গণভোটের ব্যাপারে ইসিতে কোনো তথ্য আসেনি : ইসি সচিব

এনসিপিকে অন্য প্রতীক দিয়ে এ সপ্তাহেই গণবিজ্ঞপ্তি

‘এনসিপিকে অন্য প্রতীক দিয়ে এ সপ্তাহেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট।’

বিশেষ সংবাদদাতা
গণমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ
গণমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ |বাসস

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনে এখনো পর্যন্ত কোনো গণভোট সম্পর্কিত তথ্য আসেনি। এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) অন্য প্রতীক দিয়ে এই সপ্তাহেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি।

ইসি সচিব বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন কমিশনে গণভোট নিয়ে এখনো কোনো তথ্য আসেনি, তাই অনুমানভিত্তিক কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়। যে বিষয়টি কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

এনসিপির প্রতীক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এনসিপিকে অন্য প্রতীক দিয়ে এ সপ্তাহেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট। প্রতীক বরাদ্দের সময় নিবন্ধনযোগ্য রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা প্রকাশের সাথে প্রতীকের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হবে।‎’

ইসি সচিব বলেন, ‘আমাদের কর্মপরিচালনার সাথে আমরা দুটো বিষয়ে একটু পিছিয়ে পড়েছি। একটা হলো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন। আরকটি হলো পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ব্যাপারে আমরা অতীতেও আপনাদেরকে বলেছি, যে ২২টি রাজনৈতিক দলের প্রাথমিকভাবে বিবেচ্য মনে করেছি তাদের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে বাকি আরো কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি। ইনশাআল্লাহ চলতি সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত করতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত সত্য কথা যে আমরা পিছিয়ে আছি, তবে এজন্য আমাদের তাগিদও আছে। কিন্তু দুশ্চিন্তা করার মতো কোনো কারণ আছে বলে আমার মনে করি না। কেননা, যতটুটু সময় আছে আমরা ইনশাআল্লাহ কভার করে নিতে পারবো।’

পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তাদের ব্যাপারেও তাই। পর্যবেক্ষক সংস্থার ব্যাপারে আপনাদের দেয়া তথ্য সুন্দর হয়েছে। আমাদের জানার সীমাবদ্ধতায় আপনারা কিছু কিছু পূরণ করে দিয়েছেন। তবে শেষ বিচারে কয়টা দাঁড়াবে এটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব না। এটাও এই সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করার ব্যাপারে চেষ্টা করছি।’

বিএনপি’র চিঠির ব্যাপারে ইসি সচিব বলেন, ‘এটার ব্যাপারে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবেন। কি করবেন না করবেন। তবে প্রাথমিকভাবে বলা যেতে পারে যে, উপদেষ্টা পরিষদ থেকে যেহেতু এটা অনুমোদিত হয়ে গেছে, এটা এখন আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে। চিঠিটা কমিশন চিন্তা করবেন যে এটা কি করা যেতে পারে।’

এনসিপির প্রতীক বরাদ্দের ব্যাপারে সচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের সময় তাদের প্রতীক চিহ্নিত করেই প্রতীক দেয়া হবে। এনসিপির ব্যাপারে তো কমিশন তাদের অবস্থান বলেছেন। তবে আমার কাছে এখনো পর্যন্ত বিকল্প কোনো প্রস্তাব দেয়ার বা কথা বলার কোনো তথ্য নেই। কাজেই ইসি বলেছে তারা স্ববিবেচনায় নিজ থেকে একটা প্রতীক বরাদ্দ করে দেবে, সেটাই হচ্ছে এখনকার পর্যন্ত অবস্থান।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের তফসিলে সেই প্রতীক নাই। তফসিলে নাই তাই আইনগত ভাবে সেটা দেয়া হয়নি। এটাই আমরা আগাগোড়া বলে আসছি। তফসিলে না থাকলে দেয়া সুযোগ নাই। এখন তফসিলে কেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এটা কমিশন ভালো বলতে পারবে। আমার পক্ষে এটার জবাব দেয়া সম্ভব না।’

আরপিও সংশোধনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা একটা টেকনিক্যাল প্রশ্ন। আরপিও সংশোধনের আগে ঐক্যমত কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক দীর্ঘমেয়াদী আলোচনা হয়েছে। কাজেই কোনো জায়গাতে সাংঘর্ষিক কিছু থাকলে সেভাবেই আলোচনাটা আসতো। সেটাই উপস্থাপিত হতো। আমার জানা মতে, এখনো কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থা হয়নি। কাজেই অনুমানের উপর কথা না বলাই ভালো।’

‎এদিকে, জোটের মনোনীত প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে আগের বিধান তথা জোটের যেকোনো দলের প্রতীকে ভোট করার সুযোগ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

‎নির্বাচন কমিশনে আরপিও পুনরায় সংশোধনে বিএনপি’র দাবির বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, বর্তমানে বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে, কমিশন পরে সিদ্ধান্ত নেবে।

‎আরপিও সংশোধনের পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের বিষয় নিয়ে ইসি সচিব জানান, ‘আরপিও সংশোধনের আগে ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় দেখা যায়নি। তাই অনুমাননির্ভর মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

তিনি জানান, ‘নির্বাচন কমিশন আরপিও প্রস্তাবনাগুলো পাঁচটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেছে, যেগুলো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে, যেগুলো ভাষাগত বা সংখ্যাগতভাবে সামান্য সংশোধনযোগ্য। যেগুলো বিদ্যমান আইনে পর্যাপ্তভাবে নির্ধারিত এবং যেগুলো কমিশনের নিজস্ব বিবেচনায় সংশোধনযোগ্য মনে হয়েছে সেগুলো রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সম্ভব নয়। এই পাঁচটি দিক বিবেচনা করেই সংশোধন প্রস্তাবনাটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়েছে এবং তারা নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন।‎’

‎গত শনিবার রাতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার প্রসঙ্গে আখতার আহমেদ বলেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটক করেছে। পুলিশ মামলা করেছে এবং তদন্ত করছে। যার কাজ, সে-ই করবে। কমিশন তার দায়িত্বেই মনোযোগ দিচ্ছে।’

‎‎

‎নির্বাচনী প্রস্তুতির অগ্রগতি বিষয়ে কথা বলেন সচিব বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন এই সপ্তাহে সম্পন্ন হলে প্রস্তুতি শতভাগে পৌঁছাবে।’

‎নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে এনসিপির দাবির বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। রাজনৈতিক বিষয় কমিশনের এখতিয়ারের বাইরে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্বের জায়গা থেকে কাজ করছি। সবাই সহযোগিতা করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।’