বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ ও টাইডাল সল্টমার্শ বাস্তুতন্ত্রে সংরক্ষিত ব্লু কার্বনের পরিমাণ নির্ধারণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগত কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে।
রোববার রাজধানীর সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিওআরআই) আয়োজনে এক কর্মশালায় এই পদ্ধতিগত কাঠামো চূড়ান্ত করা হয়।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি), পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ উপকূলের ম্যানগ্রোভ ও টাইডাল সল্টমার্শ বাস্তুতন্ত্রের ব্লু কার্বন স্টক মূল্যায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে তাদের প্রতিক্রিয়া নিরূপণ’ শীর্ষক কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কমডোর মোঃ মিনারুল হকের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) গাজী মো. ওয়ালী-উল-হক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিজ্ঞানই আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত পথপ্রদর্শক। তিনি উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রকে ‘প্রকৃতির অফুরন্ত ভান্ডার’ হিসেবে বর্ণনা করেন। যা খাদ্য, জীবিকা ও কার্বন শোষণ উভয় দিক থেকেই দেশের জন্য অপরিহার্য। তিনি গবেষণায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও আন্তঃবিষয়ক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন এবং মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের গবেষণায় সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) গাজী মো. ওয়ালী-উল-হক বলেন, প্রকল্পটিকে ‘সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ’। এটি বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমি খাতের একটি ‘অনুম্মোচিত দ্বার’ খুলে দিতে পারে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভবন প্রায় ২০ লক্ষ টন কার্বন সংরক্ষণ করে। প্রকল্পটি থেকে প্রাপ্ত নির্ভুল তথ্য বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে এবং জলবায়ু অর্থায়নে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিওআরআই মহাপরিচালক কমডোর মোঃ মিনারুল হক সকল অংশগ্রহণকারী ও আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাকে ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য একটি মজবুত ভিত্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের ফলাফল হবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য একটি ব্যবহারিক হাতিয়ার এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞান। আমাদের লক্ষ্য হলো- জাতিকে একটি শক্তিশালী কার্বন ট্রেডিং এর মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত প্রদান করা। আমরা বিশ্বাস করি, কার্বন বাণিজ্যের ভবিষ্যতের দৃশ্যপটে এটি সরকার এবং অংশীদার সংস্থাগুলির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার হাতিয়ার হবে।
প্রকল্প পরিচালক মীর কাশেম প্রকল্পের বিস্তারিত পরিধি এবং ব্লু কার্বন স্টক মূল্যায়নের প্রস্তাবিত মেথডোলজি উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোঃ কামরুজ্জামান এবং অক্সফামের ক্লাইমেট বিভাগের প্রধান মোঃ ইমরান হাসান।
এছাড়া কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, গবেষক ও কর্মকর্তারা অংশ নেন।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে তারা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের অনন্য চ্যালেঞ্জ, যেমন পলি পরিবাহন, লবণাক্ততার তারতম্য ও চরম আবহাওয়া-এসব বিষয় মোকাবিলায় গবেষণা পদ্ধতিকে কীভাবে আরও অভিযোজিত করা যায়, সে বিষয়ে গঠনমূলক মতামত দেন।