জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদত্যাগ করেছেন মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। নতুন সিইও হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আকবর কামাল।
তবে, তার এই নিয়োগের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ ইয়ামিনের বাবা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
তিনি বলেন, সিইও হিসেবে আকবর কামালের এই নিয়োগ আমরা মানি না। তিনি শহীদ পরিবারের কেউ নন। শহীদ পরিবার থেকে সিইও নিয়োগ দিতে হবে। এ সময় তিনি নিজেকে সিইও পদের দাবিদার বলে জানান।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত ফাউন্ডেশনের চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রাত সাড়ে ৮ টার দিকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধের নেতৃত্বে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন।
শুরুতেই স্নিগ্ধ জানান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আকবর কামাল। সিইও থেকে পদত্যাগ করলেও তিনি ফাউন্ডেশনের সদস্য হিসেবে থাকবেন বলে জানান।
ফাউন্ডেশনের ৭ জন সদস্য এ সময় ডায়াসে ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শেষের দিকে যমুনার ভেতর থেকে বেরিয়ে কয়েকজন সংবাদ সম্মেলনের স্থলে আসেন। তাদের মধ্যে একজন নিজেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো: মহিউদ্দিন হিসেবে পরিচয় দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি শহীদ পরিবারের কেউ নন। তার এই নিয়োগ আমরা মানি না। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে দিতে হবে।
মহিউদ্দিন জানান, শহীদ পরিবারের সদস্যদের আপত্তি সত্বেও আকবর কামালকে সিইও বানানো হয়েছে। বৈঠকে প্রতিবাদ করায় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ কাজী ওয়াকার আহমেদ তার সমালোচনা করেন।
মহিউদ্দিন বলেন, আমরা বলেছি ফাউন্ডেশনে শহীদ পরিবারের বাইরে কেউ থাকতে পারবে না। সাধারণ সভায় আমাদের মতামত না নিয়ে নতুন সিইও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার সাথেগে শহীদ পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই। শহীদ পরিবার নিয়ে আবেগ না থাকলে, দরদ না থাকলে আমি কি পাব।
সিইও পদে যোগ্য লোককে বসানো হয়েছে বলে বৈঠকে জানানোর কথা জানান মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, আমি বলছি যে কে যোগ্য না শহীদ পরিবারের মধ্য হতে। এসময় নিজের ২২ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। আমি সিইও পদের জন্য যোগ্য না? সেখানে আরেকজনকে সিইও বানানো হয়েছে।
এ কথা বলার সময় কাজী ওয়াকার আহমেদ আপত্তি জানিয়েছিল দাবি করে মহিউদ্দিন বলেন, তিনি তো শহীদ পরিবারের কেউ না। তাকে কেন বসানো হয়েছে। আমরা বলেছি সিইও আগেও শহীদ পরিবার থেকে বানানো হয়েছে। এবারও সেখান থেকে দিতে হবে।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে সিইও পদ থেকে পদত্যাগের কথা জানান মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। এসময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন রাজনীতে যুক্ত হতে পদত্যাগ করছেন কিনা- জবাবে স্নিগ্ধ বলে, রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই। উচ্চ শিক্ষার জন্য আমার পড়ালেখা বাকি আছে। এ পদের জন্য যেহেতু অনেক কাজ করতে হয় তাই পদত্যাগ করছি। তবে গর্ভনিং বডিতে দায়িত্ব পালন করব।
শতাধিক শহীদ পরিবারে পিতা-মাতা ও স্ত্রীদের বিরোধীদের কারণে সহায়তা হস্তান্তর করা যাচ্ছে না, তা নিয়ে উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্নিগ্ধ বলেন, আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। যাতে তারা নিজেদের মধ্যে সমাধান করতে পারে। সেই অনুযায়ী আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করতে পারি। যে পরিবারগুলো এটার নিজেরা সমাধান করতে পারবে না, তা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় গত এপ্রিল পর্যন্ত আহত ১৪ হাজার ৫৯২ জনের মধ্যে ৫ হাজার ৪৩৭ জনকে ৫৪ কোটি ৭১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯ টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে। ৮৫২ শহীদের মধ্যে ৭৫৯ জনের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে ৩৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।
জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হয়, শহীদ পরিবারের ব্যাংক ঋণ মওকুফ এর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ; তাদের পরিবারের সন্তান/পিতা-মাতার সুচিকিৎসার জন্য হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা; শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং
শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী প্রশিক্ষন ও পুনর্বাসন এর ব্যবস্থাসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সাংবাদিক শহীদ তাহির জামান প্রিয়ের মা সামসি আরা জামানকে। এ পদে আগে ছিলেন সারজিস আলম।