বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সহকারী অধ্যাপকরা দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন। তারা একই পদে সর্বনিম্ন ৮ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৩ বছর ধরে কর্মরত আছেন। ফলে বাধ্য হয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছেন।
রোববার (৩০ নভেম্বর) রাজধানী শিক্ষা ভবনের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
পদোন্নতি বঞ্চিত সহকারী অধ্যাপকরা বলেছেন, দ্রুত তাদের পদোন্নতি না দেয়া হলে কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। এতে সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রমে বিপর্যয় ঘটবে।
শিক্ষকরা জানান, বাংলাদেশে ক্যাডার সার্ভিসে ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। এর মধ্যে জনবলের দিক থেকে সবচেয়ে বড় বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার। কিন্তু এই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন।
শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা ক্যাডারে তিনটি টায়ারে পদোন্নতি হয়। এগুলো হলো প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক। সম্প্রতি দীর্ঘ আন্দোলনের পর প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে ৩৫ ব্যাচ পর্যন্ত ১৮৭০ জন পদোন্নতি লাভ করেছেন। কিন্তু বাকি দুই টায়ারের পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন। বিশেষ করে ২৬-৩১ বিসিএসের সহকারী অধ্যাপকরা দীর্ঘ সময় ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত। তারা সহকারী অধ্যাপক হিসেবে একই পদে সর্বনিম্ন ৮ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৩ বছর ধরে কর্মরত আছেন। অথচ সহকারী অধ্যাপক পদে ৩ বছরের ফিডার পূর্ণ করে ২০১৬ সালে ২৬তম ব্যাচ, ২০১৭ সালে ২৭তম ব্যাচ, ২০১৯ সালে ২৮তম ও ২৯তম ব্যাচ, ২০২০ সালে ৩০তম ব্যাচ সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এক্ষেত্রে চাকরিতে যোগদানের পর ২৬ ও ২৭তম ব্যাচ যথাক্রমে ২০ বছর ও ১৮ বছরে মাত্র একটি পদোন্নতি লাভ করেছে।
অন্যান্য ক্যাডারে কর্মকর্তারা ব্যাচভিত্তিক নিয়মিত পদোন্নতির মাধ্যমে ৩০তম ব্যাচ ৫ম গ্রেডে অবস্থান করছেন, অথচ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের পদোন্নতি-বঞ্চিত ২৬তম থেকে ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তারা (৮-১৩) বছরব্যাপী সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ৬ষ্ঠ গ্রেডে অবস্থান করছেন। অথচ অভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই অন্যান্য ক্যাডারের সাথে একই সময়ে তারা চাকরিতে যোগদান করেছেন।
ফলে বৈষম্যের শিকার হয়ে এই শিক্ষকরা সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মর্যাদাহীন এই অবস্থায় শিক্ষকদের কর্মস্পৃহা হারিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের পদোন্নতি বঞ্চিত রেখে শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার উন্নয়নের স্বার্থে শিক্ষা ক্যাডারের যোগ্য ও পদোন্নতি-বঞ্চিত এই সহকারী অধ্যাপকদের সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রয়োজন। এতে বর্তমান সরকারের জনপ্রশাসনে বৈষম্য কিছুটা হলেও নিরসন হবে। আবার শিক্ষা ক্যাডারের এই ৬টি ব্যাচকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিলে সরকারের বিশেষ কোনো আর্থিক সংশ্লেষ সৃষ্টি হবে না। কারণ উক্ত ব্যাচগুলোর কর্মকর্তাবৃন্দ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির মাধ্যমে বেতনস্কেলের উপরের ধাপেই অবস্থান করছেন, অনেকেই সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছে গেছেন।
ভুক্তভোগী সহকারী অধ্যাপকদের দাবি, শিক্ষা ক্যাডারের এই ৫ ব্যাচকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিলে সরকারের কোনো আর্থিক সংশ্লেষ হবে না। অতি দ্রুত পদোন্নতি না দিলে বৈষম্যের অবসানে তারা কর্মবিরতির মতো আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবেন।



