কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে, ভেতরে-বাইরে এর সুবিধাভোগী রয়েছে। তারা খুবই সংগঠিত, এই দিকটা বিপজ্জনক। আগামী কয়েক মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে মানবাধিকার কর্মীদের এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা চাই ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হোক মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক- যেমনটা বাংলাদেশ আগে কখনো দেখেনি। এবার আমরা ভোটারদের, বিশেষত নারীদের স্বাগত জানাতে চাই। ইতিহাসের সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে একটি বড় প্রচারাভিযান চালানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনাদের বারবার আসা। প্রতিবার আপনারা এলেই ভুলে যাওয়া ইস্যুগুলো আবার আলোচনায় আসে। শেষ পর্যন্ত আপনারাই জনগণের কণ্ঠস্বর।’
এ সময় তিনি প্রতিনিধিদলকে দেশের নির্বাচন প্রস্তুতি, সংস্কার প্রক্রিয়া এবং মানবাধিকার নিয়ে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছর সংঘটিত হত্যার তদন্তে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার দফতরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের প্রতিবেদনে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসঙ্ঘের অধীনে একটি মানবাধিকার মিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে, যা নিয়মিত প্রতিবেদন দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ১১টি কমিশন গঠন করেছি মূল খাতগুলোতে সংস্কারের সুপারিশ দেওয়ার জন্য। একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এসব সুপারিশের ওপর কাজ করছে। আমাদের সাথে যোগ দেয়া রাজনৈতিক দলগুলোও এই প্রক্রিয়ার অংশ। অক্টোবরের মধ্যে বড় ধরনের সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাবনা সংবলিত ‘জুলাই চার্টার’ রাজনৈতিক দলগুলো সই করবে বলে আশা করছি।’
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে অর্থপাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘চুরি করা অর্থ ফেরত আনার আইনি প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠিন। ব্যাংকগুলো যেন এ ধরনের সম্পদ লুকাতে না পারে সে জন্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো আওয়াজ তুলুক। এ অর্থ আসলে জনগণের।’
এ সময় মানবাধিকারকর্মীরা নিরাপত্তা খাতের সংস্কারের ওপর জোর দেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর জন সিফটন বলেন, ‘যত বেশি সম্ভব সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে চাপ দিতে হবে। যেন সংসদ বসার পরও এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে।’
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের স্টাফ অ্যাটর্নি ক্যাথেরিন কুপার, সিভিকাসের সেক্রেটারি জেনারেল মানদীপ তিওয়ানা, ফোর্টিফাই রাইটসের সিইও ও ফাউন্ডার ম্যাথিউ স্মিথ, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সাবহানাজ রাশিদ দিয়া, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর ক্যারোলিন ন্যাশ, ওহাইও ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং ইন্টারন্যাশনাল স্কলার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, সিভিকাসের জাতিসঙ্ঘ উপদেষ্টা জেসেলিনা রানা ও এনসিপি নেতা তাসনিম জারা।