সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণ নীতিমালা অনুমোদন

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, সার বিতরণ ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করে কৃষকের নিকট সময়মতো সার সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ‘সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটি’র অনুমোদনক্রমে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
কৃষি মন্ত্রণালয়
কৃষি মন্ত্রণালয় |নয়া দিগন্ত গ্রাফিক্স

সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নতুন নীতিমালা প্রকাশ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম স্বাক্ষরিত নতুন নীতিমালা প্রকাশ করা হয়।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, সার বিতরণ ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করে কৃষকের নিকট সময়মতো সার সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ‘সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটি’র অনুমোদনক্রমে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

এ নীতিমালার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :

১. নীতিমালাটি সময়োপযোগী ও সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে প্রণীত। সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত বিদ্যমান দু’টি পৃথক নীতিমালার পরিবর্তে একক নীতিমালার আওতায়। বিসিআইসি, বিএডিসি ও বেসরকারি মাধ্যমে সংগৃহীত সার বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা।

২. ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনে সার ডিলার ইউনিটের সংখ্যা সুনির্দিষ্টকরণ।

৩. একই পরিবারে একাধিক ডিলার নিয়োগের সুযোগ রহিতকরণ।

৪. ডিলারের কার্যক্রম আরো নিবিড়ভাবে মূল্যায়নের মাধ্যমে ডিলারশিপ বাতিল বা নবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ।

৫. অনিয়ন্ত্রিত সাব ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা ব্যবস্থা রহিতকরণ।

সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫ আগামী ১৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে কার্যকর হবে। এ নীতিমালা সুষ্ঠুভাবে কার্যকর করার জন্য নিম্নরূপ কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি :

(ক) ইউনিয়ন ও পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রতি তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ডিলার ইউনিটে (কৃষি ব্লকে) একজন করে প্রতি ইউনিয়নে/পৌরসভায় সর্বোচ্চ ০৩ (তিন) জন করে সার ডিলারকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। বর্তমানে নিয়োজিত বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলারেদের মধ্যে উক্তরূপে দায়িত্ব পুনর্বণ্টনের পর যদি কোনো ডিলার ইউনিট ডিলার শূন্য থাকে, সেসব ডিলার ইউনিটে এই নীতিমালার আলোকে নতুন ডিলার নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে।

(খ) সিটি করপোরেশন এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফসলি জমি থাকলে এবং ডিলার নিয়োগ যৌক্তিকভাবে প্রয়োজন হলে প্রতি সিটি করপোরেশনে সার ডিলার নিয়োগ দেয়া যাবে। তবে, কৃষি জমির পরিমাণ ও ফসলের নিবিড়তার ওপর ভিত্তি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সুপারিশের ভিত্তিতে ‘সার ডিলার সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি’র অনুমোদনক্রমে সিটি করপোরেশনে ডিলার সংখ্যা নির্ধারিত হবে।

সিটি করপোরেশন এলাকায় সার ডিলারের সংখ্যা নিরূপণের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জরুরিভিত্তিতে ওই সিটি করপোরেশন এলাকায় কৃষি জমির পরিমাণ ও ফসলের নিবিড়তার ভিত্তিতে জরিপ কার্য পরিচালনা করবেন। পরিচালিত জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে তিনি ওই সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য সার ডিলারের সংখ্যা প্রস্তাব আকারে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটিতে পেশ করবেন। উক্তরূপে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটিতে বিবেচিত প্রস্তাবটি সার ডিলার সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদনক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।

(গ) এভাবে প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি, পৌরসভায় তিনটি এবং সিটি করপোরেশনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সুপারিশের ভিত্তিতে ‘সার ডিলার সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি’ কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যক ডিলার ইউনিট থাকবে। উল্লেখ্য, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা এবং সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য উক্তরূপে নির্ধারিত ডিলার ইউনিটের সংখ্যার অতিরিক্ত সংখ্যক ডিলার নিয়োগ করা যাবে না।

(ঘ) ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োগ/দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিলার তার অধিক্ষেত্রে অর্থাৎ নির্ধারিত তিনটি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একটি করে খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করবেন। পৌরসভায় নিয়োগ/দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিলার ও উপজেলা/জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পৌরসভার সুবিধাজনক স্থানে অনধিক তিনটি খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করবে। অনুরূপভাবে, সিটি করপোরেশনের জন্য নিয়োগ/দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিলার তার অধিক্ষেত্রে একইভাবে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির অনুমোদনের আলোকে সুবিধাজনক স্থানে প্রয়োজনীয়সংখ্যক খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করবে।

(ঙ) আলাদাভাবে কোনো সাব-ডিলার বা খুচরা সার বিক্রেতা থাকবে না। তবে, বিদ্যমান সাব-ডিলার বা খুচরা সার বিক্রেতারা এই নীতিমালা জারীর পর ৩১ মার্চ ২০২৬ তারিখের মধ্যে তাদের সমুদয় দায়-দেনার নিষ্পত্তি করবেন। ৩১ মার্চ ২০২৬ তারিখ পর্যন্ত সাব-ডিলার বা খুচরা সার বিক্রেতারা আগের নিয়মে সার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে।

(চ) উপ-অনুচ্ছেদ-ঘ তে বর্ণিত মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পর ডিলারগণ কৃষক ব্যতীত কোনো খুচরা বিক্রেতার নিকট সার বিক্রয় করতে পারবে না। ডিলার তার জন্য নির্ধারিত নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্র ব্যতীত অন্য কোনো স্থান বা কারো মাধ্যমে সার বিক্রয় বা সরবরাহ করতে পারবে না।

(ছ) ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে পূর্ব হতে নিয়োজিত সংখ্যার সাথে সমন্বয় করে অবশিষ্টসংখ্যক শূন্য ইউনিটে নতুন ডিলার নিয়োগ দেয়া যাবে। এই পরিপত্র জারির ১৫ (পনেরো) দিনের মধ্যে উপজেলা/জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি তার অধিক্ষেত্রের আওতাধীন ডিলার ইউনিটের মোট সংখ্যা ও প্রতিটি ইউনিটের কার্য এলাকা নির্ধারণপূর্বক এই নীতিমালার আলোকে বিদ্যমান ডিলারদের দায়িত্ব বণ্টন/পুনর্বণ্টন করবে। এভাবে বিদ্যমান ডিলারদের দায়িত্ব বণ্টন/পুনর্বণ্টনের পর কোনো ডিলার ইউনিট শূন্য থাকলে, জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি সেখানে নতুন ডিলার নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণ করবে। সমগ্র জেলার শূন্য ইউনিটের তালিকা প্রস্তুত করে একইসাথে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।

(জ) সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫ এর আওতাধীন সকল ডিলার সরকার নিযুক্ত, সরকারি নিবন্ধনকৃত ও সরকারি তালিকাভুক্ত সার ডিলার হিসেবে বিবেচিত হবেন। এক্ষেত্রে বিসিআইসি ডিলার বা বিএডিসি ডিলার নামক কোনো বিভাজন থাকবে না। সকল ডিলার সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার অধিক্ষেত্রের মাসিক অনুমোদিত চাহিদা অনুযায়ী যথানিয়মে ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া উভয় প্রকার সার বরাদ্দ পাবেন।

নীতিমালাটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট www.moa.gov.bd এ প্রকাশ করা হয়েছে। নীতিমালা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন বা ব্যাখ্যায় অস্পষ্টতা থাকলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ০২-৫৫১০০৩৫১ বা ০২-৫৫১০০৪৯৫ ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে জানা যাবে। বাসস

Topics