‘তিন বছরের মধ্যে দুইবার ড্যাপ সংশোধন বাসযোগ্য ঢাকার অন্তরায়’

‘ড্যাপ সংশোধন ঢাকা শহরের সুষম উন্নয়নের জন্য আত্মঘাতী এবং নগর পরিকল্পনার অন্তরায়। মূলত আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব ও ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের দাবির কাছে সরকার রাজধানীর বেশিভাগ এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর), জনঘনত্ব ও আবাসন ইউনিট বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সার্বিক বিচারে এটা খুবই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত হবে।’

নিজস্ব প্রতিবেদক
ড্যাপের সংবাদ সম্মেলন
ড্যাপের সংবাদ সম্মেলন |নয়া দিগন্ত

একটি প্রতি পাঁচ বছর পর পর ড্যাপ পর্যালোচনা করার বিধান থাকলেও তিন বছরের মধ্যে দুইবার সংশোধন করায় একটি বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় অন্তরায়। এতে শহরের বাসযোগ্যতা ও পরিবেশকে উপেক্ষা করা হয়েছে। মূলত স্বার্থগোষ্ঠীর দাবির কাছে নতি শিকার করে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর-ফার), জনঘনত্ব ও আবাসন ইউনিট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সার্বিক বিচারে অপরিণামদর্শী বলে মনে করে ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।

মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামটরের বিআইপি টাউওয়ারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নগর পরিকল্পণাবিদরা বিদ্যমান ড্যাপ সংশোধনের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন। তারা বলছিলেন, বারবার ড্যাপে পরিবর্তন ঢাকাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিআইপি সভাপতি ড. মুহাম্মদ আদিল মুহাম্মদ খান বক্তব্য রাখছিলেন এ সময় বিআইপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বিদ্যমান ড্যাপ ২০২২ সালে গৃহীত হয় এবং তা ২০২৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকার কথা।

এতে বলা হয়, ড্যাপ সংশোধন ঢাকা শহরের সুষম উন্নয়নের জন্য আত্মঘাতী এবং নগর পরিকল্পনার অন্তরায়। মূলত আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব ও ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের দাবির কাছে সরকার রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর), জনঘনত্ব ও আবাসন ইউনিট বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সার্বিক বিচারে এটা খুবই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পরিকল্পনাবিদসহ বিভিন্ন সামাজিক, পরিবেশবাদী, পেশাজীবি ও নাগরিক সংগঠনের মতামত ও দাবীকে উপেক্ষা করেই সরকার এই সংশোধন করতে যাচ্ছে। এতে জনবহুল ঢাকা শহরে উঁচু ভবনের সংখ্যা বাড়বে এবং ইতোমধ্যে স্থবির হয়ে যাওয়া শহরে পরিবহন, পরিষেবাসহ সকল ধরনের নাগরিক সেবার উপর অসহনীয় চাপ পড়বে। এই চাপ বহন করবার ক্ষমতা এই শহরের নেই। এই ধরনের উদ্যোগ ঢাকা মহানগরীর বাসযোগ্যতাকে একেবারে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবে।

পরিবেশকর্মী, আইনজীবী, শিক্ষক, পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী, অর্থনীতিবিদ, নাগরিক, সমাজকর্মী ও গবেষকদের যৌথ উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়। আয়োজকদের পক্ষ থেকে নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বাসযোগ্য শহরের পরিকল্পনা প্রণয়নে নাগরিকদের প্রত্যাশা নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে নাগরিক, পেশাজীবি ও অংশীজনদের নিয়ে ‘জাতীয় কনভেনশন’ আয়োজন করবার ঘোষণা দেয়া হয়।

এতে দাবি করা হয়, কৃষিজমি, জলাভূমি ও বন্যা প্রবাহ এলাকায় যেকোনো ধরনের উন্নয়ন নিষিদ্ধ করতে হবে। কৃষিজমি, জলাভূমি ও বন্যা প্রবাহ এলাকায় বিদ্যমান সকল ধরনের অবৈধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধে রাজউক, মন্ত্রণালয়সহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে অবৈধ দখলদার ও অবৈধ কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত সকলকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

তারা বলেন, ‘পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়নে আবাসন ব্যবসায়ীসহ স্বার্থের সঙ্ঘাত আছে, এমন কাউকেই অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না। নগর পরিকল্পনার সার্বিক বিষয়াদি আমলে নিয়ে জনস্বার্থ ও পরিবেশ-প্রতিবেশ টেকসই করতে পরিকল্পনাবিদদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনৈতিক প্রভাব খাটানো যাবে না। গুলশান-বনানী-ধানমন্ডির মত যে সকল এলাকায় আবাসিক প্লটে উচ্চ এফএআর মান দেয়া হয়েছে, সেগুলোকে কমিয়ে গ্রহণযোগ্য মানে আনতে হবে।’

আবাসিক এলাকার ভবনসমূহের মধ্যে ভারসাম্য ও শৃঙ্খলা, পাড়া-মহল্লার সমজাতীয় বৈশিষ্ট্য ও সাদৃশ্য এবং ভবনের ভেতর পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে ভবনের উচ্চতার সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করতে হবে।