হজের ৩ প্যাকেজ ঘোষণা, খরচ কমলো

চলতি বছরের মতো আগামী বছরও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। হজ অ্যাজেন্সিগুলো এর নিচে কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন
সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন |ইন্টারনেট

সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০২৬ সালের জন্য হজের তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছর ছিল দু’টি প্যাকেজ। বিমানভাড়া কমায় আগামী বছর হজ পালনে চলতি বছরের চেয়ে খরচ কিছুটা কমছে।

আজ রোববার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত হজ প্যাকেজ-২০২৬ ঘোষণা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এই ঘোষণা দেন।

২০২৫ সালে হজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ এর মাধ্যমে খরচ হয়েছে চার লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। আর প্যাকেজ-২ এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয় পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। আর বেসরকারিভাবে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল চার লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। এর ভিত্তিতে প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে হজ অ্যাজেন্সিগুলো।

চলতি বছরের মতো আগামী বছরও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। হজ অ্যাজেন্সিগুলো এর নিচে কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর বিমানভাড়া কমানো হয়েছে। তবে ২০২৬ সালের হজে সৌদি সরকার স্বাস্থ্যবিমার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে ১৩০ সৌদি রিয়াল, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় চার হাজার ২৭০ টাকা।

মিনা ও আরাফায় তাঁবু ভাড়া ৪.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে ‘দমে শোকর’ বাবদ ৭২০ সৌদি রিয়াল তথা ২৩ হাজার ৬৫২ টাকা জমাদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ বছর প্রথমবারের মতো ‘দমে শোকর’ বাবদ টাকা হজ প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এছাড়া এ বছর সৌদি রিয়ালের বিনিময় হারও বেড়েছে। গত বছর সৌদি রিয়াল ছিল ৩২ টাকা ৫০ পয়সা, এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ৮৫ পয়সা। এসব বিবেচনায় নিয়ে ২০২৬ সালের প্যাকেজ দেয়া হয়েছে।

এ বছর সরকারি মাধ্যমে ‘হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ)’, ‘হজ প্যাকেজ-২’ ও ‘হজ প্যাকেজ-৩’ শিরোনামে তিনটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে।

হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ)

এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গন থেকে সর্বোচ্চ সাত শ’ মিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেয়া হবে। অ্যাটাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ পাঁচজনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি+’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।

হজ প্যাকেজ-২

এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গন থেকে ১.২ কিলোমিটার থেকে ১.৮ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেয়া হবে। অ্যাপাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা।

হজ প্যাকেজ-১ ও হজ প্যাকেজ-২ এ নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে মক্কা ও মদিনায় ২ ও ৩ সিটের রুম আপগ্রেডেশন ও শর্ট প্যাকেজ সুবিধা গ্রহণ করা যাবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরব অবস্থানকাল হবে সাধারণত ৩৫-৪৭ দিন। তবে শর্ট প্যাকেজে সৌদি আরবে অবস্থানকাল হবে ২২-৩০ দিন।

হজ প্যাকেজ-৩

এটি সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের আবাসন হবে মক্কায় আজিজিয়া এলাকায় এবং মদিনায় মারকাজিয়া এলাকার বাইরে। একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। হারাম শরীফে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যাতায়াতের নিমিত্ত এসি বাসের বন্দোবস্ত থাকবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে চার লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই প্যাকেজ সরকারি মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য নতুন সংযোজন। এর আগে, কখনো সরকারি মাধ্যমের হাজীদের আজিজিয়া এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে সর্বোচ্চ হজযাত্রী প্রেরণকারী তিনটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার হজযাত্রীদের বহু বছর ধরে আজিজিয়া এলাকাতেই রাখা হয়।

এছাড়া, আমাদের দেশের হজযাত্রীদের দীর্ঘবছর যাবৎ যে এলাকায় রাখা হতো এই এলাকার হোটেল বা বাড়িগুলো সৌদি সরকার ভেঙে ফেলেছে। এ কারণে আগামীতে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের আজিজিয়া এলাকায়ই রাখতে হবে।

হজ অ্যাজেন্সিসমূহের জন্য ‘বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ’ শিরোনামে একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ নয় হাজার ১৮৫ টাকা। সরকার অনুমোদিত এই প্যাকেজ গ্রহণ করে অ্যাজেন্সিসমূহ অতিরিক্ত দু’টি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।

প্রত্যেক হজযাত্রীর খাবার বাবদ প্রতিদিন ন্যূনতম ৩৫ সৌদি রিয়াল ব্যয় হতে পারে। এ হিসাব অনুসারে খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা হজযাত্রীদের সাথে নিতে হবে এবং নিজ দায়িত্বে খাবার ক্রয় করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৬ সনের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে সম্ভাব্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।

গত ২৭ জুলাই থেকে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে এবং সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১২ অক্টোবর হজের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হবে।

১২ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি ২০২৬ সালের হজে গমন করতে পারবেন। তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।

আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্যাকেজ মূল্যের সমুদয় অর্থ আবশ্যিকভাবে জমা প্রদান করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, আগামী ৯ নভেম্বর হজচুক্তি সম্পাদিত হবে। ২০২৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজ ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম শুরু হবে। আর হজ ফ্লাইট শুরু হবে ১৮ এপ্রিল।