আলী রীয়াজ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোতে বিরোধ রয়েছে

এই র‌্যাঙ্কড-চয়েস প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। দলটির দাবি, অচলাবস্থায় বিষয়টি সংসদে পাঠানো উচিত। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি বিচারপতিদের অন্তর্ভুক্তি ও ভোটিং প্রক্রিয়াকে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে দেখছে।

অনলাইন প্রতিবেদক
সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ
সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ |নয়া দিগন্ত

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশ দল একমত জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, মূল বিরোধ এখন প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের সংলাপের আসরের বিরতির পরে এসব কথা বলেন তিনি।

কমিশনের সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নে একটি পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠিত হবে-প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। যদি এই কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তবে প্রধান বিচারপতির মনোনীত দু’ বিচারপতিকে যুক্ত করে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই কমিটি র‌্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে।

এই র‌্যাঙ্কড-চয়েস প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। দলটির দাবি, অচলাবস্থায় বিষয়টি সংসদে পাঠানো উচিত। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি বিচারপতিদের অন্তর্ভুক্তি ও ভোটিং প্রক্রিয়াকে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে দেখছে।

নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা ছিল দিনটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। সব দল জাতীয় সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে একমত হয়েছে। তবে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে। কেউ সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে, কেউ সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীদের আনতে চায়। কমিশনের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রস্তাব ছিল, রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ আসনের এক-তৃতীয়াংশে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। পরে তা এক-চতুর্থাংশ এবং এক-পঞ্চমাংশ পর্যন্ত নমনীয় করা হয়।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা প্রায় ঐকমত্যের কাছাকাছি এসেছি। বুধবার (৩০ জুলাই) কমিশনের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব দেয়া হবে। আশা করছি, তা অধিকাংশ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’

মহাহিসাব নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে কমিটি গঠনের বিধান সংযুক্তির প্রস্তাবে এখনো পূর্ণ ঐক্যমত্য হয়নি। তবে অধিকাংশ দল কমিশনের প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে। ন্যায়পালের নিয়োগ কার্যকর করার বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও, বিএনপি ও তার কয়েকটি মিত্র দল সংবিধানে নতুন বিধান না এনে বিদ্যমান আইনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছে।

অধ্যাপক রীয়াজ আরো জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে যেসব বিষয়ের ওপর ঐক্যমত হয়েছিল, তার একটি তালিকা বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়া জাতীয় সনদের খসড়ার একটি কপি ইতোমধ্যে দলগুলোকে দেয়া হয়েছে। সংশোধনের পর বুধবারই এ অংশটির নিষ্পত্তি করার আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো আশাবাদী যে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় ঐক্যমত্য সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দাঁড় করাতে পারব। সব দলই কোনো না কোনোভাবে সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে, এটি ইতিবাচক দিক।’