জন্মদিনে শহীদ মীর মুগ্ধকে স্মরণ করে আবেগঘন পোস্ট ভাই স্নিগ্ধর

জন্মদিনে শহীদ মীর মুগ্ধকে স্মরণ করে ভাই মীর স্নিগ্ধ ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন, যেখানে তিনি মুগ্ধর প্রতি ভালোবাসা, সততার অঙ্গীকার ও স্বপ্নের বাংলাদেশের প্রতি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ও মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ
মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ও মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ |সংগৃহীত

গত বছরের পুলিশের গুলিতে শহীদ হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনলাসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। আজকের এই দিনে (৯ অক্টোবর) মুগ্ধ আর তার ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ একইসাথে জন্মগ্রহণ করেন। স্নিগ্ধ তাদের জন্মদিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘এই দিনটিতে আমি জন্ম ও মৃত্যুকে একসাথে দেখতে পাই।’

ফেসবুকে দেয়া পোস্ট দু’ভাইয়ের একটা ছবিও যুক্ত করেন সিগ্ধ।

তার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘৯ অক্টোবর- এই দিনটিতেই আমি আর মুগ্ধ একসাথে পৃথিবীতে এসেছিলাম। এই দিনটিতে আমি জন্ম ও মৃত্যুকে একসাথে দেখতে পাই। আজকের দিনে যে দৃশ্যটি সবচেয়ে বেশি চোখের সামনে ভাসে, সেটি হলো- মুগ্ধকে কবরের মাটিতে শুইয়ে দিয়ে প্রথম মাটি ফেলার মুহূর্তটি। এখনো মনে হয়, এই তো সেদিনই তাকে কবর দিয়ে এসেছি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ফ্রিজিং ভ্যানে থাকার পরও যখন তাকে দাফন করা হয়, তার মাথা থেকে বের হওয়া রক্তে তার কাফনের কাপড় লাল হয়ে গিয়েছিল, সঙ্গে আমার পাঞ্জাবিটাও রক্তে ভিজে গিয়েছিল।

গত এক বছরে যে দায়িত্বগুলো পালন করেছি, সেগুলো করার চেষ্টা করেছি সম্পূর্ণ সততা ও সর্বোচ্চ নিষ্ঠা দিয়ে। আমার কাছে প্রতিদিনই মনে হয়, আমাদের শহীদ ভাইয়েরা ওপর থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তারা যে স্বপ্নের বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, আমরা সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য কতটা কাজ করেছি- আল্লাহ সেই হিসাব তাদের মাধ্যমেই আমাদের থেকে নেবেন। অন্তত ওর (মুগ্ধর) কাছে গিয়ে বলতে পারব...

আমি আমার সাধ্যমতো সততা আর মর্যাদার সাথে কাজ করেছি। গত এক বছরে অনেক তদবির, প্রস্তাব, সুযোগ এসেছে- অনেক কিছু করার সুযোগও পেয়েছি, কিন্তু কখনোই এসবের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ জন্মায়নি। অন্ততপক্ষে যেদিন মারা যাব, সেদিন এতটুকু শান্তি নিয়ে মরতে পারব যে আমি এক টাকা হারাম বা অবৈধভাবে ছুঁয়েও দেখিনি, এবং ইনশাআল্লাহ সামনেও হবে না। এইটুকুই শান্তি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

কোথায় যেন দেখেছিলাম- মৃত্যুর পর সবার সাথে দেখা হলেও ভাই-বোনদের নাকি কখনো দেখা হয় না। জানি না কতটুকু সত্যি, কখনো এই তথ্যটি যাচাই করার সাহসও হয়নি। তবে আমার আল্লাহ এতটা নিষ্ঠুর হবেন না- আমার বিশ্বাস, যার সাথে মায়ের পেট ভাগ করেছি, জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ভাগ করেছি, অন্তত একবার হলেও আমার সাথে তার (মুগ্ধর) দেখা করাবেন। সেদিন আমি তাকে বলব- “তুমি তো একটা নতুন বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়ে দিলে, কিন্তু আমি তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, কীভাবে মানুষ তোমার অস্তিত্বকেই বিলীন করে দিতে চেয়েছে। এটা বলে যে স্নিগ্ধ আর মুগ্ধ একজনই।” আমি যতটুকু জানি, একটি কবরের উপর এক বছর পর আরেকটি কবর দেওয়া যায়। আমিও বলি- স্নিগ্ধ আর মুগ্ধ একজনই; আমরা জন্মেছি একসাথে, আর আল্লাহ নসিবে রাখলে আমার মৃত্যুর পর আমাকেও যেন মুগ্ধর কবরেই শায়িত করা হয়।

শুভ জন্মদিন দেশের সকল মুগ্ধদের,

যারা মুগ্ধদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার মিশন মনে-প্রাণে ধারণ করে এগিয়ে চলছে।”