেমস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি হ্রাসসহ দূর্যোগ মোকাবেলায় সবাইকে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

তারা বলেন, শুধু বক্তৃতা বা সেমিনারে এসব আলোচনা সীমাবদ্ধ না রেখে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তনশীল আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব। আমরা সরকারি উদ্যোগে যখনই কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি তখনই উচ্চপর্যায় থেকে সমস্যার শুরু হয়। সৎ উদ্দেশ্য থাকলেও কারিগরি ত্রুটি ও জ্ঞানের অভাবের কারণে তাতে সফল হওয়া যায় না। অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের কারণে আমাদের সিলেট অঞ্চলের প্রকৃত সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

তিনি বলেন, সিলেটে শিক্ষার হার কমছে। এ ধরনের সংকট নিরসনে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের মানুষকে ভালো জায়গায় পৌঁছানো যেতে পারে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। সিলেটের এ অবস্থার জন্য আমরাই দায়ী। সিলেটের মানুষ আত্মকেন্দ্রীক। সিলেটে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই।

তিনি বলেন, ফলে সিলেটের উন্নয়নে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় না। এখন থেকে সবাইকে সিলেটের উন্নয়নে সোচ্চার হতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় সরকারের বাজেট বরাদ্দের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি একনেক এর দিকেও নজর দিতে হবে।

সেমিনারে ‘বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি : দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর গবেষণা’ শীর্ষক মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং বেসরকারি মারারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আব্দুর রব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মার্জিয়া আক্তার অপু।