সচিব মাসুদুল হাসান

ভর্তুকি দেয়ায় দেশে খাদ্য সঙ্কট নেই

‘আমরা সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা জোরদার করেছি, ডিজিটাল খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করেছি এবং কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সময়মতো খাদ্যশস্য সংগ্রহ নিশ্চিত করেছি।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মাসুদুল হাসান
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মাসুদুল হাসান |সংগৃহীত

বাংলাদেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে এবং খাদ্য সঙ্কটের কোনো ঝুঁকি নেই। সরকার বছরজুড়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য কর্মসূচিতে সহায়তা দিচ্ছে।

ওপেন মার্কেট সেলস (ওএমএস), খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি (এফএফপি) এবং স্কুল ফিডিং কর্মসূচির মতো বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ সহায়তা পাচ্ছেন।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মাসুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা জোরদার করেছি, ডিজিটাল খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করেছি এবং কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সময়মতো খাদ্যশস্য সংগ্রহ নিশ্চিত করেছি।’

মাসুদুল হাসান জানান, কৃষকের কল্যাণ জনগণের পুষ্টি এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

সচিব বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতা ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালাবদলের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবস্থা স্থিতিশীল ও সহনশীল রয়েছে।’

তিনি জানান, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ওএমএস, এফএফপি, ভিজিএফ, ভিজিডি এবং স্কুল ফিডিং কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্যকে সুলভ ও সহজলভ্য করে চলেছে।

বর্তমানে ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশজুড়ে এক হাজার ৯০২টি কেন্দ্রে এক কোটি ২২ লাখ পরিবারের কাছে প্রতি মাসে পাঁচ কেজি চাল ৩০ টাকা কেজি দরে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত চা বাগানের শ্রমিকদের কাছে মাত্র ১৯ টাকা কেজি দরে গম বিক্রি করা হচ্ছে।

পাশাপাশি, ৫৫ লাখ পরিবার এখন প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছে। আগে এই কর্মসূচি পাঁচ মাস চললেও, বাজারে বেশি দামে চাল কিনতে বাধ্য হওয়া পরিবারগুলোর ওপর চাপ কমাতে আগস্ট থেকে তা ছয় মাসে বাড়ানো হয়েছে।

আবার দুস্থ নারীদের জন্য পরিচালিত ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট’ কর্মসূচির আওতায় ১০ লাখ ৪০ হাজার নারী মাসিক ৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন।

বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের মজুদ এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৫.৮৯ লাখ টন-এ পৌঁছেছে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বোরো সংগ্রহে ব্যাপক সফলতা এবং জুলাই মাসে খাদ্য বিতরণ কম হওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মোট মজুদের মধ্যে চাল ১৫.৩০ লাখ টন, গম ৫৫ হাজার ৮০৪ টন এবং ধান চার হাজার ৩৬০ টন রয়েছে। এটি ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের আগের রেকর্ড ১৪.৩৫ লাখ টনকে ছাড়িয়ে গেছে।

সচিব বলেন, ‘ভালো বোরো উৎপাদন, রেকর্ড পরিমাণ সংগ্রহ এবং বাজারের দামের সঙ্গে সরকারি ক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্যের ফলেই এই উল্লেখযোগ্য মজুদ সম্ভব হয়েছে।’

সরকার মজুদ আরো বাড়াতে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অতিরিক্ত পাঁচ লাখ টন চাল এবং চার লাখ টন গম আমদানির পরিকল্পনা করেছে।

তিনি বলেন, ‘যেকোনো সম্ভাব্য ঘাটতি মোকাবেলায় খাদ্য অধিদফতর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সংগ্রহের মাধ্যমে বাফার স্টক বাড়াতে সতর্ক রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে অধিদফতর কখনোই তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়নি।’

সচিব আরো বলেন, ‘আসন্ন আমন সংগ্রহ প্রক্রিয়া চলছে এবং মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চাল ও গম আমদানির জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সরকার-থেকে-সরকার (জিটুজি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।’

ক্রয় বিভাগের পরিচালক মো: মনিরুজ্জামান জানান, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য পূর্বপরিকল্পনার ফলেই সরকার দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণে ধান ও চাল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।

মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, এ বছর টাঙ্গাইলের মধুপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ এবং নারায়ণগঞ্জে চারটি আধুনিক সাইলো নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় সরকারের খাদ্যশস্য সংরক্ষণের সক্ষমতা ২৩.৮৮ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।

কর্মকর্তারা যোগ করেন, খাদ্যশস্য চাষের জন্য আবাদি জমি ক্রমাগত কমতে থাকায় প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

এছাড়াও, সারাদেশে আরো সাতটি সাইলো গুদামের নির্মাণকাজ চলছে, যার প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৫০ হাজার টন। বাসস