‘দেশের জেলেদের হাত-পা বেঁধে রাখার সুযোগে ভারতীয়রা ধরে নিচ্ছে মাছ’

দেশে মাছে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে জেলেদের হাত-পা খুলে গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণের অনুমতি প্রদানে প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণের অনুমতির দাবিতে জেলেদের সংবাদ সম্মেলন
গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণের অনুমতির দাবিতে জেলেদের সংবাদ সম্মেলন |নয়া দিগন্ত

আর্টিসাল ও মেকানাইজ ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো: মাসুম বলেছেন, ভারতীয় জেলেদের সুবিধা দিতে আইন করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার দেশের জেলেদের ৪০ মিটারের নিচের গভীর জলে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। যাতে করে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ সীমানায় আধুনিক প্রযুক্তির ১০০ মিটার গভীর জাল ব্যবহার করে মাছ ধরে নিতে পারে। সেই আইনের মারপ্যাঁচে দেশের জেলেদের হাত-পা আজো বাঁধা রয়েছে। সেই সুযোগে ভারতীয়রা ধরে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের মাছ।

দেশে মাছে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে জেলেদের হাত-পা খুলে গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণের অনুমতি প্রদানে প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আ: সুক্কুর আলীসহ অন্যরা।

লিখিত বক্তব্যে মো: মাসুম বলেন, ‘বিগত সরকার এত বছর বাংলাদেশী জেলেদের গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে বিরত রেখেছিল। যাতে ভারতের জেলেরা আমাদের সুমদ্র সীমানা থেকে অধিক পরিমাণে মৎস্য আহরণ করতে পারে। আমরা সরকারের কাছে মাত্র ৪০ মিটার গভীরে মাছ আহরণের অনুমতি চেয়েও পাইনি। অথচ ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে ১০০ মিটার গভীরে জাল ফেলে বিপুল পরিমাণ মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে দেশে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে গভীর সমুদ্রে আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস আহরণে মৎস্য অধিদফতর এবং মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আবেদন করে আসছিলাম। আমরা গভীর সমুদ্রে ৪০ মিটার গভীরে মৎস্য শিকারের অনুমতি চাওয়া সত্ত্বেও অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। আমাদের মাছ ধরার ট্রলারগুলো সমুদ্রে মৎস্য শিকারের ফিটনেস থাকা সত্ত্বেও আইনের যাতাকলে আমাদের আটকিয়ে রাখা হয়েছে। ভারতের জেলেদের বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছি। তারপরও মৎস্য অধিদফতর নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ড কোনো আশানুরুপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে অধিক পরিমাণ মাছের প্রজনন হয়ে থাকে। যা বেড়ে উঠে আমাদের সমুদ্র সীমানায়। কিন্তু ভারতীয় জেলেরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের সীমানার ভেতর থেকে অধিক পরিমাণ মাছ ধরে নিয়ে যায়। ফলে আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে মৎস আহরণে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছি। আমাদরে বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গমিটার সমুদ্রসীমায় ৩৭৩ প্রজাতির মাছ রয়েছে। কিন্তু আমরা মাত্র ৩০ প্রজাতির মাছ শিকার করতে পারছি। অন্য দিকে উন্নত প্রযুক্তির অভাবে বাকি ৩৪৩ প্রকাতির মাছ শিকার করা যাচ্ছে না। তারা জিপিএস, সোনার, রাডার, নেভিগেশন চার্ট, ইকো সাউন্ডার, ফিস ফাইন্ডার, মেরিন ডেটা ব্যাংকেতর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব ধরনের মাছ সমুলে নিয়ে যাচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের জেলের আধুনিকায়ন করে গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণের অনুমতি দিলে দেশের জেলে ও মৎস ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে, এর সাথে দেশের মাছের চাহিদা পূরণ হয়ে আরো বেশি রফতানি করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা ও মৎস উপদেষ্টার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন বক্তারা।