বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগে রেডিওথেরাপি নিতে গেলে চার মাসের লম্বা সিরিয়ালে পড়তে হয় রোগীদের। কেউ একজন আজ রেডিওথেরাপি নিতে এলে তাকে তাকে আগামী ফেব্রুয়ারির আগে সিরিয়াল দেয়া যাচ্ছে না। রোগী বেশি, এর বিপরীতে অত্যাধুনিক লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন মাত্র একটি। ফলে আধা সরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীরা সেবাই পাচ্ছেন না। এই ধরনের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কমপক্ষে সাতটি লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন থাকে। এই হাসপাতালে মাত্র একটি।
এদিকে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় কম খরচে ভালো ও বিশ্বমানের চিকিৎসা পেতে এই হাসপাতালের প্রতি রোগীদের প্রত্যাশা বেশি। কিন্তু রেডিওখেরাপি পেতে ব্যর্থ হয়ে রোগীরা মন খারাপ করে চলে যায় অনেকেই কিন্তু তাদের সামনে কিছু কঠিন প্রশ্ন থেকে যায়। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা না পেলে এই মানের চিকিৎসা পেতে কোথায় যাওয়া যায় সেই সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। মহাখালীর একমাত্র সরকারি ক্যান্সার হাসপাতালে আরো বেশি দিনের সিরিয়াল থাকায় তখন অনেককেই সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় যা রোগীর জন্য যেমন কষ্টের, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতাল তথা সরকারের জন্য লজ্জার।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগে এ মুহূর্তে একটিমাত্র লিনিয়ার এক্সিলারেটর রেডিওথেরাপি মেশিন এক দশমাংশ ক্যান্সার রোগীর সেবা দিতে পারে না। প্রতিদিন যে রোগী আসে তাদের থেরাপি দিতে একটি মেশিন যথেষ্ট নয়। নাসিমুল ইসলাম নামে একজন এসেছিলেন তার ক্যান্সার আক্রান্ত আত্মীয়ের জন্য রেডিওথেরাপি এখান থেকে দেয়া যায় কি না। তিনি কোনো একজনকে ধরে ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষকের কাছে যেতে পারলেও সেই শিক্ষক চার মাসের আগে সিরিয়াল দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেননি।
সেই শিক্ষক নাসিমুল ইসলামকে জানান, সিরিয়াল ভাঙ্গা হলে সেই মুমূর্ষু রোগীটির কষ্ট হবে অথবা মরেও যেতে পারে যার বদলে আপনার রোগীকে সিরিয়াল দেয়া হবে, এটা অমানবিক হবে।’ নাসিমুল ইসলাম আর কোনো কথা না বলে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
এদিকে ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই বিভাগে লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন বসানোর জন্য বর্তমানে ব্যবহৃত একটি মেশিনর পাশে আরো দু’টি মেশিন বসানোর জন্য বাংকার আছে। ফলে আরো দুটো মেশিন যে কোনো সময় বসানো যাবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, দুইটা নয় রোগীদের প্রয়োজনে আরো কমপক্ষে পাঁচটি মেশিন আমাদের দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বাজেট তা দিয়ে বর্তমানে একটি মেশিন কেনারও সামর্থ নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু দিন আগের ভাইস চ্যান্সেলর এখন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী। তিনি ইচ্ছা করলেই আরো কমপক্ষে দু’টি মেশিনের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন, সরকারি ব্যয়ে। আমরা এ ব্যাপারে মিডিয়ার মাধ্যমে বিশেষ সহকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: সৈয়দ মুহাম্মদ আকরাম হোসেন জানান, তার বিভাগে ক্যান্সার রোগীর অনেক চাপ। বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল বলে, রোগীদের প্রথম চয়েসটা এই হাসপাতালই থাকে। কিন্তু মেশিন স্বল্পতায় তাদের প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পারছি না। একটিমাত্র মেশিন দিয়ে সব রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার, আমরা সেখানেই ব্যর্থ হচ্ছি, এটা দুঃখজনক। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাউকে পাওয়া যাযনি এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কথা বলার জন্য।



